নাটোরকন্ঠ : নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস আজ ৪ জুন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা প্রায় সাড়ে ৪০০ বাঙালিকে পিঠমোড়া করে বেঁধে প্রথমে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করে। সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা স্মরণ করলে আজো আতঙ্কে শিউরে ওঠেন ওই এলাকার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বিভিন্ন স্থানে যে সব গণহত্যা চালানো হয় তার মধ্যে নাটোরের ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। স্বাধীনতার এতো বছরেও সেই শহীদদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি স্বীকৃতি। যদিও তাদের স্মরণে স্থানীয়ভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত শহীদদের সরকারি স্বীকৃতি দান ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হোক। সরকারিভাবে দিবসটি পালনেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের হেডকোর্য়ার্টার ছিল নাটোরে। ফলে এখানে বড় ধরনের কোনো লড়াই হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোরের বিভিন্ন স্থানে চালিয়েছে গণহত্যা। নাটোর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছাতনী। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন এমসিএ শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি ছাতনী গ্রামে হওয়ায় এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর ও অবাঙালিদের আক্রোশে পড়ে এই গ্রাম। হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারি ১৯৭১ সালের ৪ জুন গভীর রাতে ছাতনী, ভাবনী, পণ্ডিতগ্রাম, ভাটপাড়া, আমহাটি, হাঁড়িগাছা ও বনবলেঘরিয়াসহ আশপাশের ১০টি গ্রামে ঢুকে ঘুমন্ত নিরীহ মানুষকে ধরে পিঠমোড়া করে বেঁধে ছাতনী সুইস গেটে এনে জড়ো করে। প্রথমে গুলি চালিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গলা কেটে তাদের হত্যা নিশ্চিত করে মরদেহে এসিড ঢেলে দেয়। ওই সব শহীদের লাশ ছাতনী সুইস গেটসহ আশপাশের পুকুর ও ডোবায় ফেলে এবং গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়।
আজো সেসব গণহত্যার বিচার ও শহীদ বা তাদের পরিবারের স্বীকৃতি মেলেনি। স্থানীয়ভাবে নির্মিত জীর্ণ শহীদ মিনারটি ভেঙে পড়লে ২০০৮ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নতুন করে সেই মিনার ও বেষ্টনী প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়ে বর্তমানে তা সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের কাছে শহীদ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত শহীদদের স্বীকৃতি দেয়া হোক। বিচার সম্পন্ন করা হোক সেই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের। স্থানীয়ভাবে সাদামাটাভাবে দিবসটি পালন করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালন করার কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এবার করোনা কালীন সময়ে স্বল্প পরিমানে। এলাকাবাসীর দাবি, সরকারিভাবে দিবসটি পালনের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।