করোনাকালে দোকানে এতো ভিড় কেনো?- রেজাউল করিম খান

0
566
Reza

করোনাকালে দোকানে এতো ভিড় কেনো?- রেজাউল করিম খান

এই প্রশ্ন এখন প্রায় সকলেরই। পরিবারের সমদস্যদের মধ্যে, বন্ধু মহলে, টেলিভিশনে, এমনকি-ফেসবুকেও এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আব এইসব বিতর্কের মধ্যেই হাট-বাজারে শুরু হয়েছে কেনা বেচার মহোৎসব। দোকানে দোকনে উপচে পড়া ভিড়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও লকডাউন তুলে নিয়ে দোকান ও উপাশনালয় খুলে দেয়ার জন্য সরকার একদিকে যেমন সমালোনার মুখে পড়েছে, অপরদিকে অনেকে খুশিও হয়েছে। চলছে রমজান মাস। আর কয়েকদিন পর ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।

ঈদ এখন আর শুধু ধর্মীয় উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন সামাজিক আনন্দানুষ্ঠান ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে রূপ নিয়েছে। অথচ এই উপমহাদেশে মুসলমান আগমনের ইতিহাস বেশি দীর্ঘ নয়। মাত্র হাজার বছরের। ঐসময় ঈদের উৎসব ও আনন্দানুষ্ঠান রাজদরবার ও অভিজাত মুসলিম শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ কৃষক মুসলমানরা অভিজাত মুসলিম শাসকদের দ্বারা হিন্দু কৃষকের মতোই শোষিত হতো। মোগল আমলের নির্মিত কিছু ঈদগাহ নির্মাণের ভেতর ঈদের নামাজ ও উৎসব পালনের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। রফিকুল ইসলামের ‘ঢাকার কথা’ গ্রন্থের বিবরণে পাওয়া যায় যে তৎকালীন বাংলার সুবেদারদের নেতৃত্বে ঈদের আনন্দমিছিল হতো। সেখানে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনামলেও এ চিত্রের তেমন পরিবর্তন হয়নি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ঈদ উৎসব সামাজিক রূপ লাভ করে।

কবি সুফিয়া কামাল তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রোজার শুরুতে ঘরে ঘরে হাতে বানানো সেমাই আর বাচ্চাদের জন্য নতুন পোশাক তৈরির কাজ শুরু হতো। আর এই কাজের আনন্দের ভাগটা শিশু আর কিশোররাই উপভোগ করত। কোনো কোনো মহিলা নতুন কাপড় পরিধান করতেন।’ যে ঈদ একদিন ধর্মীয় আচার-বিশ্বাসকে ভিত্তি করে সাদামাটাভাবে উৎসব অনুষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল; আজ তা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সর্বোপরি ব্যাপক অর্থনৈতিক উদ্দীপনায় ছড়িয়ে গেছে বিত্তশালী থেকে আমজনতার ঘরে ঘরে। যে যেমন অবস্থায় থাকুন না কেন, অন্তত একটি দিনের আনন্দ সাধারণ মানুষও তাদের স্মৃতির সঞ্চয়ে রাখতে চায়। এখানেই ঈদের সার্বজনিনতা। যদিও এবার করোনাভীতি আছে, কিন্তু স্ত্রী-সন্তানকে নতুন পোশাক উপহার দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা সব ভয়কে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষটি সারা বছর একটু একটু করে সঞ্চয় করেছে যে কয়টি টাকা, তা কেবল ঈদের পূর্বে সন্তানের মুখে হাসি দেখার জন্য। এক দরিদ্র পরিবারের মায়ের ইচ্ছাটাকেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। হাঁস-মুরগি-ছাগল পালন করে যে টাকা জমেছে, তা দিয়ে নিশ্চয়ই হয়ে যাবে মেয়েটার লাল জামা, স্যান্ডেল, রঙিন ওড়না, চুলের ফিতা, কপালের টিপ আর ঠোঁটের লাল রং। প্রয়োজনে সমিতির আপাদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ করতেও দ্বিধা করবে না। এইসব মানুষেরা অবশ্য দোকানে ভিড় করে না। সৌভাগ্যবসত এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও মিলছে ভালো। চাষিদের হাতে এখন বেশ টাকা। ওরাও আসছে দোকানে। ওদিকে বড় ও মাঝারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি এবং মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের তো টাকার অভাব নেই। কিন্তু এবার তাঁরা বাজার করার জন্য সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, লন্ডন, ওয়াশিংটন যেতে পারছেন না, এই যা দুঃখ। শেষ প্রশ্ন, মানুষকে ঠেকাবেন কিভাবে?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধসিংড়ায় বিএনপির উদ্যোগে ২ শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান
পরবর্তী নিবন্ধবাবা হলেন সিংড়া মডেল প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক রাজু আহমেদ, শুভেচ্ছ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে