আরো একটি কোজাগর রাত
গভীর নিশিতে অন্ধকারে হঠাৎ করে
জেগে উঠে মনে হয় আমার আমি
খুব বেশি ভালো নেই, কেমন জানি
গভীর ক্ষত বিক্ষত! তারপর একজন
কুষ্ঠ রোগীর মতো খুব যত্ন করে
খুঁজে খুঁজে বের করি আমার ভিতরের
যতো প্রগাঢ় অন্ধকার, ক্লেদ ও অসূচী
গুলো । আমি তখন প্রচণ্ড ভয়ে এবং
অজানা আশংকায় নতমুখে নিজে
নিজেই লজ্জা ও ঘৃণায় মুখ ঢাকি
এবং দু’চোখে তখন ঝরতে থাকে
অবিরাম উষ্ণ তপ্ত নুনের ধারা
প্রবহমান ঝর্ণার মতো এবং
সেই তুমি’র কাছেই করি নিঃশর্ত
আত্মসমর্পন অপার ক্ষমার আশায়!
একসময় মনে হয় কে যেনো আমার
মাথায় তার নরম শীতল
হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সান্ত্বনা পাবার জন্য।
এভাবেই কেটে গেলো আরো
একটি কোজাগর রাত অথচ জানালার
ওপাশে তখন সুতীব্র সুগন্ধ বিলিয়ে
যাচ্ছে রাতের শিউলি এবং অর্ধফোটা
হাস্নাহেনার গুচ্ছ হাসি মুখে
তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে
ও কয়েকটি পাখি গান করছে।
প্রতিদিন
প্রতিদিন চলছি হেঁটে
অসীমের পথে
অতিদূর পাহাড়ের
চূড়ায় রেখে চোখ।
প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছি
অনিচ্ছার পদতলে
চুম্বন চিহ্ন এঁকে
কোন অচিনপুরে?
প্রতিদিনই ভাবি
মানুষ তো জানেই
জীবনসুতো ছিঁড়ে
একদিন উড়ে যেতে
হবে অসীমের পথে
ভালবাসার পৃথিবীকে
বিদায় জানিয়ে জেনেও কেনো
বেদনার বানভাসি জলে ভাসে?
নদীর সাথে প্রেম
নদীর সাথে প্রেম আমার সেই ছেলেবেলা থেকে,
নাম শুনেই তার জন্য আমার ভালবাসা অকৃত্রিম,
কখনো সে কর্ণফুলি, কখনো বা কুমার,
কখনো তা সুরমা কখনো বা খোয়াই, যমুনা,
কখনো সন্ধ্যা, মাছখোলা, বুড়িগঙ্গা, মেঘনা,
তিতাস, তিস্তা কার সাথে নয় উঠতে পারি নি
বুঝে কোন দিনই। এই বাংলার সব কটা নদীকে
আমি ভালবেসে বুকের মধ্যে রাখি।
বাংলার নদী গুলোর নামের মধ্যে
একটা ভীষণ রকম ভাললাগা কাজ করে।
এদেশের প্রত্যেকটা নদীই তার নিজস্ব রূপের
পসরা নিয়ে হাজির হয় আমার সামনে।
আমার কাছে নদী মানেই জীবন,
নদী মানেই আবাল্য
শৈশবের সুখ দুঃখের সাথি,
সর্বনাশের পেয়ালা,
ভরা যৌবনের আনন্দ উল্লাসে
মেতে ওঠা, দূর্দান্ত ভালবাসার আধার।
দোষটা ছিলো কার
একদিন দুপুরে হঠাৎ করেই
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো!
জানো, সেদিন বৃষ্টিটা হবার কোনো
কথাই ছিলো না, অনেকটা ভরদুপুরে
নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারে মেহমান এসে
পড়ার মতো! আকাশে কোনো মেঘ
ছিলো না তখন অথচ ঝমঝম করে
বেয়াড়া বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিলো
গাছপালা, রাস্তাঘাট দেখে মনে
হচ্ছিলো যেনো বন্যা কবলিত
কোনো এলাকায় এসে পড়েছি,
কয়েকটা শালিক পাখি ভিজে গিয়ে
একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মেয়েদের
স্নান শেষে লম্বা চুল ঝাড়ার মতো
এলোমেলো করছিলো নিজেদের!
আমি তখন রাস্তার পাশে একটা
টং দোকানে চা খেতে আটকে গিয়ে
এসবকিছুই দেখছিলাম।
আচ্ছা, বলতে পারো? বৃষ্টি কি
মানুষের মতো কথা বলতে পারে?
ওর মনের কষ্টের দীঘল বেনী কী
খুলতে পারে অবলীলায়!
নাকি পারে না বলেই যখন তখন
অঝোরে ঝরে পড়ে মাটির বুকে!
জানো, আমি অনেকদিন বৃষ্টির সাথে
কথা বলতে চেয়েছিলাম।
ওর মনের কথা গুলো পড়তে
চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমার সাথে
কোনো কথাই বললো না!
নাকি বললো কিন্তু আমিই বুঝিনি
এখনো জানিনা তা,
দোষটা ছিলো কার!
আমার না বৃষ্টির!
কবির আনন্দ বেদনার কাব্য
এই পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও এখনো
খুঁটে খুঁটে খাই তারা ঝলমলে
জ্যোৎস্নার আলো, বাঁশঝাড়ে
জোনাকিদের সম্মেলন
তারিয়ে তারিয়ে দেখি ,
উদাস দুপুরে বড়ো আম গাছটার
মগডালে বসে ডাকতে থাকা ঘুঘু
পাখির ডাক শুনে মন খারাপ করি ,
পুকুর পাড়ে বসে বসে মাছেদের
খেলা করা দেখি, গ্রাম্যহাটের
টং দোকানে চা খাবার ছলে
চুটিয়ে স্কুল বন্ধুদের সাথে আড্ডা
দিতে দিতে রাজনৈতিক আলাপনে
রাজা উজির মারতে থাকি ,
ইচ্ছে হলেই এখনো যখন তখন
রবীন্দ্র সংগীত গুনগুন করে
গাইতে থাকি বাথরুমে শাওয়ার
ছেড়ে দিয়ে কিংবা একা একা
রাস্তায় যখন হাঁটতে থাকি,
বৌ এর বকুনি খেতে খেতে
কবিতার বই রেখে বাজারে যাই
যুদ্ধ করতে, যুদ্ধ শেষে ফিরে আসি
হতাশ পরাজিত সৈনিক এর মতো,
আবার বৌ এর বকুনি খেতে খেতে
কান ঝালাপালা হলে কবিতার
কাছেই আশ্রয় নিই,
রাত হলেই আবার ভীষণ রকম
একা হয়ে যাই,
অভিমানি কবি গালিবের গজল
শুনে শুনে নিজেকে মিলাই
গালিবের সঙ্গে!
এভাবেই জীবন কেটে যাচ্ছে
আনন্দ ও বেদনার কাব্য লিখে লিখে।
প্রেম ও ধর্ম
কোন্ দিকে ফেরাবে আমায়?
আমার তো সবদিকেই আছো তুমি!
আমার সকল সময়ের ভালবাসার
অনুভুতির নাম তুমি, দেহের প্রতিটি
রক্তকণিকায় মিশে আছে তোমার
অসীম কৃপা এবং হৃদের প্রতিটি
স্পন্দনে আছে তোমার নামের
সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের খেলা।
তোমার সাথে প্রেমের নামই
আমি ধর্ম বলে মানি, তা না হলে
হাবশী বেলালের কী ঠেকা ছিলো
বুকে পাথর চাপায় পড়ে থেকে
তপ্ত মরুর রোদে বালির উপরে
শুয়ে থেকে আহাদ! আহাদ! বলে
গগন বিদারী চিৎকার দেয়ার কিংবা
আবু বকরের হিজরতের উদ্দেশ্যে
মুহাম্মাদের এক ডাকে রাতের আঁধারে
বিনা দ্বিধায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে
আসার! জ্বী হ্যাঁ, ওটাকেই আমি
প্রেম ও ধর্ম বলে মানি।
শান্তি
কতো আর বিদীর্ণ দর্পণে দেখবো মুখ,
পরিযায়ী পাখির সঙ্গী হারানোর ব্যথা
বুকে নিয়ে ক্লান্ত দিবাবসানে
গন্তব্যহীন আকাশে উড়ে বেড়াই
একটুখানি শান্তির আশায়,
আবার স্বপ্ন সাজাই সাগরের
তীরবর্তী বালুর উপরে, আবার ভেসে যাই
আছড়ে পড়া প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে
দূর অজানায়, শান্তি মেলেনা কভু!
কখনো আবার দূরে কোথাও
শান্তি পাবো ভেবে গভীর আশায়
এগিয়ে দেখি মরীচিকার পিছনেই
ছুটেছি শুধু, আহা শান্তি!
সে তো সুদূরতম নক্ষত্রের মতো
আরো দূরে সরে যায় শুধু।
অধরা প্রেম
বুকের মধ্যে দাউ দাউ কৃষ্ণচূড়া
আগুন এখন পুড়ে হলো
কালো মেঘ অথচ উধাও বৃষ্টি,
খর রোদে ফেটে চৌচির হৃদ জমিন
যেনো হাঁ করা কবর হয়ে উপহাস
করছে আমাকেই, প্রেম তবুও
অধরাই থেকে গেলো চিরকাল!
ঋণখেলাপী ভালবাসার চিঠি
আমার ঋণখেলাপী ভালবাসার
চিঠি দিলাম, মাতাল বৃষ্টি ভেজা
দুপুরের আকাশ কালো মেঘের হাতে,
উড়ে গিয়ে যেনো পৌঁছে দেয়
ঠিক তোমারই হাতে।
পড়তে যদি কষ্ট লাগে তোমার
আবার না হয় উড়িয়ে দিও,
কোনো ঝিঁঝিঁ ডাকা অন্ধ রাতে
আলো জ্বলা জোনাকিদের
ডানায় মেখে, মাখবো তখন
সেই আলো আমার সারা গায়ে!