কোন অভিযোগ নয় – গুলজার আহমেদ
ব্যক্তিগত কোন কাজে কোন দিনও নিজের পেশার পরিচয় ব্যবহার করি না, যারা পুর্ব থেকে চেনা তাদেরকে পরিচয় দিতে হয় না কখনো, আম্মাকে সবসময় নিয়ম মাফিক ডাক্তার দেখাতে হয়, ৩ বছর থেকে একজন ডাক্তারই দেখেন, মাকে ডাক্তার দেখানোর দায়িত্বটি পালন করে ছোট বোন বা বড় বোন, গত এক সপ্তাহ আগে মা কে চিকিৎসককে দেখানোর পর উনার শারিরিক অবস্থা উন্নতির চেয়ে অবনতি হয় বেশি। ফলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা, গত কয়েকদিন থেকে বউও চেষ্টা করছিলো ঐ চিকিৎসকের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে, প্রথমে ডাক্তার সাহেবের এফবি আইডির ইনবক্সে বউ ডিটেলস বলে, উনি সেগুলো দেখার পর কোন রিপ্লাই করেন নি, পরে ওয়াটসআ্যাপে তারপরও উনি রিপ্লাই দেন নি, অবশেষে ৪ দিন পর বললেন চিকৎসা পত্র দিয়ে কাউকে পাঠান। ইচ্ছে করলে এখানেই তিনি পরামর্শ দিতে পারতেন, যাকগে সে কথা, এরকম কোন নিয়ম নেই বোধহয়।
আজ সেই দিন – সন্ধ্যা ছ টায় যাই চেম্বারে। গিয়ে দেখি বহু রোগী অপেক্ষমান, স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দুরে থাক এক রোগী অন্য রোগীর উপর বসা। আর ডাক্তার সাহেব গ্লাসে মোড়ানো আয়না মহলের ভেতরে বসা, তিনি নিরাপদেই আছেন।
যাক এত কিছু না ভেবে চিকিৎসকের সহকারীদের কারন জানিয়ে বিনয়ের সহিত বললাম ২ মিনিটের জন্য ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই, উনার পরামর্শেই এসেছি উনার জবাব দিলেন বসেন।
বসলাম, সেই বসেই আছি, কিন্তু কোন খবর নেই, দেড়ঘন্টা পর চোখাচোখি শেষে আবারও অনুরোধ করলাম একই উত্তর। কিছু বলতেো পারছি না কারন আমার সামনেই অনেক রোগী অপেক্ষমান, বসলাম বসে আছি। কিন্তু হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম টিকেট ছাড়াও অনেককেই ভেতরে যেতে দিচ্ছে সহকারীরা। তারপরও বসে থাকলাম।
এর ঘন্টা খানেক পরে আবারো বললাম ভাই ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন আসার জন্য, আপনারা উনাকে গিয়ে বলুন ২ঃ৩০ ঘন্টা ধরে একজন অপেক্ষমান শুধু একটু দেখা করবে বলে। সহকারীরা জবাব দিলো ওকে।
এর ২০ মিনিট পর এসে বললো আপনাকে বসতে হবে, স্যার ডাকবে। এর মধ্যে প্রায় রোগী দেখা শেষ, কিন্তু আমাকে তো কল করেন না উনি।
আরো ২০ মিনিট পর আস্তে আস্তে সহকারী মহোদয়দের কাছে গিয়ে অনুনয়ের সহিত আমার ভিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে বললাম যান এবার ভেতরে গিয়ে ডাক্তার সাহেবকে গিয়ে বলবেন এই অদম আপনার সাথে দেখা করতে চায়, সময় দিয়েছে ২ মিনিট। যদি না পারেন তাহলে না করে দিতে উনি চলে যাবেন।
সহকারী মহোদয় ২ মিনিট নয় ভেতরে গিয়েই ডাক দিলেন স্যার ডাকতেছে আসেন। প্রথম কথা বলতে গিয়ে বললাম মানুষকে ৩/৪ ঘন্টা না বসিয়ে দয়া করে টাইমিংটা সঠিকটা জানিয়ে দেবেন, জানি আপনারা সারাদিন সরকারী হাসপাতালে ডিউটি করে এখানে ক্লান্ত শরীরে মানবসেবা করে থাকেন, সাধুবাদ জানাই আপনাদেরকে।
লজ্জিত চেহারায় উত্তর দিলেন সরি। আপনার পরিচয় দিলেন না কেন? কথা না বাড়িয়ে উত্তর দিলাম ইটস নট মেটার, টেইক ইট ইজি প্লিজ। তারপর ১ মিনিটে কাজ সেরে বের হয়ে আসলাম।
সব শেষে ভাবলাম যাদের নুন্যতমো কোন পরিচয় নেই তারা কি মানুষ নয়?
আসুন না মানুষকে মানুষ হিসেবে মুল্যায়ন করি, বিশেষ কোন পরিচয়ে নয়।
লেখক: সংবাদকর্মী।