কার নিরাপত্তায় ডিজিটাল আইন?- আমীন আল রশীদ

0
311
আমীন আল রশীদ

কার নিরাপত্তায় ডিজিটাল আইন?- আমীন আল রশীদ

* করোনা মহামারির সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলারও মহামারি শুরু হয়েছে।

* দেশের আর কোনো আইনের এমন অপপ্রয়োগ (মূলত এটাই প্রয়োগ) দেখা যায়নি।

* এই আইনটি পাশের পরে সরকারের তরফে বারবারই বলা হয়েছিল যে, এই আইনে সাংবাদিকরা টার্গেট নন বা সাংবাদিকরা এই আইনের ভিকটিম হবেন না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রকোপ শুরুর পরে এই বিতর্কিত আইনে যত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও ছাত্র।

* শুধু ডিজিটাল আইনের মামলায় গ্রেপ্তারেই শেষ নয়, দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে। ফলে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে বা যে প্রশ্নটি শুরু থেকেই জনমনে খুব জোরালোভাবেই ছিল তা হচ্ছে, কার নিরাপত্তায় ডিজিটাল আইন?

* আইনজীবী-সাংবাদিক-অ্যাক্টিভিস্ট ও বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন যে, এই আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তার কোনো সংজ্ঞা নেই। ফলে রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিক যেকোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করতে পারছেন এবং এ আইনের এমনই জাদুকরি ক্ষমতা যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার সাথে সাথেই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আবার গ্রেপ্তার হলে সহজে তার জামিনও হয় না।

* তার মানে এই আইনে সচেতনভাবেই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা’র বিষযয়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে যাতে যেকোনো সময় চাইলে যেকাউকে ধরা যায়।

* উপরন্তু, এই আইনে এ যাবত যতগুলো মামলা হয়েছে তার অধিকাংশই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো বক্তব্য/মতামত অথবা গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশের জেরে কোনো না কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তির মানহানির অভিযোগে। অথচ মানহানির প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশের প্রচলিত দণ্ডবিধিতেই (৪৯৯ ধারা) বিধান রয়েছে।

* তাহলে কারো মানহানি হলে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছেন কেন? এই আইনটি বেশি শক্তিশালী এবং অধিকতর ভীতিসঞ্চারকারী বলে? দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি মামলা করলে পুলিশ তৎক্ষণাত কাউকে গ্রেপ্তার করে না বা আদালত সহজে জামিন দিয়ে দেন বলে?

* যার মানহানি হয়, যদি তিনি জীবিত হন তাহলে মামলা করার কথা তার নিজের। কোনো মৃত ব্যক্তির মানহানি হলে তার পক্ষে অন্য কেউ মামলা করতে পারেন। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ যাবত যতগুলো মামলা হয়েছে, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, তার বাদী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিজে নন। বরং তার পক্ষে অন্য কেউ মামলা করেছেন। অর্থাৎ এখানে শুধু মামলা করাই নয়, বরং ক্ষমতা দেখানোরও একটা বিষয় কাজ করে।

* ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ যাবত যেসব অভিযোগে মামলা হয়েছে, তার অধিকাংশই দুর্বল। কিন্তু এসব দুর্বল অভিযোগে পুলিশ কেন মামলা নিলো, সে প্রশ্নও আছে। তার মানে এই অভিযোগে মামলা নেয়ার ব্যাপারে পুলিশের উপরে ‘উপর মহ ‘ থেকেও চাপ থাকে।

* কোনো পত্রিকা বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদের ব্যাপাারে কারো আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদলিপি পাঠানো এমনকি প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ারও বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব না করে সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে বস্তুত সংবাদমাধ্যমকেও চাপে ফেলা হয়েছে।

উৎস- আমীন আল রশীদ ভাইয়ের ফেসবুক পোস্ট থেকে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচু কাকার প্রেম -দেবাশীষ সরকার‘এর গল্প
পরবর্তী নিবন্ধশোক সংবাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে