আত্মকথা
হৃদয়ের বিবর্ণ আয়না মুছে করো পরিষ্কার,
নিজের মাঝে নিজেকে পূণরায় করো আবিষ্কার!
জন্ম হতে জন্মান্তরে ছুটে চলা সুদূরের পথে,
আমাদের বেঁচে থাকা কেবলি কি ঘাত প্রতিঘাতে?
গহীন অরণ্যে শুনি মশা আর পিঁপড়ার ডাক,
দিনে দিনে মানুষেরা বুঝে নাবুঝে হয় নির্বাক।
কতো নদী কতো পথ মিলে-মিশে হয় একাকার,
সময়ের ঘূর্ণিপাকে আলো হয়েছে আঁধার!
তুমি আমি আছি পাশাপাশি তবু আছে ব্যবধান,
দুটি দেহ একসাথে নেই মনের আদান-প্রদান!
প্রেমিকের ভাব বিনিময় সেথা থাকে অভিনয়,
দেহের সাথে দেহ মিশালে হয় কি খাঁটি প্রণয়?
জাদুবাস্তববাদ
স্বপ্ন মানেই অনিন্দ্য সুন্দর,
জীবন মানেই স্বপ্নের অংশীদার ।
হৃদয় ভেঙ্গে হয় চূর্ণ-বিচূর্ণ ,
জীবন হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়
তখনও স্বপ্ন থাকে অক্ষত-অখণ্ড !
স্বপ্ন ভেঙ্গে স্বপ্ন গড়ে,
এটাই মানবের শ্রেষ্ঠ লীলা।
স্বপ্নের খুব কাছাকাছি,
আমরাও সতত বসে থাকি ।
স্বপ্ন ছুটে চলে বাস্তবের খুঁজে ,
বাস্তবতা খুঁজে স্বপ্নের ঘোর-রহস্য !
এই বিপরীতমুখী ছুটে চলা,
অবিরাম নিত্য হেঁটে চলা।
অতঃপর জীবন হয়, ‘জাদুবাস্তববাদ”!
আমি স্বপ্নকে উন্মুক্ত আকাশে-
ভ্রমণ করতে পাঠিয়েছিলাম।
কত শত অনন্ত বসন্ত পর ,
ব্যর্থতা, হতাশা ও কষ্ট নিয়ে-
নিঃসঙ্গ একাকী ফিরে এসেছে ।
আজ থেকে আমার স্বপ্নকে ,
আমৃত্যু গৃহবন্দী করে রাখব !
মহাকালের ঘূর্ণিপাকে স্বপ্ন বেঁচে থাকুক ।
এপিটাফ
বৃষ্টিজলে মিশে যাক আছে যত পাপ,
আমার পাপ-পূণ্যের নেই পরিমাপ !
কবিতার শব্দে সাজিয়েছি এপিটাফ ।
স্বপ্নখেলা
জলপরী খেলা করে আঁধারের সাথে,
খেলাশেষে অভিমানে ঘুমায় প্রভাতে!
প্রভাতের শেষে খুব বেশী ভালবেসে
দুটি দেহ আজি একাকার মিলে-মিশে!
বিমর্ষ কান্নার স্মৃতি নীরবে হাসায়,
হারানো বন্ধু আমার আড়ালে দাঁড়ায়।
যাবার বেলায় বন্ধু কথা রেখে যায়,
কথাগুলো ব্যথা হয়ে আমাকে কাঁদায়।
ফুলের সুবাস দিয়েছিল উপহার,
স্মৃতি আর বেদনার মহাসমাহার।
কথামালা ভেসে যায় স্নিগ্ধ সমীরণে,
আজো বসে আছো অন্তরালে অভিমানে।
সবিশেষে আমি তুমি, দূরে বহুদূরে
তবু স্মৃতি মনে পড়ে, রাতের আঁধারে!
করোনাকাল
প্রিয়তমা ধৈর্যময়ী হও,
আর কিছুদিন অপেক্ষা করো
করোনাময় দুঃসময় কেটে যাক,
আমরা তখন সমুদ্রে যাব ।
দু’জন মিলে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখব।
পৃথিবীর সকল আনন্দ আমাদের হবে,
শুধুই আমাদের হবে !
আর কিছুদিন অপেক্ষা করো, ধৈর্যবতী হও।
তোমাকে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে,
প্রকৃতিও আজ ভীষন ক্লান্ত !
তাকে ঘুমাতে দাও, সে ঘুমাক।
কত শত বছর নির্ঘুম কাটিয়েছে প্রকৃতি,
আজ সে অস্তিত্বের সঙ্কটে !
তবু সে জাগ্রত হবে, সৌন্দর্য বিলিয়ে দিবে!
প্রিয়তমা, আর কিছুদিন অপেক্ষা করো।
যে শ্রমিক সভ্যতার চাকা ঘুরিয়ে ক্লান্ত-অসুস্থ
চাকা ঘুরিয়েই যাচ্ছিল, তার ছুটি ছিলনা
ছিলনা অবসর, ছিলনা কোনো বিনোদন !
আজ সে ছুটি পেয়েছে, ঘুমাচ্ছে।
অবসর কাটাচ্ছে, সে-ও জীবনের অর্থ খোঁজছে!
প্রিয়তমা, প্রার্থনায় মগ্ন হও
প্রকৃতিপ্রেমী হতে হবে, হতে হবে মানবপ্রেমিক!
পৃথিবীর অসুখ চলে যাক,
আবার ফিরে আসুক কোলাহল।
আর কিছুদিন অপেক্ষা করো,
করোনাময় দুঃসময় অবসান হবেই হবে ।