পরজন্মে কাঠগোলাপ হতে চাই
সময়ের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে জীবন
চলতে চলতে এখন প্রায় দ্বিপ্রহর,
কিছু সময় বিগত হলেই বিকেল গড়িয়ে
অস্তরাগে ভেসে ওঠবে গোধূলির আঁচড়।
তবুও এতটুকুও কাটেনি পার্থিব মোহমায়া
কাটেনি মমতার বাঁধনে আবেগি প্রেমঘোর।
বলিরেখা দু’টি চোখ এখনও স্বপ্নসিক্ত
পৌঢ় অন্তরেও প্রেম খেলে যায় অষ্টপ্রহর,
যাপিত জীবনের পাওয়া না পাওয়াগুলোও
খুব ভাবায়, কখনো আবার কাঁদায়ও।
অহর্নিশ ভাঙাগড়ার এই খেলায়
জাগতিক রঙ্গমঞ্চেই মগ্নতায় হই বিভোর।
জানি,অচিরেই হয়তো সাঙ্গ হবে খেলা
মৃত্যুতে আলিঙ্গনাবদ্ধ হবো চিরতরে,
সেদিন আমায় সাদরে সমাধিত করো
ওই পল্লবিত কাঠগোলাপের বৃক্ষতলে।
সমাধীর পাশ ঘেষে প্রিয়জন হেঁটে গেলে
চেনা অস্তিত্বের সান্নিধ্য টের পেলেই,
আমি শুভ্র ফুলে হলদে হাসি হয়ে
প্রস্ফুটিত হবো সবুজ পাতার আঁচলে।
৮-৭-২০২০.
কৃষ্ণকলি
আমার নাম কৃষ্ণকলি
মিষ্টি মধুর মুখের বুলি,
গানের তানেও সুর তুলি
অকারণেই হাসি খেলি।
পড়াশোনাতেও মন্দ নই
নাকনকসায় দেখতে বেশ,
চোখ দু’টো ডাগর কালো
দীঘল আঁধার মাথার কেশ।
কভু কেউ বলেনি আমায়
সুন্দরী তুমি রূপে অনন্যা,
সর্বগুণ ঢেকেছে দিয়েছে
অমাবস্যার কৃষ্ণ জ্যোৎস্না।
সবাই বলে স্বভাব চরিত্রে
বড্ডো আমি ভালো,
পার হয়েছে বিয়ের বয়স
গায়ের রঙ যে কালো!
সমন্ধ তো আসেই কতো
বাবার চিত্ত তবুও অস্থির,
বড়অংকের যৌতুক দাবিতে
মায়ের চোখও সজলনীড়।
বাপ মায়েরে কি করে বুঝাই
বিয়ে না হলে কি হবে ছাই!
নিজের পায়ে আগে দাঁড়াই
কর্ম সাফল্যের যোগ্যতায়।
বাবা বলে মেয়ে তুই বোকা,
মা-বাবা কি থাকে চিরদিন?
নিঃসঙ্গ জীবনে একা পথে
জ্বলবি যে তুই নিশিদিন।
সাজবো আমি বঁধুবেশে
পিতামাতা দেখেই স্বপন!
কুমারীত্বেই কাটবে জানি
কৃষ্ণকলির তিমির জীবন।
৯-৭-২০২০.
মৌন ক্রন্দন
গভীর রাতের গাঢ় নৈঃশব্দের মাঝেও
স্পষ্ট শোনা যায়
শিশিরের টুপটাপ ঝরে পড়ার শব্দ,
অথচ,উত্তরী হাওয়ার বায়ে
অদৃশ্যেই মিলিয়ে যায় পাতা পতনের দীর্ঘশ্বাস।
শুনতে না পেলেও বিলাস করেই
সবাই একে বলে ঝরাপতার গান।
আমি বলি,
বীথিকা বিচ্ছেদে বিরহী পাতার
অভিমান মাখা মৌন ক্রন্দন।
যুগ যুগ ধরে এমনি করেই নবীনের তরে
নীরবে ছেড়ে দিয়ে স্বীয় আসন,
গোপন বিষাদে ঝরে পড়েছে কত শত পুরাতন।
৭-৭-২০২০.
আমন্ত্রণ
ওগো আষাঢ়ি মেঘের ঘনঘটা
কেবল আকাশেই টেনে রেখো না মেঘমেদুর তমসার ঘোমটা,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ো খরা তাপদাহে বিদীর্ণ ধরায়
বিজলির চমকে প্রচণ্ড গর্জনে প্রবল বর্ষণের ধারায়।
ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন করে দাও আমাদের ব্যাধিগ্রস্থ অবনী,
যেখানে নিত্যই নীলনকসায় সাজে প্রবঞ্চনার শকুনি।
যেখানে স্বার্থপরতার লালসায় লোভী মন মেতে ওঠে
অদ্ভুত মহরায়!
যেখানে উৎসবের আমেজেই সদা চলে অনাচার অন্যায়।
আদিসংস্কার ভেঙে নতুনত্বের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এ ভুবন,
সৃষ্টির সেরাজীবের বিকৃত মননের বর্বরতায় পাপের কালিতেই হচ্ছে লেপন।
পুনঃপুন পাপের ভার সইতে না পেরে কেবলই প্রতিশোধপ্রবন হয় শান্ত প্রকৃতি,
সংকেতবিহীন দূর্যোগের বেশ ধারণ করে যেন বিভৎস মূর্তি!
ওগো আষাঢ়ি অমিয় বারিধারা
ঝরঝর রিমঝিম মুখরিত বাদলের মুর্ছনায়
লোভপাপ, জরাজীর্ণতা,অপরিচ্ছন্নতা ধুয়ে দিয়ে
সুস্থ করো, সবুজ করো, শীতল পবিত্রতার ছোঁয়ায়।
১১-৭-২০১৭
অনন্ত আশা
তোমার তরেই পরাণ পুড়ে
তোমারই ছায়া পড়ে ক্ষরিত অন্তরে
আকণ্ঠ বিষাদ পিয়ে আশায় বুক বাঁধি
বয়ে চলা সময়ের প্রলেপে
যদি কোনদিন ক্ষতটা যায় ভরে !
তবুও…
ঘৃণার নিঃসীম সাগরে
ভালোবাসার ঝিনুকেরা
প্রেমের মুক্তো গর্ভে ধরে
উত্তাল ঢেউয়ে সাঁতার কাটতে কাটতে
যদি কোনদিন সৈকতে ভিরতে পারে!
তবুও…
ভিতহীন অনাস্থার আঁধার ঘরে
অশ্রুজলে বিশ্বাসের সলতে ভেজাই
হৃদয় পোড়ানো অনলে
আস্থার দিয়া জ্বালাই
দিকভ্রান্ত পাখিটি যদি ফিরে আসে নীড়ে!
৬-৭-২০২০.
অবিনাশী কবিতা
একটি কবিতা লেখার অভিলাষ এই মনে
কবিতাটির নির্ভুল শব্দচয়নে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে
কত বিনিদ্র রাত কাটে আমার পলকহীন নয়নে।
পাঠ করে যে কবিতার মর্মবাণী
পরিশুদ্ধ,পবিত্র হবে ধরণী,
ঘুচে যাবে, যা কিছু অশুভ,অকল্যাণকর,
রুখে যাবে পাপাচার,দূর হবে অমানিশার অন্ধকার।
হৃদয়স্পর্শী হবে যে কবিতার মর্মকথা
দূর হবে ঈর্ষা, স্বার্থপরতা আর হীনমন্যতা,
যে কবিতা বিশ্বসমাজে রুখবে বর্ণবাদ ,জাতিভেদ
জগৎ জুড়ে নিঃশেষ হবে সকল বিভেদ।
ভাঙবে প্রথার শিকল, বিদ্রোহী হবে যে কবিতা,
রক্তাক্ত যুদ্ধ রুখে, বন্ধ করবে সব অরাজকতা,
শান্তির দূত হবে, বিশ্বময় ছড়াবে শান্তির বার্তা,
সত্যবলে আলোকিত হবে বিশ্ব মানবতা।
যে কবিতার প্রতিটি চরন হবে জলন্ত অগ্নিশিখার দীপ্তি।
যুগ যুগ ধরে বেঁচে রবে যে কবিতা হয়ে কিংবদন্তী।
মন হারাই প্রকৃতির আঁচলে
বিস্তৃত সবুজ দেখলেই
আমি ঘাসফড়িং হই,
ফুলের রঙ সৌরভে
হই রঙিন প্রজাপতি।
পথের দু’পাশে চারচক্ষুতে হেসে
দোলে যে মুকুল!
হোক সে বুনোফুল,
তবুও তার সৌন্দর্য চিনে নিতে
হয় না কভু ভুল।
মধুমক্ষিকা হয়ে উড়ে যায় পাশে
হাতিশুঁড় কিংবা দন্ডকলসের
মধু টেনে নেই এক নিঃশ্বাসে।
রৌদ্রনীল মুক্ত আকাশে
পেঁজাতুলো মেঘের সাথে ভেসে
আমিও মেঘবালিকা হই,
মন হারাই ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘদলে
বরাবরই হারাই আমি
প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন আঁচলে।
৪-৭-২০২০.
দীপ জ্বেলে রাখি
জানি, দীর্ঘ নিশি পারি দিয়েই
বসুধায় জেগে ওঠে
নির্মল ভোরের সুদীপ্ত আলো,
আঁধারের শরীরে হেঁটে হেঁটে
নিরাশার বুকে স্বপ্নের দীপ জ্বেলেই
তাড়াতে হয় নিরাশার কালো।
জানি, চলার পথে ক্লান্তি চাপে
অবসাদের শ্রান্তিতে বিষণ্ণ হয় ক্ষণ
আঁধারের ঘোরে গাঢ় হয় অভিমান,
পুনঃপুন স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায়
নিকোটিনের ধোঁয়াশার মতো
ধূসরতায় গুমোট হয় মন।
এও জানি, নিগূঢ় তপস্যার কাছে
সবকিছুই হেরে যায় একদিন,
অমাবস্যার ছায়া মাড়িয়ে
শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্নায় হাসে চাঁদ,
হৃদয়ে আশার দীপ জ্বেলে রাখলে
অশুভ শক্তিরও হয় বিলীন।
২-৭-২০২০.