আমিও একদিন
কবি নাজনীন নাহার
আমিও একদিন নিশ্চিত মৃত্যু বরণ করব।
মৃত্যু বরণ করবে আমার সুখ আমার স্বপ্নরা।
ঘুমিয়ে যাবে আমার সাথেই,
আমার প্রিয় অপ্রিয় স্মৃতিগুলো।
নিস্তব্ধ হয়ে যাবে আমার মান অভিমান
আর সকল চাওয়া পাওয়ার কোলাহল।
তুমি নামক আমার একান্ত প্রেম এপারে রেখে,
মৃত্যুর ওপরে চলে যাব আমি।
আমার প্রিয় অপ্রিয় সকল অভ্যাসেরা
শেষবারের মতো আমায় ছেড়ে যাবে।
ছেড়ে যাবে প্রিয় সব কবিতার অক্ষর,
আকৃতি আর মায়া।
ছেড়ে যাবে ব্যথা,
বেদনা আর সকল কষ্ট পোকারা।
আমি ঠিকঠাক-
মৃত্যুর নিরুত্তর পৃথিবীতে পৌঁছে যাব,
পৌঁছে যাবে আমার আত্মা, আমার অস্তিত্ব।
আমার চোখ পৃথিবীর
আর কোনও সৌন্দর্য দেখবে না,
দেখবে না কোনও বীভৎসতার চালচিত্র।
দেখবে না প্রিয় মুখ প্রিয় তোমাকে,
বলবে না ভালোবাসি ভালোবাসি।
আমার নিরুত্তাপ ঠোঁটে আর কখনোই,
জাফরানি রোদ্দুর হাসবে না।
আঙ্গুলের অভিক্ষেপ আর স্পর্শ করবে না তোমায়,
লিখবে না প্রিয় শব্দ কবিতার।
মস্তিষ্কের নিউরনে আর নিঃসৃত হবে না,
তোমাকে ঘিরে আমার আসক্তি অনুরাগ।
কাঁদবে না আর এ চোখ প্রিয় দুঃখে,
ভাঙ্গবে না ঘুম আর কোনও কালে!
আমি কেমন নিথর পড়ে থাকব,
খাটিয়ার পাটাতনে।
পৃথিবীর কোনও সুগন্ধ আমায়
আর আন্দোলিত করবে না,
ব্যথিত করবে না কারও কান্নার ইতিবৃত্ত।
আমার পা দু’টো আর হাঁটবে না,
কোনও সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার পথে পথে।
আমি কেমন মৌন সম্মোহনে
চারটি কাঁধে চড়ে বসব,
আর ইচ্ছেহীন অনিচ্ছায়
মাটির ঘরে নেমে পড়ব।
আমি খুব একা হয়ে যাব,
আমার একাকিত্ব ক্রমশ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।
আমিও কেমন অন্ধকারের আচ্ছাদনে,
নির্বাক ঘুমিয়ে থাকব।
তোমাদের প্রেম অপ্রেম,অপমান,অবহেলা,
কিংবা বিশ্বাস ঘাতকতাগুলো-
আর কখনোই আমায় দুঃখ দিবে না।
দুঃখ দিবে না আর কারও লাম্পট্যের প্রহসন!
তোমাদের সব রকম ওজর-আপত্তি রেখে,
আমি নিশ্চিত মরে যাব।
কোনও অভিযোগ,
অভিমান আর ক্ষোভের স্বরলিপি না রেখে,
আমি নিরবে চলে যাব,
চলে যাব সেই চিরন্তন না ফেরার দেশে।