কবি গোলাম কবির‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
498
Golam Kabir

জলপরী স্বপ্ন

এই ছোট্ট বুকের মধ্যে একটা বিশাল নদী
বয়ে চলে নিরবধি, কখনো স্রোতের তোড়ে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভালবাসার ঘরবাড়ি,
জননীর শিশু, জলপরী স্বপ্ন গুলো।
জ্যোৎস্না রাতে ইলিশ ধরা জেলেদের স্বপ্ন
মর্গে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ
লাশের মতো অবহেলায় পড়ে থাকে,
তখনও নদীর ভাঙে না কালঘুম ;
কখনো তুমি এসে অভিমানে ঢেলে দাও
কান্নার ঢল, এদিকে আমি তখন
তৃষ্ণার্ত ভীষণ সুপেয় জলের এবং ভালবাসার!
ফেরে না ভালবাসা আর নিজের বাড়ি,
নদীবাসী বেদে বহরের নৌকায়
ভেসে ভেসে আমিও চলতে থাকি গন্তব্যহীন
কোনো এক গঞ্জের হাটে,
বিলাবো নিজের দুঃখ গুলো মন থেকে মনান্তরে।

গোলামের আবদার

আমার হৃদয় প্রতিদিন নীল পেয়ালা হতে
পান করে ভালবাসার হেমলক,
তবুও স্পর্ধিত ইকারুস এর মতো ডানা মেলে
তোমার ডেরায় পৌঁছাতে চাই ভালবেসে,
নেবে তো আমায় তোমার কাছে প্রিয়তম প্রভূ আমার?
নাকি দূরে কোথাও জাহান্নামে কষ্ট দেবে
অথবা জান্নাতে রেখে দেবে শরাবুন তহুরা,
ঝলসানো পাখির মাংস কিংবা হুরপরির লোভ দেখিয়ে?
আমি তো কোথাও যেতে চাই না
যেখানে তুমি নেই,
আমি চাই তোমার সাম্রাজ্য জুড়ে
তোমারই নামের গান গাইতে গাইতে
ছুটোছুটি করতে যতো দূরে চোখ যায়
ততো দূর পর্যন্ত কিংবা তোমার কুদরতি
পায়ের সামনে মুগ্ধ হয়ে বসে থাকতে সর্বদাই।

একদিন প্রতিদিন

একদিন প্রতিদিন তুমিহীন
ভাললাগে না কোনদিন।
প্রতিদিন তুমিময় ভরে থাক
সকল সময় , হৃদয়তন্ত্রীতে
বাজতে থাক অনুক্ষণ
তোমারই গান সুরে সুরে,
জীবন খুঁজে পাক
জীবনের মানে। ভালবাসা
ভাললাগা সবটুকু তোমায়
দিলাম আজ উজাড় করে,
নিয়ে করো শূন্য আমায়
এটুকুই দাবী করি তোমার কাছে।
অদৃশ্যে থাকো তুমি চুপটি করে
দেখে যাও একবার, কি সুখে
আছি আমি রাত্রিদিন তুমিহীন।
হৃদয় পোড়ে শুধু ভালবাসার
অবিনশ্বর আগুনে, একদিন প্রতিদিন।

আহারে সাধের জীবন

কখনো কখনো জীবনকে মনে হয়
এখনই বানানো গরম ভাপ ওঠা
মজাদার পিঠার মতো লোভনীয়!
বেঁচে থাকার সাধে এবং কখনো
লোভের ফাঁদে পড়ে তাই মানুষ
কতোকিছুই করে এবং এবং মেনে
নেয় অনিচ্ছায়, অবশেষে একদিন
ছেড়ে যেতে হয় সব ফেলে রেখে
একদমই খালি হাতে, যা কিছু
রেখে গেছে সে তার মূল্য হবে
পুড়ে যাওয়া আগরবাতির ছাই
জেনেও! আহারে সাধের জীবন!

অবিস্মরণীয় শিল্পী মান্নাদে

তুমি নিজের মুখেই বললে যেদিন,
আমার না যদি থাকে সুর তোমার
আছে তুমি তা দেবে, তারপর?
আমায় আকাশ বললো,
এ নদী এমন নদী,
একি অপূর্ব প্রেম
দিলে বিধাতা আমায় ।
আবার গেয়েছিলেন,
ও চাঁদ সামলে রেখো জ্যোৎস্নাকে,
কতোদিন দেখিনি তোমায়
তবু মনে পড়ে তব মুখখানি,
আমি ফুল না হয়ে
কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম,
তোমার নিঃশ্বাসে বিষ ছিলো
আমি বিশ্বাস করিনি।
এভাবেই এপার ওপার বাংলার
কিশোর বালকেরা প্রেমের পাঠ
নিয়েছিলো যাঁর গান শুনে শুনে,
তারপর? মা মাগো মা, আমি এলাম
তোমার কোলে, সে আমার ছোটো
বোন এবং কফি হাউজের সেই
আড্ডা গেয়ে যিনি আপামর
বাঙালির প্রিয়শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন
তিনিই অবিস্মরণীয় শিল্পী মান্নাদে!

সবাই কী মানুষ!

এই যে রাস্তায় বেরুলেই কতো মানুষ
দেখি, কেউ হয়তো লম্বা, কেউ বেঁটে,
কেউ হয়তো বা ফরসা, কেউ হয়তো
উজ্জ্বল শ্যামলা আবার কেউ কেউ
মিশমিশে কালো! এরা সবাই তো
দেখতে মানুষের মতোই কিন্তু সবাই
কী মানুষ! হাত, পা, চোখ, কান সব
অবিকল মানুষের মতো হলেও
সবাই মানুষ হতে পারিনি আমরা!
কেউ কেউ আজীবন অমানুষ
থেকে গেলাম, নিজেরই দোষে!
কেউ আবার নিরন্তর চেষ্টায় আছি মানুষ হয়ে থাকার জন্য!
আবার এমনও তো দেখা যায়
কেউ কেউ শিশুকাল পেরিয়ে
অমানুষ হয়ে গেলাম অথচ
সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের বিভিন্ন পাশের
সার্টিফিকেট ঝুলিতে ভরে নিয়েছি
বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে এবং
লোকে বলবে শিক্ষিত মানুষ বলে! আসলে কী হতে পেরেছি প্রকৃত
মানুষ! এমনও তো দেখা যায়
কখনো কোনো বিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়ায়নি অথচ সেই ব্যক্তিই
প্রকৃত মানুষ হয়েছে
প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে।

চিরকালের মানব জীবন

বুকের ভিতর জমাটবাঁধা
প্রিয়জন হারানোর কষ্ট
কেবলই থেকে থেকে বাড়তে থাকে,
যেমন শীতের কোনো শীর্ণ নদী
শুকিয়ে মরে যায় যায় মনে হয়
অথচ বেঁচে থাকে টিম টিম করে
জ্বলতে থাকা মোমের মতো।
এখন যেদিকে তাকাই শুধু
এখানে ওখানে পড়ে থাকা
তার স্ম‍‍ৃতির উমে ঝলসে ওঠে হ্নদয়!
এভাবেই দেখতে দেখতে একদিন
নদীর মতো সবকিছুই সয়ে যায় ,
আবার নতুন করে
বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে মন,
এই তো চিরকালের মানব জীবন!

(সদ্য বন্ধুর (মরহুম শাহরিয়ার রিপন) অকাল প্রয়াণে গভীর বেদনায় নীল বন্ধু রফিক সুলায়মান ভাই কে উৎসর্গ করলাম আমার এই কবিতাটি)

Advertisement
উৎসGolam Kabir
পূর্ববর্তী নিবন্ধসিংড়ায় আনসার ভিডিপির চারা বিতরন ২০২০ অনুষ্ঠিত
পরবর্তী নিবন্ধশুধু তোমার -কবি শাহারা খান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে