গরু ও গোরু বানান বিভ্রান্তির নিরসন প্রয়োজন- স্বকৃত নোমান

0
289

গরু ও গোরু বানান বিভ্রান্তির নিরসন প্রয়োজন- স্বকৃত নোমান

গরু ও গোরু নিয়ে ফেসবুকে ফ্যাসাদ লেগেছে। প্রথমে কে লাগিয়েছে কে জানে। যে-ই লাগাক, কাজটা খারাপ করেননি। বাংলা একাডেমির প্রধানত দুটি অভিধানে ‘গরু’, ‘গোরু’ দুটি বানানই আছে। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে’র ৩৪৬ পৃষ্ঠায় ‘গরু’ লিখে ৩৭৪ পৃষ্ঠায় ‘গোরু’কে নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথমে ‘গরু’ রাখা হলেও ‘গোরু’কে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে জামিল চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রণীত ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে’ ‘গরু’ রাখাই হয়নি, ৪১৮ পৃষ্ঠায় রাখা হয়েছে ‘গোরু’। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে দুই অভিধানে দু-রকম বানানরীতি। বিভ্রান্তিটা এখানেই।

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদের কোথাও ‘গরু’ নেই। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য বা পাঁচালিগুলোতে ছয় রকম বানান পাওয়া যায় : গরু, গরুঅ, গরূ, গোরু, গোরো, গো। বড়ু চণ্ডীদাস লিখেছেন গরু, গরূ, গোরো। বিদ্যাপতি লিখেছেন ‘গরুঅ’। মুকুন্দ দাস ও মালাধর বসু এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও লিখেছেন ‘গোরু’। ১৯২৭ খৃষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন ‘গোরু’। ১৯২৯ ও ৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও ‘গোরু’র দেখা পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে তিনি লিখতে শুরু করেন ‘গরু’। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থে লেখা আছে ‘গ (গো)রু। অর্থাৎ প্রথমে তিনি ‘গরু’ রেখেছেন, দ্বিতীয়ত ‘গোরু’। ‘গরু’কে অধিকতর গুরুত্ব দিলেও ‘গোরু’কেও তিনি সঠিক বলেছেন।

এখন বাংলাদেশের মানুষ কোনটা গ্রহণ করবে? গরু না গোরু? বাংলা একাডেমির অভিধান তো প্রধানত দুটি। দেশবাসী কোনটি ব্যবহার করবে? ‘আধুনিক বাংলা অভিধানে’ যেহেতু ‘গরু’র অস্তিত্ব নেই, সেহেতু একটা বড় বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। আমি সাধারণত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুসরণ করে ‘গরু’ লিখি। কিন্তু প্রুফ রিডারের কাছ থেকে আসার পর দেখি সব ‘গোরু’ হয়ে গেছে। পরে নিজে বসে বসে ‘গোরু’কে ‘গরু’ বানাই। দ্বিগুণ পরিশ্রম। তারা ‘আধুনিক বাংলা অভিধানের’ দোহাই দেয়। অভিধানটিতে কিন্তু আরো বিভ্রান্তি রয়েছে। যেমন ‘ব্যবহারিক অভিধানে’র প্রথমে রাখা হয়েছে ‘শিহরণ’, তারপর ‘শিহরন।’ কিন্তু ‘আধুনিক অভিধানে’ রাখা হয়েছে শুধু ‘শিহরন’। ‘শিহরণ’-এর অস্তিত্বই রাখা হয়নি। জামিল চৌধুরী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ ও জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’ অনুসরণ করলেও সম্ভবত অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করেছেন ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। যে কোনো একটি অনুসরণ করলে বিভ্রান্তিগুলো তৈরি হতো না।

আমার মনে হয় যে কোনো একটি অভিধান নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। হয় ব্যবহারিক, নয় আধুনিক। পাশাপাশি দুটো অভিধান রাখায় কদিন পরপরই বিভ্রান্তিগুলো সামনে চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। এতে সমকালীন লেখকরা তো বটেই, নতুন প্রজন্মও বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। এই বিভ্রান্তির নিরসন প্রয়োজন।

মহাকালে রেখাপাত
স্বকৃত নোমান
০৮.০৭.২০২০

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধচাকরি পাওয়া সহজ -জাকির হোসেন‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে পালিত হলো এড. হানিফ আলী শেখ ও ড. হুমায়ূন আজাদ এর প্রয়াণ দিবস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে