তোমাকে খুঁজি
সুজিত চট্টোপাধ্যায়
আজীবন শুধু তোমাকেই খুঁজি |
মায়ের ঘামে ভেজা শরীরে প্যাঁচানো
হলুদ মাখা আঁচলের আড়ালে , ঐ বুঝি ؛
বাবার ছুটির দিনে
আমায় নিয়ে বসা
শীতের রোদে রাখা তেলের বাটি ,
একটু বড়ো হলে ,
মায়ের রান্না মুসুর ডালে
ফুলকপি আর কইমাছের ঝোলে ,
তৃপ্তি পরিপাটি |
ভালোবাসা۔ ۔۔۔তোমাকেই খুঁজি
আরো একটু যখন বড়ো۔۔۔۔
পেটকাটি চাঁদিয়ালে ,
ড্যাংগুলি আর রয়াল মার্বেলে ,
স্বপনখুড়োর রহস্য সিরিজে
কিংবা টিমটিমে আলোয় পড়া
কোনো ভৌতিক গল্পে
হয়তো নিজেকেই খুঁজি নিজে |
ভালোবাসা ۔۔۔۔তোমাকেই খুঁজি
আরো যখন বেশ একটু বড়ো؛
টিউটোরিয়ালে ۔۔۔
তোমার পিছনে বসে
তোমার শারীরিক বিভঙ্গে ,
ছুঁয়ে দিই হোম টাস্কের খাতা
দেওয়া নেওয়ার ছলে |
ভালোবাসা ۔۔۔۔তোমাকেই খুঁজি
একটুকরো গোলাপ পাঁপড়িতে
হাতে হাতে ফেরা কোনো বইয়ের আবডালে |
হলুদ মলাট বইয়ে শরীর কাঁপে থরোথরো ,
ভালোবাসা ۔۔۔۔এখন আমি বেশ একটু বড়ো|
বলতে পারো۔۔۔ডাকাবুকো আমি
তোমার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই
কেন এতো ভয়ে জড়োসড়ো ?
এখানেও ভালোবাসা ۔۔۔۔আমি তোমাকেই খুঁজি |
ভালোবাসা ۔۔۔۔۔আমি এখন পূর্ণ যৌবনে
ভেসে যাই কচুরি পানার মতো
অন্য এক শরীরী নদীর টানে |
শুধু অন্ধকার খুঁজি ؛
অন্ধকারে একটু আধটু নিষিদ্ধ ভেজা ভিজি ؛
কি জানি ! সেখানেও তুমিই আছো বুঝি ?
ভালোবাসা ۔۔۔۔۔আমি বড়ো হয়ে গেছি ,
একটা চাকরী পেয়েছি বছর কয়েক হোলো ۔۔۔۔۔
আত্মীয় পরিজন দোসর খোঁজে
সুখ ভ’রে দেবে জীবনের ভাঁজে ভাঁজে ,
ভালোবাসা ۔۔۔۔” সময় হয়েছে , দোর খোলো “|
মধুচন্দ্রিমায় ۔۔۔۔ ভালোবাসা তোমাকেই খুঁজি
কচিমুখের দুধগন্ধে ,আধোবুলিতে ,
স্কুল ইউনিফর্ম ,জলের বোতলে ,
কচি আঙুলের ভরসা মাখানো হাতে ,
সে আঙুল একসময় ছেড়ে যায়
অন্য কোনো ঘরে , অন্য কারো সাথে |
ভালোবাসা۔۔۔۔۔۔ বৃদ্ধ হয়েছি আমি ؛
সংসারের কাছে এখন ভীষণই কমদামী |
মৃত্যূ খুঁজি ؛ নাকি খুঁজি তোমাকেই ?
একবার ঘন্টা বাজাও ডাক পিয়নের মতো |
তোমাকেই দিয়ে যাবো
তুলে রাখা সুখস্মৃতি যতো ||
কবিতা পণ্য নয়
সুজিত চট্টোপাধ্যায়
কবিতা আমার ‘ইজের’ পড়ে না আর
কবিতা এখন হাতে পায়ে বেশ বড়ো|
কবিতা এখন খারাপ স্পর্শ বোঝে ,
তেমন বুঝলে ভয়ে হয় জড়োসড়ো |
কবিতা এখন থাকে না ‘আদূর ‘ গায়ে
চানঘরেতেও পোশাক জড়িয়ে থাকে |
কবিতা এখন বোঝে যে অনেক কিছু
খুব প্রয়োজনে হাত দিয়ে বুক ঢাকে |
কবিতা এখন চোরা চাউনিও বোঝে ,
উপহার ছলে কে কখন সুযোগ খোঁজে ?
কবিতা এখন শেখে ‘ মার্শাল আর্ট ‘,
কমনীয়তাকে রাখে সে শিকেয় তুলে
যদি খুঁজে পায় তেমন দুষ্টু হাত
মুচড়ে দেবে সে , স্থান কাল সব ভুলে |
সাবধান হও কবিতা দুষ্কৃতীরা !
আমার কবিতা আর দুর্বল নয় |
ছোটো ছোটো আরো শব্দকে জড়ো করে
গড়ছে প্রাচীর ,গড়ছে এক বলয় |
কবিতা ‘ সৃষ্টি ‘, কবিতা পণ্য নয় ۔۔۔۔
কবিতা এখন নির্ভীক , নির্ভয় ؛
কবিতাকে নিয়ে বেসাতি চিন্তা
এবার বন্ধ করো |
মুনাফালোভীরা অনেক তো হোলো
নাহয় এবার কবিতার হাত ছাড়ো ؛
তোমার জন্য আরো কতো কিছু আছে ,
সেসব কিছুতে চেষ্টা করতে পারো |