একুশের ডায়েরি -বিপ্লব কুমার পাল -পর্ব-০২

0
162

একুশের ডায়েরি

বিপ্লব কুমার পাল

পর্ব-০২

পীযূষদা একুশে টিভিতে যোগদানের ছয় মাসের পর প্রথম বারের মতো আমাকে ইটিভিতে জয়েন্ট করার কথা বলেন। হঠাৎ ফোন দিয়ে বললেন, কালকে তোমাকে জয়েন্ট করতে হবে। অনলাইনের দায়িত্ব নিতে হবে। আমি বললাম- এভাবে জয়েন্ট করা যায় নাকি? আমি আসছি- বাকী আলোচনা সাক্ষাতে হবে দাদা।

একাত্তরে কাজ শেষে চলে গেলাম একুশে টিভিতে। পীযূষদার সাথে অনেক আলাপ হলো। তাকে বোঝালাম- আমি একটি জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেলের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছি। তাছাড়া টিভিতে কাজ করছি সাড়ে ১১ বছর। এখন আর শুধু অনলাইনে কাজ করার ইচ্ছে নেই। দাদা বিষয়টি বুঝলেন। দাদা এবার বললেন, অনলাইনের জন্য দক্ষ লোকজন দিতে।

এরপর আমি অনলাইন বিভাগের জন্য সুমন, অনয়, বৃতি, জয়ন্ত, দীপক, মিনহাজ, জয়ন্তীর নাম প্রস্তাব করি। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সবাই একুশে টিভির অনলাইন বিভাগে জয়েন্ট করে। একই সাথে অনুষ্ঠান বিভাগের জন্য সাইফ আহমেদের নাম প্রস্তাব করি। সাইফের সাথে আমার পরিচয় সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠন করতে গিয়ে। তাকে নিয়ে গল্প হবে আরেক পর্বে। সাইফেরও চাকরি হয় একুশে টিভির অনুষ্ঠান বিভাগে।

একুশে টিভিতে তখন চাকরি না করলেও সপ্তাহে ৩/৪ দিন যেতো হতো ইটিভিতে। ৩/৪ ঘণ্টা সময় দিতাম। নিউজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামতা জানতে চাইতেন পীযূষদা। আবার অফিসের মধ্যে ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছুটা চিন্তিত থাকতেন। তাই সময়ে পেলে ইটিভিতে যেতাম যতটুকু সম্ভব মতামত জানাতাম। তাছাড়া সম্প্রীতি বাংলাদেশের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হতো। কারণ সম্প্রীতি বাংলাদেশ গঠনে দাদার সাথে যে ২/৩ জন ছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন।

সম্প্রীতি বাংলাদেশে ভার্চুয়াল সম্প্রীতি সংলাপ হয় সেটি ছিল আমার পরিকল্পনা, সংগঠের ওয়েবসাইটট, বুশিয়ারের সমস্ত লেখা ও ডিজাইন আমার করা। নতুন লোকবল নিয়োগ হওয়ায় পুনরায় উন্নতি করতে শুরু হয় একুশের অনলাইন। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি লেখা প্রকাশ করা নিয়ে হেড অব ইনপুট অখিল পোদ্দারের সাথে সুমন ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। সুমন ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

বিডিনিউজে কাজ করতেন। সেখান থেকে তাকে একুশের অনলাইনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও মৌখিকভাবে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। লিখিত আদেশ আজ দেবো কাল দেবো বলে পরে আর দেননি পীযূষদা। যাই হোক, সেই সুমন ভাইয়ে সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অসম্মানজনক কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন অখিল পোদ্দার। এতে খুব কষ্ট পান সুমন ভাই। আমি পীযূষদাকে জানাই। বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাসও দেন তিনি। কিন্তু এর কোনো ফলাফল চোখে পড়েনি।

একদিন মহাখালী ডিএসএস-এ সম্প্রীতির অফিসে আসেন অখিল পোদ্দার। মিটিং শেষে আমি, সুমন ভাইসহ কয়েকজন বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এসময় অখিল পোদ্দার আমাদের কাছে এসে আলাপ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সুমন ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সুমন ভাই ও অখিল পোদ্দার একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। দৃশ্যত দু’জনের ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর পীযূষদার জন্মদিন। প্রতিবছর ঘরোয়াভাবে জন্মদিন উদযাপন করা হতো। ২০২০ সালে একুশে টিভিতে যোগদানের পরও ঘরোয়ভাবেই হয়েছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে না হলেও, ২০২২ সালে একুশে টিভির ব্রডকাস্ট ডিপার্টমেন্ট বিশাল আয়োজনে পীযূষদার জন্মদিনে উদযাপন করে। এর বিস্তারিত লিখবো- ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা বর্ণনার সময়। তবে ২০২১ সালে সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভাইয়ের উদ্যোগে পীযূষদার জন্মদিন বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়।

বনানী ক্লাবে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। শিরোনাম আমি দিয়েছিলাম- “শারদ প্রাতে জেগে ওঠা দ্যুতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়”। জন্মদিন উপলক্ষে অনলাইন পত্রিকায় “পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় : শান্তির পাখিটা বেঁচে থাক” কলাম লিখেছিলাম। পীযূষদাকে নিয়ে আমি ও সাইফ মিলে তথ্যচিত্র বানিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “আমার জন্মদিন উপলক্ষে বিপ্লবের লেখাটি আমার বুকে গেঁথে আছে। চোখে জল এসেছিল, বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছিল।” পীযূষদার দরাজ কণ্ঠে শ্রুতিমধুর বক্তব্যে আমার মতো উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়েছিল।

আবার ফিরে আসি একুশের ডায়েরিতে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আমাকে একুশে টিভিতে যোগদানের জন্য আবারও প্রস্তাব দেন পীযূষদা। সিএনই পোস্ট দিতে চাইলেন। বললেন, বার্তা বিভাগ নতুন করে সাজাতে চান। কিছু দক্ষ বার্তা সম্পাদক, রিপোর্টার নিয়োগ দিতে চান। একুশে টেলিভিশন এইচডি হবে। ওই বছরের ২১ অক্টোবর আমি ১১ জন সাংবাদিকের নামের তালিকা জমা দেই। যারা জনপ্রিয় চ্যানেলের নিউজ বিভাগে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। দাদা জানালেন, নভেম্বরে বোর্ড মিটিং হওয়ার কথা এরপরই সবার নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন। সবার সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করে রাখতেও বললেন তিনি।

২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর একুশে টিভির বোর্ড মিটিং হবে। পীযূষদা খুব চিন্তিত। জরুরিভাবে ডাকলেন আমাকে। বললেন, বোর্ড মিটিং বানচাল করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আগের সিইওকে সেভাবে সড়ানো হয়েছে, একইভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কিছু পরামর্শ দিলাম। বোর্ড মিটিং-এর দিন খুব টেনশন করছেন পীযূষদা। সকালে একাধিকবার ফোন করলেন, ম্যাসেজ পাঠালেন। সময়মতো বোর্ড মিটিং শুরু হলো। কি হয়- এনিয়ে সবার মাঝে একটি উৎকণ্ঠা কাজ করছে…

চলবে

বাকি অংশ, পর্ব -৩ এ

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

 

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধশিয়ালের বিচ্ছিন্ন দেহাংশ : পিছলে সাংবাদিক গুরুতর আহত 
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের বনলতা সেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে