করোনা কাল ও এরের ঈদ- রেজাউল করিম খান

0
576
Rezaul

করোনা কাল ও এরের ঈদ- রেজাউল করিম খান

এবার যে ঈদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পূর্বের কোনও ঈদের সঙ্গেই তা মেলানো যাবে না। জীবিত শতবর্ষী মানুষও এমন ঈদ কখনই দেখেন নি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতিজনক পরিস্থিতির মধ্যে সীমিতভাবে পালিত হবে ঈদ। এবার আরেকটি বিপদ বাংলাদেশের মানুষকে বিপর্যস্ত করে গেলো, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। শুধু দক্ষিণাঞ্চলই নয়, কমবেশি ক্ষতি হয়েছে সারাদেশেই। এখান থেকে উঠে দাঁড়ানো অনেক চাষির পক্ষেই কঠিন হবে। তবুও শ্রমজীবী মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। ঐসমস্ত পরিবারে এবার ঈদ এসেছে অভিশাপ হয়ে। সরকার তার নিয়মিত বুলেটিনে বলবে, ক্ষতিগ্রস্থদের সবরকম সহায়তা দেয়া হবে। সেই সহায়তা কে কতটুকু পাবে, অতীতে আমরা তা দেখেছি। ঐ ভেঙে পড়া মানুষটির কাছে গিয়ে কেউ কি বলবে, ‘আবার হাল ধরো ভাই, আমরা তোমার পাশে আছি।’
মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম ঈদ। কিন্তু বাঙালি মুসলমানদের জন্য এটি শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, সামাজিক আচারও বটে। মধ্য রমজানের পর থেকেই চলতে থাকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। পরিবারের সকল সদস্য, বিশেষ করে-শিশুদের আবদার মেটাতে নিম্ন আয়ের উপার্জনক্ষম মানুষটির কালঘাম ছুটে যায়। তারপরও উৎসব পালনের জন্য সাধ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণে ত্রুটি রাখতে চায় না। কিনে নেয় জামা-কাপড়-জুতো, মেয়েদের নানা টুকিটাকি জিনিস। খাবারের মধ্যেও থাকে বৈচিত্র্য। পোলাও-মাংস-শেমাই তো আবশ্যিক অনুসঙ্গ, তার সঙ্গে থাকে পিঠা পয়েসসহ নানা প্রকার মিষ্টান্ন ও দই। এসব কেবল পরিবারের জন্য নয়, অতিথি আপ্যায়ন ও ভোজনেও তৃপ্তি মেলে।
পরিবারের সকলের সাথে ঈদ উদযাপন করা বাংলার মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তবে কিছুটা কম। স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফেরার দুর্নীবার আকাক্সক্ষা একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ঠিক এমনভাবেই আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রাণ বাঁচানোর জন্য মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গেছে নিরাপদ স্থানে। তবে পার্থক্য এই যে, তখন মৃত্যু পেছনে তাড়া করছিল, এখন মানুষ মৃত্যুকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে। তখন শত্রু ছিলো দৃশ্যমান, এখন অদৃশ্য। তখন মৃত্যুভয় সত্বেও কৌশল ও প্রতিরোধ ছিল, এখন নানা কৌশলে মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তখন সরকার ছিলো বাঙালি হত্যায় কঠোর অবস্থানে, এখন মানুষের মৃত্যু সরকারের কাছে সংখ্যা মাত্র।
দেশে করোনাভাইরাস আগমনের শুরু থেকেই সরকারের নানা সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছে। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও অনেক বিষয়ে একমত হতে পারেন নি। পোশাক শিল্প মালিকদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের হয়রানি, চাকরিচ্যুতি, বেতন না দেয়া, হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা, শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো প্রভৃতি সিদ্ধান্তে ওরা ভীত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে ধনীদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। সংক্রমণের আশঙ্কা সত্বেও মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে। সরকার ঘোষণা করেছে, ঈদের নামাজও পড়তে হবে মসজিদে! কেনো, শারীরিক দূরত্ব ঠিক রেখে মাঠে পড়লে ক্ষতি কি খুব বেশি হবে? আজ সৌদি আরবে ঈদ পালিত হয়েছে। আমরা কেনো আজ ঈদের নামাজ পড়লাম না। গতকাল কানাডার মুসলমানরা ঈদের নামাজ পড়লো কিভাবে? শুনলাম সৌদিতেও মসজিদ বন্ধ ছিলো। আমরা তো অনেক বিষয়েই তাদেরকে অনুসরণ করি, এক্ষেত্রে নয় কেনো? জানি এইসব প্রশ্নের জবাব মিলবে না।
পরিশেষে বলি, আয়-রোজগার যাই হোক, বাঙালি উৎসবের আগে কড়ায়-গন্ডায় হিসেব মেলাতে বসে না। পালন করে আবেগ দিয়ে। এখানে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা প্রাধান্য পায়। ঋণ করে হলেও প্রিয়জনের প্রয়োজন মেটাতে কার্পণ্য করে না। আগেই বলেছি, বাঙালি মুসলমানের কাছে ঈদ শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, সামাজিক উৎসবও বটে। কিন্তু এবার ঘরে থেকেই ছোট-বড় সকলে সেই উৎসবে সাড়ম্বরে অংশগ্রহণ করুন। আনন্দ ভাগ করে নিন সবাই।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের লালপুরে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকরোনা যুদ্ধে জয়ী সিংড়ার ৪ টি পরিবারকে ফূলের শুভেচ্ছায় ইউএনও

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে