মাহফুজা আরা পলক : ২০০৬ সাল। তখন আমরা ঢাকার বনশ্রীতে থাকতাম।আমার বোন স্ব পরিবারে আমাদের বাসায় এসেছে। তখন একদিন আমরা সবাই মিলে বাইরে ঘুরতে যাব সিদ্ধান্ত নিলাম। স্থান নির্বাচনে সবাই একমত হলাম। স্থানটি হলো- ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি। আমাদের অনেক দিনের ইচ্ছে বাঙালির ইতিহাসে স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলো যে বাড়ি থেকে আসতো সেই বাড়িটি দেখার।
যথারীতি আমরা রওনা হলাম। এতদিন শুধু ছবি আর টিভিতে দেখেছি। সেদিন যখন ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ির সামনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে এসে দাঁড়ালাম তখন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল মনের মাঝে। আমার সামনে সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি। গেইটের ভেতরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আমাদের বঙ্গবন্ধু ও তো এই গেইট দিয়েই ঢুকতেন।
আমরা ঢুকে নিচতলায় দেখে পেছনে বিকল্প সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলাম। এইতো বঙ্গবন্ধুর ডাইনিং রুম।সেই ডাইনিং টেবিল। একটা জায়গায় চোখ পড়লো কাঁচের একটি আচারের বৈয়াম এ এখনো সেই সময়ের অনেকটা আচার রয়েছে। দেখতে কালোহয়ে আছে।বঙ্গবন্ধুর স্টাডি রুম, বঙ্গবন্ধুর বেড রুমে ধবধবে সাদা বিছানা করা।বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের ঘরটি। শেখ জামালের ঘর।
মূল সিঁড়ির কাছে আসার পর বাধভাঙ্গা কান্না নেমে এলো দুচোখে। ১৫’ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সেই রাতে যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এই বাড়িতে তার সাক্ষী হয়ে মূল সিঁড়িটির গায়ে লেগে থাকা বঙ্গবন্ধুর বুকের রক্তের দাগ গুলো এখনো স্বচ্ছ কাচের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। সারা বাড়িতে বুলেটের ক্ষতচিহ্নের দাগ। আমি ভেবেছিলাম আমিই মনেহয় কাঁদছি,চেয়ে দেখি আমার পরিবারের সকলের চোখ ছলছল করছে।
মনের মধ্যে একটি কালো দাগনিয়ে নীচে নেমে এলাম।পাশে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পায়রার খোপে পায়রা গুলো আছে। এই স্মৃতি কখনো ভুলবো না। বঙ্গবন্ধু মিশে আছে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন।বঙ্গবন্ধুকে মুছেফেলা যাবে না।।
( বঙ্গবন্ধু এবং ১৫’ আগস্ট রাতে তাঁর পরিবারের সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।)
০৪/৮/২০২০