ঋণ
কবি জয়া ঘোষ
সে ডাক দিলেই বারবার অকাতর হয়েছি আমি। সহস্র অপমান, নিবীড় যন্ত্রণা, ঘিরে থাকা নক্ষত্রদের ভিড়, তীক্ষ্ণ ফলার মত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম যন্ত্রণা সবটুকু আঁচলে ঢেকেও নিজেকে নিঃস্ব করেছি বহুবার।
মনে পড়ে সেইসব দিন। বিহানবেলায় এইসব যাবতীয় দুঃখভার সঞ্চয়ে রেখে নিজের ভাগ্যগণনা করতে গিয়ে দেখি অদৃষ্টে শুধুই অভিযোগের সম্ভার।
নির্লজ্জ ঝুলিতে মুঠো মুঠো ঋণ। অস্তিত্বহীন এক শূন্য জন্ম কুন্ডলী।
অথচ এইসব ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা আগুনের শিখা আমায় পুড়িয়ে ছাই করে নাম দিয়েছে কলঙ্ক। আর বড় অদ্ভুত… সে ঈশ্বর। এ পৃথিবীতে সে একজন আর ক্ষীরান্ন হাতে শত শত প্রিয়দর্শিনী।
এইসব বিরহের আগুন লাঘব করতে করতে কখনও কখনও দু একটি পাখির ডানার সুখ দোলা দিয়ে যায়। যে হাসি ভুলেছি বহুকাল সেখানে বিন্দু বিন্দু মেঘ জমে। কেঁদে ওঠে সব পারাবার। তবুও অবিরাম মন্দিরে কাঁসর, ঘন্টা বেজে ওঠে রোজ।
ছোটবেলায় রাঙা ঠাম্মি বলেছিলো ভালোবাসতে গেলে নিঃস্ব হতে হয় আর বিরহ বাঁধতে হয় আঁচলে।
আজ তাঁকে পেলে জিজ্ঞাসা করতাম,ঠাম্মি গো নিজের শবদেহ দেবার পরেও কি সত্যি ভালোবাসা পায় আমার মত বোকারা?
জানি ঠাম্মি সব শুনে বলতেন…
না বলতেন না, শুধু জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন। আর বলতেন তুই আজীবন বোকাই রয়ে গেলি।
এইসব ধূলোমাখা, নোনাজলের বেদনা, বিষাদ জমিয়েছি এ দেহ চরাচরে। নীল হয়ে আসছে ক্রমশ দিগন্ত পারাবার। ও আকাশ একবার ডানা মেলবে আজ। বড় ঘুম পাচ্ছে আমার। ভেসে আসছে দূরে দূরে গোঁসাই আর তাঁর বৈষ্ণবীদের আনন্দ নিয়ে গান গেয়ে খেয়া বেয়ে চলেছে ফকির লালন।