নাটোরের গুরুদাসপুরে পুকুর দখল নিয়ে শিক্ষককে কুপিয়ে জখম, লুটপাট

0
323
Lut

নাটোর কন্ঠ : নাটোরের গুরুদাপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পুকুর অবৈধভাবে দখলকে কেন্দ্র করে বনপাড়া ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের শিক্ষক মো. আলী হাসান (৩৫) কে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষরা। একই সঙ্গে লুট করে নিয়ে গেছে পুকুর পাড়ে থাকা ৩০০ পিস কলার কাইন, পাঁচ বস্তা খৈল ও ৩০ বস্তা মাছের খাদ্য। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করার পর থেকে ওই কলেজ শিক্ষকের পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে পুলিশও এই মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার না করায় বাদীপক্ষ ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে নানা ভাবে তাদের ওপর অত্যার-নির্যাতন চালালেও এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না।

স্থানীয়ভাবে একাধিকবার চেয়ারম্যান মেম্বার ও গ্রামপ্রধানদের নিয়ে সালিশি বৈঠক করেও কোন সুরাহা হয়নি। উল্টো নানা ভাবে হয়রানীসহ বারবার আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এদিকে রোববার দুপুরে ওই মামলার ১১ জন আসামীর মধ্যে ৬ আসামী নাটোর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক একজনকে জেলহাজতে পাঠান আর অন্যদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

গুরুদাসপুর থানায় দায়ের করা মামলা সুত্রে জানাযায়, উপজেলার খামারপাতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বনপাড়া ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের শিক্ষক মো. আলী হাসান দলিল মুলে প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ১২ বিঘার একটি পুকুর ভোগদখল সহ মাছ চাষ করে আসছেন। অথচ একই উপজেলার পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী বিশুর ছেলে মোজাহিদ হোসেন, আব্দুল হাই, আব্দুর রউফ, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মমিন ও সাইদুল ইসলাম জাল দলিল করে পুকুরটি তাদের দাবি করে জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এজন্য তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তাদের উপর জলুম ও অত্যাচার করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে প্রতিপক্ষরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঠা নিয়ে বেআইনি ভাবে দলবন্ধ হয়ে ওই পুকুরটি দখলের উদ্দেশ্যে পুকুর পাড়ে আসেন এবং পুকুর পাড়ে সৃজিত কলা গাছ ও কলার কাইন কাটতে থাকেন। এসময় টের পেয়ে ওই কলেজ শিক্ষক আলী হাসান তাদের কাছে গিয়ে কলার কাইন ও গাছ কাটতে বাধা নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষরা আলী হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলী হাসানকে কুপিয়ে জখম করে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আলী হাসানের বাবা মোঃ মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে মোজাহিদ হোসেন সহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে মামলার বাদীসহ কলেজ শিক্ষক আলী হাসান ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী মো. মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে জানান, প্রতিপক্ষরা শুধু তার ছেলেকে মেরেই ক্ষান্ত হননি। তারা পুকুর পাড়ে রাখা ৩০ বস্তা মাছের খাদ্য, ৩০০ পিস কলার কাইন লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়া সমস্ত কলা গাছ কেটে ফেলে। এতে তাদের ১ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকার ক্ষতি হয়।

তিনি আরো জানান, ওই পুকুরে গত ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে বিষ প্রয়োগে মাছ মেরে প্রায় ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া এর আগেও বিভিন্নভাবে পুকুর পাড়ে লাগানো কলার গাছ থেকে কলার কাইন কেটে নিয়ে গেছে তারা। তাদের অত্যাচারের ফলে বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ ব্যাপারে তারা কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কলেজ শিক্ষক আলী হাসানের চাচাতো ভাই মোঃ এনামুল হক জানান, বিবাদী মো. জাহিদ হোসেন ও তার ভাইয়েরা জাল দলিল করে দীর্ঘদিন থেকে ওই পুকুরটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ ব্যাপারে তাদের গ্রামে একাধিকবার সালিশী বৈঠক হয়েছে এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু বিবাদীরা তা মানেননি। বরং উল্টো পুকুরটি দখলের পাঁয়তারা করছেন। এমনকি কলেজ শিক্ষক আলী হাসানকে কুপিয়ে জখম করেছে এবং ইতিপূর্বে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে পুকুরে বিষ প্রয়োগও করেছে। তিনি বলেন, আহত কলেজ শিক্ষক আলী হাসান বর্তমানে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামীরা বাদীপক্ষকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিবাদমান পুকুরটি দলিল মূলে মোশারফ হোসেনই প্রকৃত মালিক। কিন্তু জাল দলিল করে মুজাহিদ হোসেন ও তার ভাইয়েরা পুকুরটি নিজেদের দাবি করছেন এবং বিভিন্ন কায়দায় দখলের চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, পুকুর নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদমান পরিস্থিতি ফায়সালা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেননি। পরে বাদীপক্ষকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে বিবাদীদের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তারে বিলম্ব হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধমেরিন ড্রাইভ: ‘রোড টু ডেথ?’- শ্যামল দত্ত
পরবর্তী নিবন্ধশোকাঞ্জলি -কবি বনশ্রী বড়ুয়া‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে