কবি শাহিনা খাতুন‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
444
Shaheena Ronju

কবি শাহিনা খাতুন‘এর একগুচ্ছ কবিতা

তোমার নয়

হয়তো তুমি চাওনি তবু
ভাল্লাগেনার দিন আসে
দিবারাত্রি চাইছো তবু
ভালো লাগার দিন আসে না।
তোমার দেহ তোমার নয়
তোমার মনও অন্য কারো
সকল দোষে দুষ্ট তুমি
বিধির বিধান মেনে নাও।
ছোট্ট জীবন প্রহেলিকা
কিছুই বুঝতে পারবেনা
অব্যাহতি চাইতে পার
ক্ষমা কিন্তু মিলবেনা।
তোমার এখতিয়ার খুবই কম
হয়তো ভেবে দেখোনি
ঘোরের মধ্যেই কাটলো সময়
একটিবারও ভাবোনি।

বলে যাও

কিছুই বলার দরকার নেই
বলোনা কিছু
নীরবে আকাশের দিকে চাও
আরও নীরবে নদীর দিকে চাও
আরও গভীরে নীরবে পাহাড় পানে চাও
আর একটু নীরব হতে থাকো
অতঃপর হ্রদয় পানে চাও
কী দেখলে?
বলে যাও হে প্রিয় বলে যাও।

মনের চোখে জল

মনের চোখে জল
দেখতে পেয়েছো কি?
কেমনে দেখবে তুমি
মন যে পাগলা ঘোড়া
ঘুরে বেড়ায় সে যে
দিয়ে তোমায় ফাঁকি।
হয়তো ভুলে গেছো
তোমার অতীত সকল
ভুলে যেতেই পারো
হয়েছে তাতে কী?
লাগাম দিতে পারো
পাগলা ঘোড়ার পায়ে
মনে পড়তে পারে
ভুলে যাওয়া সময়।

২৮/৮/২০২০

তবুও অপেক্ষায় আছি

একটা অর্থবহ আস্ত পৃথিবী
বুকের ভেতর নিয়ে জঙ্গল সাফ করে যাই
ভাষাগুলোর উপর খুব রেগে আছি
রেগে আছি তোমার উপরও
ভালবাসতে শিখাওনি তবু বলছো
ভালবাসিনা তোমায়।
কি করে জানবো তোমায়?
ঐ লাল রঙ আমাকে অলস করেছে
পায়চারি করে করে বছর শেষ হয়ে গেছে
তবুও অপেক্ষায় আছি।

তোমার মতন

ফুলগুলো কবিতার মত ছিলো
জলের বিন্দুটি ছিল ঠিক ফুলের মতন
পাতাটি পাখির মতো ছিলো
প্রজাপতিটি ছিলো ঠিক পাতার মতন।
কিশোরী মেঘের মতো ছিলো
আকাশটা ছিল ঠিক তাহার মতন
সুরটি ঢেউয়ের মতো ছিলো
ঢেউগুলো তোমার মতন।
লুকিয়ে থেকোনা কোথাও আর
একবার অন্তত মুখোমুখি হও
সেই পুরাতন বন্ধুর মতন।

গ্রাসরুট ক্যাফে

কনে দেখার পর্বটি কিছুটা অস্বস্তিকর ছিল
স্বলাজ হবার চেষ্টা ছিল প্রাণপণ
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কোকের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে
আড়চোখে দেখে নিচ্ছিলেন দুজন দু’জনকে।
মেকাপে যা দেখাচ্ছে তাতে সুন্দরী মনে হচ্ছে
কি জানি হয়তো যা দেখেছে তা ভুল
চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের আবছা আলোয়
দেখাটা ঠিক যুৎসই হচ্ছেনা
এসব ভাবতে ভাবতে দুচারটা প্রশ্ন হয়ে যায়।
কী করছেন এখন?
রাস্তায় কি ট্রাফিক ছিল খুব?
কী পছন্দ করেন? গরম না ঠান্ডা?
আজকের আবহাওয়াটা ভালোই, কি বলেন?
একা এসেছেন? আপনার ফেইসবুক আইডিতে কী নাম দেওয়া আছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মেয়েটি আর একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গেছে।
আর একটু ভালো করে দেখে নিতে মন চাইছে
এত উচু করে প্যান্ট পরেছে
মনে হচ্ছে মফস্বল শহর ছেড়ে এই ক’দিন ঢাকায় এসেছে।
এখনো এমন দিন আসেনি যে
ছেলেটাই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে পারে
কিন্তু মেয়েটির খুব ইচ্ছে করছে জেনে নেয়
এ পর্যন্ত কতগুলো প্রেম করেছে?
হিজাব পরা কি ম্যান্ডেটরি?
ঘুরে বেড়াতে পছন্দ কি না?
মাঝে মধ্যে চকবার আইসক্রিম
আর ফুচকা খেতে আপত্তি আছে কি না?
মুন্নীদের বাড়িতে হুটহাট চলে গেলে আপত্তি করবে কি না?
না না এসব ঠিক নয়
তার চেয়ে বরং চুপচাপ বসে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
ওয়েটারের অনুরোধে সম্বিত ফিরে পায় মুন
কী খাবেন থাই নাকি কর্ণ স্যুপ?
ভাই তোমাদের স্পেশাল কিছু নেই?
না স্যার এ মুহূর্তে নেই
যে ছেলেটা স্পেশাল স্যুপ স্যুসি এসব বানাতো
সে কয়েকদিন আগে করোনায় মারা গেছে।
আমি এতক্ষণ ওদের পাশের টেবিলে বসে
ওদের দেখছিলাম আর আধুনিক সম্পর্ক নিয়ে
মনে মনে তুলনামূলক আলোচনা করছিলাম।
হঠাৎ মনে হলো একটা দুরন্ত স্বভাবের যুবক
যে শ্রেষ্ঠ শেফ হবে বলে স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছিল
কতশত পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে
গ্রাসরুট ক্যাফের শেফ হতে পারা
শ্রমসাধ্য সব তবুও কে এফ সি ম্যাগডোনান্সের মতো
কিছু একটা হতেও পারে একসময়
এসব স্বপ্ন বুকে নিয়ে আজমল এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস।

হায় হোসাইন

ঐ দূরে কাছে আজানের ধ্বনি শোনা যায়
হাইয়ালাসসালাহ হাইয়ালালফালাহ বলে ডাকে
রাস্তায় নিয়নের আলোগুলো এইমাত্র নিভে গেছে
আর মন হয়ে গেছে কারবালা প্রান্তর।
সেখানে এখন বসন্তকাল, ফুলের বাহার
নানা রঙা ফুল, মসজিদের মিনার
আর নরনারীর চোখের জল দেখা যায় সবখানে
নয়নাভিরাম মসজিদ চত্বরের আলোয় দুদন্ড বসতে ইচ্ছে করে
এখনো রেলগাড়ি বাস আর গাধার গাড়ি চলে,
হোসাইনকে ভালবেসে যে পথিক আসে বহুদূর থেকে
এ শহর মুহূর্তে তাকে ভালবেসে ফেলে।
পথের দুই ধারে খাবার নিয়ে বসে আছে বালক
তার মুখে শিশু আসগরের ছায়া লেগে আছে।
ফোরাতের জলে আজও লাল রঙ
গভীর রাতেও কেউ না কেউ কেঁদে চলে অবিরাম।
বিষাদের ছোয়া পেতে অসংখ্য প্রেমী বসে থাকে
দুই হাতে জল নিয়ে চোখে মুখে ছিটিয়ে দেখো একবার।
চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে
ঐ দুরে আল্লাহু আকবর ধ্বনির সাথে মিশে আছে বাহাত্তর জন
এখনো আকাশ বাতাস কাঁদে বলে হায় হোসাইন হায় হোসাইন।

Advertisement
উৎসShaheena Ronju
পূর্ববর্তী নিবন্ধনবীনদের এমন কিছু শেখাবেন না, যা বিব্রত করে সবাইকে- নাঈম নিজাম
পরবর্তী নিবন্ধবাউল পথ -দেবাশীষ সরকার‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে