অবাঞ্ছিত
কবি মাহফুজা আরা পলক
মাঝ বয়স পেরিয়ে যাওয়া লোকটাকে
মাতাল খিস্তিখেউড় বলে সবাই ধিক্কার দিত,
ভোরবেলা নর্দমার পাশে পড়ে শুধু গোঙাত।
সে সমাজের মত্ত মাতাল কীটের ন্যায়
অযাচিত ভবঘুরে মানব,
মর্নিং ওয়াকে হাঁটতে গিয়ে অবজ্ঞার চোখে
কখনো কখনো তাকাত দু-এক জন।
কেউ কখনো আগ্রহ নিয়ে তার নামটাও শুধায়নি,
– নাম তার নিরঞ্জন।
নিরঞ্জন ঘোষ এই নামটার কাগজপত্রে
স্বীকৃতি থাকলেও সমাজে সে আপাদমস্তক
স্বীকৃতি বিবর্জিত রাস্তার চার পেয়ে জন্তু সম।
ভদ্দরনোকের পাড়ায় তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ
তবুও নিশিরাতে ঘোরলাগা চোখে আলুথালু চালে
রোশনাই দেখে চলে আসে এই সড়কে।
নিশি রাতের সম্মোহনে নিরঞ্জনের কাছে
অতীতের সত্তা- অস্টিওপরোসিসের ন্যায়
বঞ্চনার আঘাতের মৌচাক পাঁজর ভেদ করে
তার স্যাঁতসেঁতে আত্মা নিয়নবাতির রঙিন আলোয়
ব্যামো সারাবার তরে উষ্ণতা পোহায়,
বেঘোর হয়ে এলকোহলের ঝাঁজে ঝলসে যাওয়া কন্ঠ থেকে
বিষাদের সুরের ফুকরই ভেসে আসে।
অভিজাত পাড়ার এলিট শ্রেণীর গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
জিহ্বার জড়তায় প্রমাদ গোণে,
রাতের আঁধারে ঘোরলাগা দুচোখে এ পাড়াতে ঈশ্বর খোঁজে,
ভোরের আলো ফোঁটার আগে হাজারো প্রশ্নের উত্তর চাই।
সে দিব্য চোখে দেখে বস্তি থেকে এই রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত
তার জন্মদাত্রী জননীর ধুলোয় ঢাকা পদচিহ্ন পড়ে আছে
অবহেলে,
রাতের প্রমোদ শেষে অর্ধ মাতাল জৌলুশপূর্ণ সাজে প্রাসাদে
অভিজাত গৃহিণীর অনুপ্রবেশ।
তার রাজপুত্রের পরিচয়!!
বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে আকাশের পানে
অসহায় হয়ে প্রশ্ন করে নিরঞ্জন-
তবে তার গলে সমাজ কেন তকমা ঝুলিয়েছে অবাঞ্ছিতের?
রাতজাগা পাখি শুকতারার টানে ঘরছাড়া হয়
রবির আলোয় পাখা মেলে উড়ে বেড়ানোর আশে।
২৬.০৭.২০২১