সন্ত্রাসীদের ভয়ে ত্রস্ত নাটোরের কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার

0
347
Natore

বিশেষ প্রতিবেদক, নাটোরকন্ঠ: সন্ত্রাসীদের ভয়ে ত্রস্ত নাটোরের কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোর সদরের ছাতনী ইউনিয়নের মাঝদীঘা গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নলডাঙ্গা উপজেলার কাঠুয়াগাড়ি সড়কে শ্যামল নামের এক নরসুন্দরকে ছুরিকাঘাতে আহত করেছে সোহেল নামের এক যুবক। আহত শ্যামলকে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সোহেল হোসেনকে লোকজন আটক করে নলডাঙ্গা থানা পুলিশে সোপর্দ করে। পরে তার বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে মামলা করা হয়।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিয়ে সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে শ্যামলকে ছুরিকাঘাত করে থাকতে পারে। মামলার জের ধরে তারা শুধু শ্যামল কে কুপিয়ে জখম করেনি এরপরে তপন কুমার শীল এর উপরেও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে এমন অভিযোগ এনে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে ভিকটিম শ্যামলের ভাই তপন কুমার।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন গত ৫ মাস পূর্বে একই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে মজনু তপন কুমার এর মেয়ে স্বপ্না রানী কে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় তপন বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এর জেরে বিভিন্ন সময় তাদের পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে এবং আরও যে মেয়েগুলি রয়েছে তাদের অপহরণ করা হবে বলে বারংবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ২৬ জুলাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নাটোর সদর থানায় তপন কুমার একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। যার নম্বর হচ্ছে ১১৩০। অভিযোগকারী তপন জানান, আমরা এখন বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি। যেকোন মূহুর্তে আমাদের যে কারো উপরে হামলা এবং হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আটক সোহেল মাদকাসক্ত।

জনতার হাতে আটক সোহেল সবার সামনে স্বীকার করে যে, মজনু তাকে টাকা দিয়ে বলেছে আমাদের হত্যা করতে। হত্যা করতে পারলে জনপ্রতি ৫০ হাজার এবং পঙ্গু করতে পারলে জন প্রতি ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হবে। তারা দেশ ত্যাগেরও হুমকি দিচ্ছে। তারা সংখ্যালঘু সেজন্য তারা কোন বিচার পাবেন না। পুলিশের এসআই নজরুল স্যারের কাছে কতবার গেলাম কিন্তু সেও কোন কথা শোনে না। প্রতিবার তাকে ফিরিয়ে দেয় আর বলে অন্য সময় আসেন। এভাবে প্রতিদিন নজরুল পুলিশের কাছে ঘুরে ঘুরে এখন তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন মজনুর বাবা ক্ষমতাধর মানুষ ও তাদের অরেক টাকা রয়েছে সে কারনে পুলিশ সহ কেউই তার কোন কথা শুনছেন না। তিনি বলেন আমরা কি স্বপরিবারে গ্রাম ছেড়ে চলে যাব?

তপন কুমার শীল বলেন, তিনি এখন আর কারো নামে অভিযোগ করবেন না। তিনি জানতেন এখানে তাদের জন্য কোন ন্যায় বিচার নাই। দিনের পর দিন তার মেয়েকেসহ তাদের পরিবারের ওপর অন্যায় অত্যাচার করলো ওই ছেলে তার বিচার চেয়েও কোন বিচার হল না। তিনি আরো জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য করিম শাহ সন্ত্রাসীদের পক্ষে তদবির করে যাচ্ছেন। তার জন্যেই তারা এতো সাহস পাচ্ছে। ইউপি সদস্য করিম শাহকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমিও সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। স্থানীয় বিএনপি নেতা তোতা সন্ত্রাসীদের মূল মদদদাতা বলে জানান, ভূক্তভুগী তপন। এব্যাপারে তোতা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

বিপ্রবেলঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ও এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় নরসুন্দর শ্যামল কাজ শেষে নলডাঙ্গা উপজেলার কাঠুয়াগাড়ি সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। এসময় শ্যামলের গতিরোধ করে সোহেল নামের এক যুবক ছুরি দিয়ে পিছন দিক থেকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে নলডাঙ্গা থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে সোহেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শ্যামল অত্যন্ত নিরীহ এবং ভদ্র ছেলে। তার উপর এই হামলার তীব্র নিন্দা ও এর পেছনের কলাকুশলীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম জিডি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানান, দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য ০২ মার্চ নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বখাটে মজনু শেখকে প্রধান আাসমীসহ মোট ৭ জনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ০৭/৩০ ধারায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পরবর্তীতে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারক মোস্তফা কামাল মোকদ্দমাটি এফ আই আর হিসাবে গ্রহণ করার জন্য নাটোর সদর থানাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামকে দ্বায়িত্ব দেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলায় এজাহারভুক্ত ৭ জন আসামীর মধ্যে ৬ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করেন। আদালতের বিচারক তাদের মধ্যে থেকে ৩ জন নারী আসামীর জামিন মঞ্জুর করেন। অপর তিন আসামীকে কোট ওয়ারেন্টে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মুল আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের করোটা হাটে নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে অবৈধ খাজনা আদায়
পরবর্তী নিবন্ধআষাঢ়ে গদ্য -কবি চন্দনা রায় চক্রবর্তী‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে