বিশেষ প্রতিবেদক,নাটোরকন্ঠ: পুরো নাম শাহীন আলম (২৮) । নাটোর শহরের উলিপুর আমহাটি এলাকার সমশের আলীর এই ছেলে অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকায় এলাকাবাসী তাকে ফিটিং শাহীন নামেই চেনে জানে ।গত ১৭ জুলাই রাজশাহী থেকে আসা এক পর্যটকের ব্যাগে পুলিশ পরিচয়ে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ফিটিং শাহীনকে তুলে দেয় পর্যটকরা। ঘটনাটি ইমতিয়াজ দিপন নামে এক যুবক ফেসবুকে লাইভ করলে মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তারপরেই বেরিয়ে আসতে থাকে ফিটিং শাহীনের নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অজানা কাহিনী ।
এলাকাবাসী জানান ,ফিটিং শাহীন এলাকায় পুলিশের সোর্স বলে পরিচিত ।পুলিশের কিছু সদস্যের সাথে তার নিয়মিত উঠাবসা এবং দহরম মহরম সম্পর্ক । অনেক সময় পুলিশের স্টিকার লাগানো বাইকে তাকে চলাফেরা করতে দেখেছে । পর্যটকদের ব্যাগে ইয়াবা ঢুকানোর অপরাধে ফিটিং শাহীনকে গ্রেফতারের সময় যে কালো রংএর পালসার বাইকটি জব্দ করা হয়। অনেকে সে সময় বলাবলি করছিলো সেই মোটরসাইকেলটি ছিল নাকি এক পুলিশ সদস্যের, তবে বার সত্যাসত্য নির্নয় করা সম্ভব হয়নি । মূলত পুলিশের সোর্স হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানী করার ঘটনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অবৈধ তল্লাশী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘ফিটিং’সহ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সে জড়িত । পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল পুলিশের সোর্স বলে পরিচিত ফিটিং শাহীন।কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও সোর্স শাহীন মিলে চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটিয়েছে ।নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় রাতে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তল্লাশি চালায় ফিটিং শাহীন। সুযোগ বুঝে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতেও দ্বিধাবোধ করে না।
উলিপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, থানা পুলিশের সোর্স পরিচয়ে এলাকায় রীতিমতো অত্যাচার চালায় শাহীন এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এদের যন্ত্রণায় অনেকেই অতিষ্ঠ। এরা সন্ধ্যার পরে সাধারণ মানুষকে দাঁড় করিয়ে চেক করার নামে পকেটে ইয়াবা কিংবা গাঁজা ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানি করে। এক ব্যবসায়ী বলেন, সোর্স পরিচয় দিয়ে ফিটিং শাহীন এলাকায় পুলিশের চেয়েও বেশি দাপট দেখায়। মানুষের সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করে। পুলিশের সঙ্গে চলাফেরার কারণে সাধারণ মানুষও তার নামে আতঙ্কে থাকেন।সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন, পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সোর্সরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে ছিনতাই, , চাঁদাবাজি ,মারামারি এমন কিছু নেই যে সে জড়িত না । আরও জানা গেছে, ফিটিং শাহীন ফুলবাগান,মোহনপুর,দিঘাপতিয়া,উলিপুর,বেজপাড়া,ঝাউতলা সহ আশে পাশের এলাকায় মাদক ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল করে অর্থ আদায় করেছে। এবং কি সে বিএনপি থেকে নতুন করে আওয়ামী লীগে যোগদান করে বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করছেন। এতে দলের ভাবমুর্তি খুন্ন হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ফিটিং শাহীনের কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, শাহীনের বৈধ কোন আয় না থাকলেও তিনটি দামী মোটর সাইকেল তার বাসায় । বিলাসী জীবন যাপন করেন ।কৌশলে পুলিশের সাথে মিশেকে নিজেকে সোর্স পরিচয়ে অর্থ বানিজ্য শুরু করে। এর পাশাপাশি জুয়া খেলা ও মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে তার চলা ফেরা সবচেয়ে বেশি, যাতে করে তার এই ব্লাকমেইল ও অর্থ বাণিজ্য চলে সহজেই।সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ছাড়াও ইয়াবা বা যেকোনো মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার কারিগরও এই সোর্স ফিটিং শাহীন ।পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়ায় কোথাও অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না তারা।
অপরাধীদের সম্বন্ধে নিয়মিত তথ্যদাতারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ ও র্যাবের কাছে ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত। নাম-পরিচয় গোপন রেখে সম্ভাব্য ও সংঘটিত অপরাধ এবং অপরাধীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারা। পরে তা পুলিশ বা র্যাবকে সরবরাহ করে। নিরাপত্তার কারণে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। এ জন্য তাদের নিয়মিত আর্থিক সহায়তা (সোর্স মানি) দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে এলাকার দাগি, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরাও নিজেদের স্বার্থে থানায় সোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নানা অপকর্ম করছে। ধরা পড়ার ভয়ে খোদ পেশাদার সন্ত্রাসীরাও এসব সোর্সকে ভয় পায়। সন্ত্রাসী ও পুলিশের সঙ্গে সখ্যের কারণে সাধারণ মানুষ শাহীনকে নিয়ে থাকেন আতঙ্কে। তথ্য পাওয়ার জন্য পুলিশ যেমন তাকে খাতির করে, তেমনি অসাধু পুলিশ সদস্যদের কাছে এ সোর্স শাহীন ‘সোনার ডিমপাড়া হাঁস’। তার মাধ্যমেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে কথিত ‘আটক বাণিজ্যে’র নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় অর্থ।
জানা যায়, নাটোরের দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবন এবং রানী ভবানীর রাজবাড়িতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন । ফিটিং শাহীনের নেতৃত্বে শহরের বঙ্গজল ও দিঘাপতিয়া এলাকায় বখাটেদের একটি গ্রুপ রয়েছে । যাদের মূল টার্গেট বাইরের পর্যটকরা ।পর্যটকদের নানাভাবে হুয়রানি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ায় তাদের পেশা এবং নেশা । বঙ্গজল এলাকার কিছু সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ,ছিনতাইকারী ফিটিং শাহীনের গ্রুপে রয়েছে ।এলাকার মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ফিটিং শাহীন ।
একজন ঠিকাদার জানান,অনেককে মারপিট করে এলাকায় তিনি বীরদর্পে ঘুরেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যারাই মুখ খুলছেন তাদেরকে হুমকি দিয়েছে। থানায় অভিযোগ করার পরও পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করেনি। সরকার দল আওয়ামী লীগের পদবী ব্যবহার করে তাঁর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক ক্রমেই বিস্তৃত করেছেন। এতে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। ফিটিং শাহীনের নেতৃত্বে সেখানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সম্পত্তি দখল, ইয়াবা ব্যবসা প্রতিনিয়ত চলে আসছে।তার নীরব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী । ওই মামলায় দিঘাপতিয়া এলাকার সেই ফিটিং শাহীন জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো তার পূর্বের পেশায় মেতেছেন। আর সেই একই পরিচয়ে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে এবার গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন নাটোরের একটি ক্লিনিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাটোর শহরের শেফা ক্লিনিক এর নামে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপচিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে এক নারীর সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে অপ্রশিক্ষিত ডাক্তারের কারণে জরায়ু কেটে ফেলা হয়, মারা যায় বাচ্চাটিও এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে নাটোর সদর থানায়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে আজ শেফা ক্লিনিক এ হুমকি-ধামকি ও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ফিটিং শাহীন। কিন্তু আগের ঘটনায় ফিটিং শাহিনের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালসহ ব্যাপক প্রচারণা তাই তার ছবিটি গেঁথে গিয়েছিলো অনেকের মনে। পরে ক্লিনিক ও তার আশেপাশের স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে ফিটিং শাহীনকে চার্জ করে। এসময় দৌড়ে ফিটিং শাহিন পালাতে গেলে গণধোলাইয়ের শিকার হয় শাহিন। তার একটি ভিডিও আসে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে।
তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি এখনো এ ধরনের অভিযোগ পান নাই। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন ফিটিং শাহীনের গডফাদার কে ? শাহীনের খুঁটির জোর কোথায়?