কৃষ্ণচূড়া সংকটে পুষ্পিত নাটোর

0
1943
nATORE KANTHO

খন্দকার মাহাবুবুর রহমান : একসময় নাটোর শহর জুড়ে বিভিন্ন ফুলের সমাহার ছিল।বিশেষ করে বেশি দৃষ্টি আকর্ষন করতো কৃষ্ণচূড়া। স্বজন সমাবেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০০২ সালে নাটোর শহরে রোপণ করা হয়েছিল প্রায় দুই হাজার পুষ্প বৃক্ষ।

সম্প্রতি সড়ক সম্প্রসারণের কারণে গাছগুলো কাটা পড়েছে ফলে পুষ্পশূন্য হয়েছে নাটোর শহর।পৌর মাতা বলছেন, পৌর এলাকার মধ্যে নতুন করে আবার কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপন করা হবে।আর নাটোর জেলা বন বিভাগ বিনামূল্যে চারা সরবরাহ করতে চাইলেন।

নাটোর-ঢাকা মহাসড়ক. নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক ও নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশে প্রচুর কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল, যা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে।আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক গাছ উপড়ে গিয়েছে।বর্তমানে নাটোর-বগুড়া সড়ক প্রশস্তকরণের কারণে অনেক গাছ কাটা পড়েছে।

তবে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশে এখনো চোখে পড়ে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ।বিগত দিনগুলিতে নাটোর শহরের ভিতরে যে সমস্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ ছিলো সড়ক সম্প্রসারনের কারণে প্রায় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে নাটোর শহরের মধ্যে তেমনভাবে আর দেখা যায়না কৃষ্ণচূড়া।

নাটোরের বৃক্ষপ্রেমিক রিংকু রাহী জানান, যতদূর মনে পড়ে ২০০২ সালে ‘প্রস্ফুটিত নাটোর’নামে একটি প্রকল্পে নাটোরের শোভা বর্ধন করতে নাটোর শহরের ভেতরে এবং মহাসড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপণ করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক প্রদীপ সরকার জানান, নাটোর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ও শহরের ভেতরে বেশকিছু কৃষ্ণচূড়ার গাছ ছিল যা মনমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করত এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করত।সম্প্রতি সড়ক সম্প্রসারণের কারণে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে তবে নতুন ভাবে আবার কৃষ্ণচূড়ার গাছ রোপন করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ’স্বজন সমাবেশে’এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবন হোসেন জানান, নাটোর রাজ রাজার অঞ্চল। রাজকীয় সময় থেকেই ফুলে ফলে সাজানো ছিল নাটোর।স্বাধীনতার পরে রাজকীয় সেই ফুলের সমাহারে কমতি ঘটে।২০০২ সালে স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে সেই ফুলের ঘাটতি পূরণ করতে দুই হাজার ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল নাটোর শহরের ভেতরে।

তিনি আরো জানান, শহর উন্নয়নের দ্রুত প্রয়োজন ছিল আর সেই প্রয়োজনেই কাটা হয়েছে ফুলের গাছগুলো। সরকারিভাবে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে পুনরায় নাটোর শহরের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ফুলের চারা রোপণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা জানান, মানুষ এখন ফলজ বৃক্ষের দিকে ঝুঁকেছে।তাই ব্যক্তি উদ্যোগে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় যে গাছগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা গ্রহণ করতে বিমুখ হচ্ছেন মানুষ।এখন সরকারিভাবে এই সমস্ত শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ রোপন করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

জেলা সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদুজ্জামান জানান, ‘প্রস্ফুটিত নাটোর’ ’প্রকল্পটি আমাদের ছিল না।আমরা কেবল চারা সরবরাহ করেছিলাম।কাজটি নাটোর পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছিল।পৌরসভা যদি আমাদের কাছে চারা নেয় অবশ্যই আমরা বিনামূল্যে সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছি’ বলে জানালেন তিনি।

পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জানান, উন্নয়নের স্বার্থেই শোভাবর্ধনের এই কৃষ্ণচূড়া গাছ গুলো কাটা হয়েছে,তবে বর্ষা মৌসুমে নতুন করে শহরের ভিতরে কৃষ্ণচূড়ার গাছ রোপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানালেন।

নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের বোটানিক বিভাগের প্রভাষক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার।এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়।ভারতবর্ষে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে।তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন।প্রথম মুকুল ধরার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রঙ।তরুরাজ্যে এত উজ্জ্বল রঙ দুর্লভ।

ফুলের পাপড়ির রঙ গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ, হালকা হলুদ হয়ে থাকে।প্রস্ফুটিত ফুলের ব্যাস ২-৩ ইঞ্চি।বহিরাবরণ সবুজ।ভেতরের অংশ রক্তিম।কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত।পাপড়ি প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে।

কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট।প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা।২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট।কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া।এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত।একে গুলমোহর নামেও ডাকা হয়।বহুকাল ধরে আছে বাংলাদেশে।ধারণা করা হয়, কৃষ্ণচূড়া ভারত উপমহাদেশে এসেছে তিন থেকে চারশ বছর আগে।

নাটোর আবারও আগের মতন কৃষ্ণচূড়া সহ বিভিন্ন ফুলে ফুলে রক্তিম আভা নিয়ে সাজবে।নাটোর আবারও বছরজুড়ে সবুজর সমারহে ভরে থাকবে।গাছে গাছে মুখোর থাকবে পাখির কলতানে।সৌন্দর্য বর্ধণের পাশাপাশি নাটোর হবে অক্সিজেনের কারখানা।

কর্মকর্তার প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এমন প্রত্যাশা নাটোরের সচেতন মহল সহ বৃক্ষপ্রেমীদের।

Advertisement
উৎসMahabub Khandakar
পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলা টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
পরবর্তী নিবন্ধনাটোর জেলা প্রশাসকের দীর্ঘায়ু কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে