জীবনানন্দ দাশের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস
” কবির পাণ্ডুলিপি ” – মাসউদ আহমাদ
জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সময় নিয়ে উপন্যাস লেখার স্বপ্ন, ভাবনা ও দুঃসাহস প্রথম মাথায় ঢুকেছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। উপন্যাসের খোঁজে শুরু হয় এক আশ্চর্য অনুসন্ধান। পুরান ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ থেকে শুরু করে বরিশালের পথে পথে খুঁজে ফিরি জীবনানন্দ দাশের কথা-গল্প-মিথ ও স্মৃতিচিহ্ন। আর বইপত্র। বইয়ের পাতায় আর নানাভাবে নানা মাধ্যমে জানার চেষ্টা করে গেছি তাঁকে, দিনের পর দিন। তাঁর জীবন, পরিপার্শ্ব, সময় এবং সেই সময়ের আলো-হাওয়া আর মানুষ নিয়ে টুকরো-দীর্ঘ পড়াশোনা। পুরোটা জীবনানন্দকে অনুধাবন করতে নিবিড়ভাবে লেগে থেকেছি, কাঁদাখোঁচা পাখির মতোন। জীবনানন্দের খোঁজে বরিশাল ও কলকাতায় গিয়েছি একবার। আর একবার। আরও একবার। মানুষ ও কবি জীবনানন্দকে নানাভাবে অনুভব করেছি মন ও ভাবনার করোটিতে।
কিন্তু উপন্যাস লেখার কাজ শুরু করতেই বেশ সময় খরচ হয়ে যায়। কারণ এই, আমি এমন একটা ভঙি ও সুর খুঁজে ফিরেছি, যে ভঙিতে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আগে কেউ উপন্যাস লেখেননি। তথ্য-ভারাক্রান্ত, ডকু-ফিকশন কিংবা গম্ভীর কোনো উপন্যাস লেখার চেষ্টা থেকেও বিরত থেকেছি। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি মানুষ, শিল্পী ও কবি জীবনানন্দ দাশকে উপন্যাসের ক্যানভাসে ধরতে। আমি কোনো গবেষণাকর্ম তৈরি করিনি, তবে গবেষকের নিষ্ঠা ধারণ করেছি। কী হয়েছে, আদৌ কিছু দাঁড়ালো কিনা, পাঠক ভালো বলতে পারবেন।
উপন্যাসটির সম্ভাব্য নাম ‘কবির পাণ্ডুলিপি’। উপন্যাসটি লেখার কাজ শেষ হয়েছে গত মাসে। রিভিশন ও ঘষামাজার কাজ করে এটাকে একটা পর্যায়ে এনেছি। ভাবছি, পুরো উপন্যাসটি আরও একবার প্রিন্ট করে নিজেই পড়ব, পাঠক ও সমালোচক হয়ে। ‘কবির পাণ্ডুলিপি’ উপন্যাসের শব্দসংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ বারো হাজার প্রায়। উপন্যাস লেখা শেষ হওয়ার পর, বুকের উপর থেকে একটা পাথর যেন সরে গেছে নীরবে, একটা স্বস্তি ও নির্ভার হাওয়া ছুঁয়ে গেছে আমার প্রাণের পরে।
জীবনানন্দ দাশ সারাজীবন একটা কালো ট্রাংক বুকে করে বয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর সমস্ত লেখা সেই ট্রাংকে জমা করে রাখতেন, লুকিয়ে রাখতেন বলা যায়। মৃত্যুর পর, তুতেন খামেনের গুপ্তধনের মতো তা উদ্ধার হয়েছে। লুকানো জিনিস নিশ্চয়ই মূল্যবান হয়। আর সে জন্য চাই সিন্দুক। সেই ভাবনা থেকেই বেরিয়ে এসেছে ‘কবির পাণ্ডুলিপি’।
করোনাকালীন সময়ে মানুষ নানাভাবে বিপর্যস্ত ও কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। কাজ ও ভাবনা ব্যহত হয়েছে অনেকের। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমি সৌভাগ্যবান, করোনার দুঃসময়ের ভেতরেই আমার বহুদিনের স্বপ্ন-সাধনার কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমার বন্ধু-পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
~
মাসউদ আহমাদ
ঢাকা
২৭ আগস্ট, ২০২০