গল্প : পিরতিশোধ -গল্পকার : জেসমিন আক্তার

0
517
Jesmin Akter

গল্প : পিরতিশোধ

গল্পকার : জেসমিন আক্তার

জেসমিন আক্তার : গ্যাছে রাইতে বাবায় মোর মায়রে তালাক দেছে। মা’র লগে মুই যাইতে চাইছালাম। বাবায় চুলের মুডি ধইরা টানতে টানতে মোরে ঘরে লইয়াইছে।। আইন মাফিক মুই বোলে হ্যার মাইয়া, মোরে লইয়া যাওয়োনের ক্ষেমতা বোলে মা’র নাই। এই হগোল আইন ফাইন মুই কেম্মে জানমু!

আন্দারের মধ্যে হেই রাইতেই মায়রে ঘর দিয়া হরাইয়া দেছে।হারা রাইত মোর ঘুম আহে নাই। বাইডারে কোলের মধ্যে লইয়া হুইয়া রইছি। এট্টু পর পর শফিকুল কাইন্দা ওঠছে। মা’র উম কী মুই দেতে পারি! মায় কী নানাগ বাড়তে গেছে! অন্য কোনহানে গ্যাছে? আন্দার রাইতে কই গ্যাছে মায়? অহোন বেইল মাঝ আসমানে, মা’র কোন সোংবাদ পাইলাম না।

বাবার ডরে কানতেও পারিনা। ছোড বাইডা বেইন্নাহালে দুয়ারে বইয়া কান্নাকাডি হরলে বাবায় উডান তোন আইয়া হোগার উপ্রে দেয় এক লাতি। ডরে মুই চুলাহালে যাইয়া চুলায় জাল ঠ্যালতে থাহি। পাডা লাইচ্ছা ডাইল বাডি, মরিচ বাডি। পুহাইর ঘাটে থালবাডি দুইতে গেলে পূবের ঘরের চাচিয়াম্মায় জিগায়- ও সরবানু, তোর মার কোন সোংবাদ পাইছস? মুই একফির তার দিকে চাইয়া হোঙ্কের দিকে মাতাডা নোয়াইয়া ছালি দিয়া পাইল্লা মাজতে থাহি। মুই যানি হোনতেই পাই নাই।

চাচিয়াম্মায় এল্লা এল্লাই কইতে লাগল- মাইয়া মানষের অতো জিদ থাহা বালোনা। এট্টু লেহাপড়া জানে বুইল্লা জামাইর মোহেমোহে কতা কওয়া?ব্যাডা মানুষ রুজিরোজগার হরে এট্টু আদট্টু দোষ তো থাকবেই। গাও ই যদি গরম না অয় তয় কাম হরবে ক্যাম্মে! লেহাপড়ার গরমে ব্যাডারে পাত্তাই দেয়না। কিরপাইক্কা তুই এইগুলা করবি!
তাত্তারি থালাবাডি লইয়া ঘরে ফিরি। শফিকুল তহোনও হেঁচকি দিতাছে। ওরে কোলে হইররা পাজদুয়ারে যাইতেই হুনি বাবায় কার লগে জানি কতা কইতাছে–

– মাদবর সাব আম্মে কোন চিন্তা হইরেন না। মাইয়া মোর আতে আছে।দেখতে চাইলে ব্যবস্থা হরতে পারমু।
– দেখতে ফর্সা তো? বয়স কিন্তু অল্প হইতে হইবে। মোগো গ্যারাম বাদ দিয়া দেইখেন। সরবানুর মা’র লাহান জানি চতুর না অয়। মাগির ত্যাজ কত মোর দারে কৌফিয়ত চায়! এহোন বোজবেয়ানে।
দুইজনে মিল্লা হাহা কইরা অসতে থাহে….
হুইন্না আমার শইল্ডা জ্বইল্যা ওডে। নিজের বয়স পঞ্চাশের উপ্রে , হ্যায় কি না মাইয়ার বয়সি বিয়ার মাইয়া খোঁজে।

কাইল মাত্র মায় রে খ্যাদাইয়া দিল আর আইজ ই বাবায় বিয়ার লাইগা রায়বার ধরল! মার লাইগা পরাণ্ডার মধ্যে হাহাকার কইরা ওডে। মায় তো কারো খ্যেতি হরে নাই, তয় আল্লাহ ক্যান মায়রে শাস্তি দিতাছে? মাইয়া মাইনষের জেবনডা কি খালি কষ্টের!

-বিয়া হরবা? হরামু তোমারে বিয়া! নিজের মাইয়া বিয়ার যুগ্যি, ছোড পোলা আছে। হেইদিকে তোমার চৌক নাই?
খাড়াও বুইড়া বাম! মুই হাতেইম্মার লগে লডরবডর শুরু হরমুয়ানে,খালি এড্ডু চোহের ইশারা। আর কিচ্ছু লাগবে না। দেহি তুমি কী হরো! তোমার চির শত্রুর পোলারেই মুই বিয়া হরমু। মার উপ্রে যে অইত্যাচার হরলা মোর লগে হ্যা পারবানা। পিরতিশোধ মুই নিমুই।

আড থাইকা ফিররা মাদবার সাব সরবানুরে আইতনা ঘরে বোলায়। বাপের মুখটা দেখতে মন না চাইলেও সরবানু আইতনাঘরের পর্দা ধইররা খাড়ায়।
-কন কী কইবেন?

মাদবার সাব একটু আমতা আমতা হরে, যেয়ারে গলা খাকানি দিয়া কয়– সোংসার চালাইতে তো মানুষ লাগে! তোর তো পড়াল্যাহা আছে। পেরতেক দিন তো স্কুল খইত দিতে পারবিনা। হোঙ্কে ফাইনাল পরিক্ষা। তুই বড় হইছোছ। অহোন এইরম আউলাজাউলা থাহা কী মানায়! এরম থাকতে তো জুইত লাগেনা।
এই কতা কইয়া মাদবর সাব এড্ডু থামেন। আবার কইতে থাহেন—ভাব-ছা-লাম তোগো লইগ্যা একজন মা আনলে কেমন অহ?

কামকাইজও করল আর তোরাও একটা মা পাইলি!
ইচ্ছা হইতাছে বাহের মুহের উপ্রে একদলা ছ্যাপ ছিডাইয়া দেই। এই অজাত মোর বাপ! মায়েরে হারা জেবন কষ্ট দেছে। ঘরে কোন কামের ছ্যেরি রাহা যায়নায়। অল্প বয়সি মায়া দেখলেই কুত্তার লাহান জীব টা ছোঁকছোঁক হরে।ঘরের বাত্তি লিবাইলেই গোন্দ হুইক্কা হুইক্কা ছ্যেরির নরম জাগাগুলা তোগাইতে থাহে।

কতো আতেপায় ধরছে মায়! একফির তো আমার হোঙ্কেই পইড়া গেছে, দেহি- কামের ছ্যেড়িরে জাবড়াইয়া ধরছে। হেই থাইক্যা মায় আর কামের বিডি রাহেনা। সরবানু থম ধইরা থাহে কতক্ষুণ। মনের হক্কল সাহস এক কইরা কয়– বাবা আম্মে যেই দিন বিয়া হরবেন হেইদিন মোর বিয়ার তারিখও ঠিক হইরেন। খাঁ বাড়ির হাতেইম্মারে মোর পছন্দ। অসুবিধা কী? বাপ বিডিতে এক লগে, একদিনে বিয়া হইররা ফালামু! কী কন বাবা? বালা অইবো না?

[আঞ্চলিকতা ঠিক রাখতে যেয়ে বানানে কিছুটা বিভ্রাট ঘটেছে ]

Advertisement
উৎসJesmin Akter
পূর্ববর্তী নিবন্ধশোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানালেন মেয়র জলি
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে শেখ কামালের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে