পরের বউ (চতুর্থ পর্ব) -তন্ময় ইমরানের গল্প  (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)

0
884
Porar-bou

পরের বউ (চতুর্থ পর্ব)-তন্ময় ইমরানের গল্প  (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
১.
চারদিন হলো স্নিগ্ধা ভাবি নিরুদ্দেশ। প্রথমদিন ছাড়া শ্রাবণের মধ্যে বাকি তিনদিন কোনও বিকার দেখলো না জামিল। পরের বউকে নিয়ে বাড়তি কোনো উৎসাহ সে দেখাতে পারছিল না চক্ষু লজ্জায়। এই তিনদিন স্নিগ্ধার বর শ্রাবণ নিয়মিত দোকানটোকান খুলেছে, বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া করেছে। তারপর দিব্যি ঘুমিয়েছে। ওদিকে রাতের পর রাত স্নিগ্ধার শিৎকার শুনে ঘুমাতে অভ্যস্ত জামিলের ঘুম আসে না। ছটফট করে ভোর রাত পর্যন্ত। স্নিগ্ধার শিৎকার যেন এক ঘুমপাড়ানি গান ছিল।
স্নিগ্ধা উধাও হওয়ার পঞ্চম রাতে হঠাৎই জামিলের রুমে করেই শ্রাবণ এলো। জিজ্ঞাসা করলো- তোমার কাছে গোটা দুয়েক সিগারেট হবে?

অবশ্যই ভাইয়া।

জামিল সিগারেটের একটা খালি প্যাকেট বের করে পাঁচটা সিগারেট নিজের প্যাকেট থেকে শ্রাবণকে ভরে দেয়।

শ্রাবণ রুম থেকে যায় না। বরং চেয়ারে বসে সিগারেট ধরায়। তারপর হঠাৎ করে বলে, জামিল তুমি কি আগামী কয়েকদিন সময় দিতে পারবে? মানে, আমি যদি তোমাকে একটা কাজ দেই- করতে পারবে?
কী কাজ ভাইয়া?
তোমার কিন্তু ছুটি নিতে হতে পারে।
আসলে ভাইয়া ‘থিংকস আর গেটিং ওর্স’, শুনেছেন নিশ্চয়ই করোনার কথা। ডাক্তার ভিজিট মনে হয় আগামী দেড়মাসের জন্য বন্ধ। সো, আমার কোম্পানি বলেছে ডাক্তারদের কাছে আপাতত না যেতে। সেইফ থাকতে।
ফ্যান্টাস্টিক। তুমি কি স্নিগ্ধাকে আনতে পারবে? বান্দরবানের সাজেক আছে সে। আমি একটু ঝামেলায় আছি। তোমাকে একসময় হয়তো পুরোটা বলবো।

জামিল একটা প্যাচে পড়ে যায়। তার মনে হয়, এ কথার উত্তর কেবল নিরবতাই হতে পারে। অতিউৎসাহ, সামান্য উৎসাহ, কিংবা ‘না’ সূচক উত্তর দেওয়া যাবে না। বরং শ্রাবণকেই আরও বলতে দেওয়ার লাইনে সে আগালো। বললো- ভাইয়া আপনিও চলুন, আমি না হয় আপনার সাথে যাবো।
শ্রাবণ বললো, নাহ আমি গেলে ও নাও আসতে পারে। তুমি বরং ম্যানেজ করে নিয়ে আসো। তোমাকে হুট করে নাও বলতে পারবে না।
আপনি খবর পেলেন কিভাবে?
আমি ওর বোন তন্দ্রাকে ফোন করেছিলাম, ওই জানালো।
ভাবির বাপের বাড়ি কি বান্দরবান ভাই?
নাহ, স্নিগ্ধা ওখানে একটা রিসোর্টে উঠেছে। জায়গাটা ওর অসম্ভব প্রিয়। শোন, খরচটরচ আমি দিবো। অ্যাটলিস্ট তুমি ওকে নিয়ে আসার ট্রাই করো। যদিও আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ও ফিরে আসবে না। খুব জেদি।

তারপর কষে সিগারেটে দুইটা টান দিয়ে টেবিলের উপর রাখা অ্যাশট্রে-তে গুজে দেয়। বলে- থ্যাংকস। সিগারেটটা দরকার ছিল। তুমি বরং আমার সাথে আসো। দুইটা ‘চিল্ড বিয়ার’ আছে তোমার জন্য। খাও তো এসব নাকি!
জামিল বিয়ার হাতে নিয়ে ফেরার সময় পেছন থেকে শোনে শ্রাবণ বলছে- আশা করছি কাল বা পরশুই যেতে পারবে।

চিলেকোঠায় ফিরে জামিল সাত-পাঁচ ভাবে। সিগারেটের সাথে আয়েশ করে একটা বিয়ার শেষ করে। তারপর আরেকটা বিয়ার খেতে খেতে ফেইসবুকে ঢুকে পুরনো প্রেমিকার প্রোফাইল থেকে ঘুরে আসতে যায়। গিয়ে দ্যাখে ‘লক’ করা।

ভাবতে বসে, কেন স্নিগ্ধাকে আনতে তাকেই পাঠাচ্ছে শ্রাবণ। আচ্ছা এটা কোনও ফাঁদ তো নয়? শ্রাবণ কি জানে তাদের যৌন মিলনের শব্দ জামিলের কানে পৌঁছায়? শ্রাবণ কি জানে স্নিগ্ধা তাকে সিডুইস করতে চায়? মাঝরাতে শ্রাবণ ঘুমানোর পর আবেদনময়ী স্বচ্ছ পোশাকে ছাদে আসে? বৃষ্টিতে লেপ্টে থাকা জামা দিয়ে জামিলকে স্নিগ্ধা জয় করে নিয়েছে- তা কি শ্রাবণ জানে?

এসব ভাবতে ভাবতেই দ্বিতীয় বিয়ারটার অর্ধেক ফুরোয়। স্নিগ্ধাকে মনে করে স্বমেহন ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও কিছু করার থাকে না জামিলের।

২.
স্নিগ্ধা ফোন করার পরের সন্ধ্যাতেই তন্দ্রা হাজির হয়েছে। সাথে একটা ছেলে নিয়ে এসেছিল। স্নিগ্ধার ধারণা ছিল, এটা তন্দ্রার বয়ফ্রেন্ড হবে। স্নিগ্ধা খুব বিরক্ত হয়েছিল। কোনও একটা বিচিত্র কারণে সেই ছেলেটার সাথে সামান্য পরিচয় ছাড়া আর কোনও আলাপই হয়নি স্নিগ্ধার।

পরদিনই ছেলেটা চলে গেল। ভোরে মেঘ দেখে সকাল দশটায় যখন ছেলেটা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে স্নিগ্ধা যখন তন্দ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো- কিরে ও চলে যাচ্ছে কেন?
আপু ও আসলে এসেছে কেবল সাজেকের মেঘ দেখতেই। পয়সা ছিল না এখানে আসার। আমার বন্ধু। ভাবলাম, আমাকেও পৌঁছে দিবে মেঘও দেখবে। তাই সাথে করে নিয়ে আসলাম।

উত্তর শুনে স্নিগ্ধার মন খারাপ হয়ে গেল। আগের রাতেই যেখানে সে বিরক্ত ছিল, সেখানে খুব দ্রুত তীব্র মায়া আর খারাপ লাগা বোধ জায়গা করে নিয়েছিল।
বললো- আরও দুইদিন থেকে যেত!
আমিও তাই বলেছিলাম। ও আসলে সারারাত তারা দেখেছে। সকালে কংলাকে উঠে মেঘ দেখেছে। তারপর সকালে বলেছে- ভালো লাগার জিনিস অল্প দেখাই ভালো। তাতে তৃষ্ণাটা ফুরায় না।

স্নিগ্ধা ভাবলো, বাহ ছেলেটার জীবন বোধ তো খুব সুন্দর। অথচ আমরা আমাদের ভালো লাগার জিনিসটা খেয়ে ফেলি।

স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করেছিল- ছেলেটা কি কবি!

– নাহ আপু। ও আসলে ইন্টার লাইফে আমাদের সাথে পড়তো।

– ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু বাবা মরে যাওয়ায় আর পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারে নাই। একটা ছোট ঘড়ির দোকান ছিল
বাবার ওটাই চালায়।

– ঘড়ির দোকান! এ যুগে?

– হুম আপু। আসলে একই ক্লাসে পড়তাম তাই এখনো আড্ডা মারতে

– আসে। তাছাড়া আমার বেস্টির সাথে রিলেশন ছিল।
ঘড়ির দোকান চলে?

– উহু। দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ির দোকান টিকে গেছে। ওর দোকান চলে না। আসলে ঘড়ির দোকান নামেই, ওখানে মোবাইল ঠিক করা হয়, চা বিক্রি হয়, মাঝখানে দেখলাম একটা চাবি বানানেওয়ালা বসেছে… এইসব হাবিজাবি!

স্নিগ্ধা ভাবে একটা ঘড়ির দোকান তো আসলেই কেবল একটা ঘড়ির দোকান না। সময়ের দোকানও বটে। আর সময়ের মধ্যে কি না থাকে! মোবাইল ফোন থাকে, চা থাকে, তালা-চাবি থাকে, বন্ধু থাকে। এমনকি আবার শূন্যও থাকে। টিকটিক আওয়াজ দিয়ে ঘড়ি জানান দেয় অসীম শূন্যতার।

***

নিজেও খুব আকর্ষণীয়। কিন্তু তন্দ্রাকে দেখে আসলে মুগ্ধ হচ্ছে স্নিগ্ধা। সে যখন দেশ ছাড়ে তখন তন্দ্রার বয়স মাত্র ১৬ বছর। লম্বা হয়েছিল মেয়েটা ৫ ফিট ৬। আর ছিল খুব শুকনো, লিকলিকে।

এখন তার বয়স ২৫ মনে হয়। ব্যাপক সুন্দরী হয়েছে। গা হাত-পা ফুলেছে। শিমুল ফল ফাটলে সশব্দে যেমন সাদা তুলো বের হয়ে আসে, ঠিক তেমন তার আবেদন ঠিকরে বের হচ্ছে। তন্দ্রা খুব গুছিয়ে কথা বলে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে- মুখে প্রশ্ন না করেই অনেক প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে সে এবং সেই প্রশ্নের উত্তরও বের করে নিতে পারে সে।

যেমন ও হয়তো শ্রাবণের কথা জিজ্ঞাসা করবে। কেন এলো না বা এজাতীয় কিছু। কিংবা শ্রাবণ আর স্নিগ্ধা ঠিক কতোদিন হলো দেশে এসেছে, কেন তাকে আগে জানায়নি, এর মধ্যে তো এতোবার ফোনে বা হোয়াটসআপে কথা হলো ইত্যাদি।

এসব কোনও কিছুই না বলে তন্দ্রা শুরু করলো- ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে আসার পর ওর এক বন্ধুর মামার কী কী সমস্যা হচ্ছিলো, তা নিয়ে। এ মামা লন্ডন থেকে অল্পকিছু টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ব্যবসায় টাকা ইনভেস্ট করলেন, এক বছরের মধ্যে ফকির হয়ে আবার ইউরোপ যাবার চেষ্টা করলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখা গেল সেই ভদ্রলোক ইউরোপ ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। কেননা, তখন তার সদ্য বিবাহিত বউ তাকে আটকালো। বাচ্চা হবে। শেষমেষ ভদ্রলোক একটা মোবাইল টাকা ভরার দোকান দিয়ে গ্রামে সেটেল হয়ে গেছেন। গল্প শেষের পর হাসতে হাসতে বললো- দেখিস শ্রাবণ ভাইয়ার এ অবস্থা না হয়!

– শ্রাবণের এ অবস্থা হবে নারে। আমরা দেশে বছরখানেক। তোকে সব ধীরে ধীরেই বলবো।

– কোনও সমস্যা নেই। বরং আজ রাতে হেলিপ্যাডে বসে তারা দেখতে দেখতে দুইবোন না হয় অনেক গল্প করবো।

তন্দ্রার মা-কে কোনওদিনই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি স্নিগ্ধা। তার পাঁচ বছর বয়সে মা মারা গিয়েছিল। বাবা একমাসের মাথায় তন্দ্রার মাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিল। একটু বড় হয়ে স্নিগ্ধা তার এক দু:সম্পর্কের খালার কাছে শুনেছে- বাবা নাকি আগের থেকেই তন্দ্রার মায়ের সাথে এনগেইজড ছিল। মাঝখানে মায়ের লিভার ক্যান্সার ধরা পড়াতে বাবার জন্য সাপে-বর হয়েছে।

স্নিগ্ধার সেই খালার খুব ইচ্ছা ছিল, নিজের ছেলের সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে দেওয়ার। হয়তো স্নিগ্ধা সেই দু:সম্পর্কের খালাতো ভাইয়ের সাথেই জীবন জড়াতো।

ওর কথা খুব ভালো লাগতো। হালকা হাতের স্পর্শ। মাঝে মাঝে ওই ছেলেটা যখন খুব কাছে আসতো, তখন স্নিগ্ধার খুব ইচ্ছা হতো ওকে একটু জোর করে জড়িয়ে ধরুক সে।

স্নিগ্ধার বয়স যখন ১৫ বছর তখন একদিন ছেলেটা স্নিগ্ধাকে একটা পেয়ে সদ্য ফুটতে থাকা স্তনে জোরে ডলে দিল। ছেলেটা আসলে সেদিন স্নিগ্ধার স্তন ডলেনি, ডলেছিল তার মনের ভেতর ফুটতে থাকা ভালোবাসার ফুলের সদ্য ফোটা কুঁড়ি।

সে যাহোক, স্নিগ্ধা আর কখনো বাবাকে আর সৎ মাকে সহজভাবে মনে মনে নিতে পারেনি। কখনো আচার-আচরণে তা প্রকাশ করেনি। কিন্তু সাব-কনশাসে থেকেই গেছে। কিশোরি বেলায় এমনকি তার জামা পছন্দ না হলেও সেজন্য স্নিগ্ধা তার সৎ-মাকে মনে মনে দায়ী মনে করতো। অথচ ভদ্রমহিলা কিন্তু বেশ ভালো ছিলেন। স্নিগ্ধার ব্যাপারে খোঁজ খবরও রাখতেন।

অদ্ভুত বিষয় হলো তন্দ্রা হওয়ার পর স্নিগ্ধার বাবা আরও বদলে গেলেন। কীভাবে কীভাবে যেন টাকা জমিয়ে চাকরি ছেড়ে একটা বিজনেস শুরু করলেন। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এর। তারপর পরের বউতেই তার ভালো লাগা শুরু হলো। নিজের বউ, মানে তন্দ্রার মা-ও রয়ে গেলেন উপেক্ষিত।

এসব কিছুর জন্য স্নিগ্ধা মনে মনে দায়ী করতো তার সৎ মাকে। কেননা, সৎ মা-র অ্যাম্বিশন ছিল স্বচ্ছলতা এবং কেননা সৎ মায়ের মধ্য দিয়েই বাবা পরনারীতে আসক্ত হয়েছিলেন। অথচ তন্দ্রার সাথে স্নিগ্ধার গড়ে উঠেছিল এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব।

এই যে স্নিগ্ধা ও তন্দ্রার এতোদিন পর দেখা হলো- বাবা এবং মা কিন্তু সেখানে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। যেন তারা দুইবোন একই সাবান কোম্পানির মেশিনে তৈরি দুটো সাবান, কখনো কোনও বাবা-মা ছিল না। যদিও স্নিগ্ধা একবার শুনে নিয়েছে বাবা দেশে নেই। চীনে। কোভিড মহামারীতে আটকা পড়েছে। ব্যস্ ওটুকুই।

তন্দ্রা যতোটা প্রশ্ন করা এড়িয়ে চলে, স্নিগ্ধা ঠিক ততোটাই প্রশ্ন করতে করতে এগোয়। সেইরাতে দুইবোন যখন তারাভরা আকাশের নিচে বসলো, স্নিগ্ধার তখন প্রথম প্রশ্ন ছিল- আচ্ছা তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?

তন্দ্রা বলেছিল, চেঞ্জ হয়।

দুইবোন হেসেছিল। তারপর স্নিগ্ধা বলেছিল- সেক্স করেছিস?

এবার তন্দ্রার দুষ্টু হাসি- দেখে কি মনে হয় তোর আপু?

‘আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছি, জামিল। নামটা সেকেলে। কাল-পরশু আসবে হয়তো আমাকে নিতে। বিয়ে করবি এটাকে’, বলে স্নিগ্ধা।

বলে নিজেই চমকে যায়। শ্রাবণের বদলে জামিল-ই যে এখানে আসবে তা সে কীভাবে জানলো! আবার নিজেকেই জিজ্ঞাসা করে- জামিল আসবে এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত স্নিগ্ধা?

মনের ভেতরে আরেক স্নিগ্ধা বলে, অবশ্যই। সে-ই আসবে।

তন্দ্রা বলে, “তুই কিভাবে জানলি শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন! তোকে ফোন দিয়েছিল? আমাকে উনিও বলেছেন নিজে আসবেন না।”

জবাব না দিয়ে স্নিগ্ধা হাসে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধর্ষিত হওয়ার রাতের কথা মনে পড়ে যায় তার। ধর্ষণকারীদের অন্তত একজনকে চেহারায় চিনতো স্নিগ্ধা। শ্রাবণ যে ফ্লাটে থাকতো, সেই ফ্লাটের উল্টোদিকে থাকতো ছেলেটা। হ্যা, বহুদিন তাকে আর শ্রাবণকে দৈহিক মিলনে মিলিত হতে দেখেছে ছেলেটি। ছেলেটা দেখছে বলে শ্রাবণ খুব এনজয় করতো!

৩.
তুরস্কের পশ্চিমের প্রদেশ উসাক, মনিসা এবং ইজমির নিয়ে খ্রিস্ট্রের জন্মের প্রায় ১২ শ বছর আগে গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা- নাম লিডিয়া। এর প্যাকটোলাস নদী পাহাড় থেকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ভাটিতে নিয়ে আসতো সোনা। বলা হয়, এখানেই প্রথম মুদ্রার প্রচলন হয়।

এই রাজ্যের রাজা ছিলেন কাদাউস (তার্কিশ উচ্চারণ, ইংরেজি- Candules)। প্রাচীন ইতিহাসবিদ হেরাডোটাস রাজা কাদাউস নিয়ে একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। গল্পটা এরকম-

কাদাউসের স্ত্রী নিশা (Nyssia) তার দৃষ্টি এতোটাই সুন্দর ছিলেন যে কাদাউস সবসময় স্ত্রীর গল্প করে বেড়াতেন। বেশিরভাগ সময় তিনি এই গল্প করতেন তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনাপতি জিগেস (Gyges) এর সাথে। খুব খোলামেলা সেই আলাপে স্ত্রীর সাথে কিভাবে মিলিত হতেন তা বর্ণনা করতেন। স্ত্রীর সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বর্ণনা দিতেন।

সেনাপতি জিগেস স্বভাবতই চুপ থাকতেন। কেননা রানির রূপের বর্ণনায় সে যদি অতি উৎসাহ দেখায় তাহলে বিপদ হতে পারে। যেকোনও মুহূর্তে গর্দান যেতে পারে। ওদিকে একদিন কাদাউসের সন্দেহ হয় সেনাপতির নির্লিপ্ততা দেখে। তার মনে হয় সেনাপতি জিগেস তার বলা রানির সৌন্দর্য উপেক্ষা করছে, কিংবা বিশ্বাস করছে না। আর তাই সে জিগেসকে নিজের বেডরুমে লুকিয়ে রাখার পরিকল্পনা করে। শুরুতে জিগেস একবারেই রাজি হয় না। বলে, রাজা চাইলেও রানি নিসা এটা সহজভাবে নিবেন না।

কাদাউস তাকে বলে- তুমি আমার ঘরের আলমারিতে লুকিয়ে থাকবে। ওটার সামনে একটা চেয়ার আছে। যৌনমিলনের সময় রানি ওই চেয়ারে তার পোশাক খুলে তারপর আমার দিকে আসেন। তিনি যখন পোশাক খুলে উল্টা ঘুরে আমার দিকে বিছানায় আসবেন, তখন তুমি আস্তে করে বেরিয়ে যেও।

কাদাউসের পরামর্শ মতো জিগেস লুকিয়ে থাকে। রানি শোবার ঘরে ঢোকার পর নগ্ন হয়ে পরিকল্পনা মতো চেয়ারেই পোশাক রেখে রাজার বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। জিগেসও বের হয়ে যায়। কিন্তু রানি নিসা বুঝে ফেলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেন না।

প্রতিশোধ নিতে পরদিন তিনি জিগেসকে ডেকে পাঠান। জিগেস যেহেতু প্রধান সেনাপতি ছিল, সে ভাবে এটা একটা রুটিন ডাক। কিন্তু দেখা হওয়ার পর রানি নিসা আগের দিনের প্রসঙ্গে টানেন। বলেন- তোমার হাতে এখন দুটো উপায় আছে। আমাকে অপমানিত করার জন্য এ দুটো শাস্তির একটা বাছাই করে নিতে হবে। প্রথমটা হলো, রাজাকে খুন করে আমাকে বিয়ে করবে। অথবা, নিজেই নিজেকে খুন করবে।

জিগেস অনেক চিন্তা করে রাজাকে খুন করে নিজেই রাজা হয়ে গিয়েছিল।
***
পরের সামনে নিজের সঙ্গী বা সঙ্গীনিকে নগ্ন উপস্থাপন ও তার সাথে সেক্স করে চূড়ান্ত যৌন আনন্দ পাওয়ার এই মানসিক অবস্থার নাম ইংরেজিতে Candualism. অস্ট্রো-জার্মান মনোবিদ রিচার্ড ফন ক্রফট ইভিন (Richard von Krafft-Ebing) প্রথম তার বইয়ে এই টার্মটি ব্যবহার করেন।

***
অনেকদিন পর মফস্বলের এই ছোট্ট আড়াইতলা বাড়িতে একাকি শুয়ে শ্রাবণের মনে হলো- একথা সত্যি তার জন্য, হ্যা কেবল তার ক্যান্ডুয়ালিজম রোগের জন্যই স্নিগ্ধা সেরাতে ধর্ষিত হয়েছিল। কিন্তু একথাও সত্যি শ্রাবণকেও তার বিনিময়ে অনেক কিছু দিতে হয়েছে। শ্রাবণ মনে করে সেরাতে স্নিগ্ধার চেয়ে অনেক বড়কিছু সে-ই হারিয়েছে। পৃথিবীতে কোনও উত্তরাধিকার রেখে যেতে না পারার মতো শূন্যতা গণধর্ষিত হওয়ার আঘাতের চেয়ে কতোটা বেশি- এটা কেউ কখনো গবেষণা করেছে!

(চলবে)

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে আবারো করোনায় একজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধস্মৃতির পাঠশালা -লেখক নাজনীন নাহান‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে