পরের বউ (পর্ব-৫) (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)-তন্ময় ইমরান
এক.
একজন ধনী লোকের পরমা সুন্দরী এক বউ ছিল। কিন্তু ধনী হওয়ার জন্য তো প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কাজেই সে একেবারেই বউকে সময় দিতে পারতো না। ওদিকে লোকটার বউ তাকে সন্দেহ করা শুরু করলো- নিশ্চয়ই তার বর অন্য কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়েছে। অন্য কোনো মেয়ে তার চোখে এখন বেশি সুন্দর৷
তাই ওই পরমা সুন্দরী স্ত্রী সবচেয়ে বড় জাদুকরের কাছে গেল৷ গিয়ে বললো- তাকে একটা জাদুর আয়না বানিয়ে দিতে। আয়নাটা হবে এমন যে যখনই সে জিজ্ঞাসা করবে তার স্বামী চোখে সবচেয়ে সুন্দর কে- উত্তর পেয়ে যাবে৷ অর্থাৎ আয়নায় যেন স্বামীর মনে যার চেহারা থাকবে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে।
জাদুকর মাসখানেক সময় নিলেন। যেহেতু ধনীর স্ত্রীর অর্ডার সেহেতু বিপুল সম্মানীর হাতছানি পাওয়া গেল।
বিভিন্ন প্রান্তের জাদুকরদের এক করে তিনি ওই পরমা সুন্দরী স্ত্রীর ফরমায়েশ অনুযায়ী একটা আয়না তৈরি করতে পারলেন।
প্লাটিনামের পাত দিয়ে আয়নার চারপাশে সুন্দর ফ্রেম করা। ছয়ফিট লম্বা।
প্রচুর অর্থ খরচ করে কেনা আয়নাটির ঠাঁই হলো বাড়ির বেডরুম। আয়নায় সঠিক উত্তর পেতে একটাই শর্ত- ওই ধনীলোকের প্রতিচ্ছবি প্রতিদিন একবার করে পড়তে হবে৷ যেদিন লোকটার প্রতিচ্ছবি পড়বে না, সেদিন আয়নাও তার মন পড়তে পারবে না। বলতে পারবে না- তার মনে ঠিক কোন সুন্দর নারীর প্রতিচ্ছবি গেঁথে রয়েছে।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যেকোন উছিলায় স্বামীটিকে আয়নার সামনে দাঁড় করাতো তার স্ত্রী। তারপর লোকটা না থাকা অবস্থায় আয়নাকে জিজ্ঞাসা করতো- আয়না, আয়না, বলো তো ওর চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুন্দর এবং কামনার কে?
প্রশ্ন করার পর আয়না প্রায় প্রতিদিনই কিছু সময়ের জন্য ফাঁকা হয়ে যেত৷ যেন সে একটা জটিল ক্যালকুলেশনে ব্যস্ত। তারপর একটা প্রতিচ্ছবি তাতে ভেসে উঠতো। বলাই বাহুল্য সেটা আর কারো নয়, স্বয়ং পরমা সুন্দরী স্ত্রীরই৷
এভাবে বছর গড়িয়ে গেল। সত্যি ধনী লোকটা নিজের স্ত্রী ছাড়া আর কারো কথা ভাবতো না। পরমা সুন্দরীও নিশ্চিন্ত ছিল। একসময় সে আয়নাকে জিজ্ঞাসা করাও ছেড়ে দিল৷
তবে একদিন ধনী লোকের শার্টের গায়ে সে একটা চুল পেল । বেশি বড় চুল নয়। বব কাটের সিল্কি চুল। আবার তার সন্দেহ দেখা দিল৷ এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার সে পুরনো প্রশ্ন করলো- আয়না, আয়না বলো তো, ওর চোখে সবচেয়ে সুন্দর ও কামনার কে?
আয়না যেন কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। তারপর হঠাৎ যে চেহারা ভেসে উঠলো- সেটা আর কারো নয়, লোকটার অফিসের নতুন ছোকরা পিয়নটার!
***
গল্পের শেষলাইন পড়ে তন্দ্রা হো হো করে জোরে হেসে উঠলো৷ হাসতে হাসতে বিষম খেল৷ সম্ভবত তন্দ্রার হাসি শুনেই পাশের রুম থেকে ছুটে এলো স্নিগ্ধা৷ সে দেখলো তন্দ্রার চোখে পানি এসে গেছে।
– কিরে জোক পড়লি, না ট্রল দেখলি?
– না আপু।
– একজনের লেখা গল্প পড়ে হেসেছি। ভদ্রলোকের লেখায় সবসময় একটা লাস্ট লাইন টুইস্ট থাকে। নে তুইও পড়। আমি ওয়াশরুম থেকে আসি।
স্নিগ্ধার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে তন্দ্রা ওয়াশরুমে যায়। খুব ছোট একটা হাফপ্যান্ট পরেছে। কালো ট্যাংটপ। হিপের মাংসল অংশ রীতিমত কোনো যুবকের এক হাজার এক রাত হারাম করে দিতে পারে৷ বোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্নিগ্ধা। সেও নিজেও আসলে এতোটাই সুন্দর৷ অথচ দুজনের সৌন্দর্যের ধাঁচ আলাদা৷
তন্দ্রার মতো বয়সে স্নিগ্ধা দেশের প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে এতোটা ছোট পোশাক পরার সাহসই পেত না, এমনকি বেডরুমেও৷
স্নিগ্ধা গল্পটা খুব দ্রুত শেষ করে। সেও তন্দ্রার মত বেশ কিছুক্ষণ হাসে।
তারপর হঠাৎই আনমনে তন্দ্রার ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে যায়। আর চোখে পড়ে তন্দ্রার নুড, সেমি নুড অল্পকিছু ছবি। বেশ আর্টিস্টিক। এর বেশিরভাগই সে নিজে তোলেনি। অন্য কেউ তুলেছে৷
আরো ঘাটাঘাটির প্রবল ইচ্ছা পেয়ে বসে৷ তারপর ওয়াশরুমের পানির শব্দ হঠাৎ তাকে লজ্জা দেয়। ছি, বোনের ফোন সে ঘাটছে কেন! তন্দ্রা যে পোশাকে ও চলনে ডেসপারেট এটা তো সে গত দুই-চারদিনে বুঝেই গেছে। ক্লিভেজ বের হলে কখনো বিব্রত হয় না। ঝরনার পানিতে দিব্যি শর্টস আর ট্যাংটপ পরে নেমে যেতে পারে। চোলাই মদ জোগাড় করতে পারে নিমিষেই। তার যে সেমি নুড আর নুড ছবি থাকতে পারে এটাই তো স্বাভাবিক।
তারপরই তার মাথায় আসে- আচ্ছা জামিল যে আসবে, তখন তন্দ্রাকে এমন পোশাকে দেখে কেমন অনুভূতি হবে তার? সেই বোধ কামনার? নাকি প্রেমের? নাকি নিছক ভালো লাগার?
তন্দ্রা বেরিয়ে আসার পর তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে বলে- আপু শোন তোর জামিল ছেলেটা তো এলো না! ফোন দিয়ে দেখবি নাকি?
– নাহ৷ এলে আসবে। না এলে নাই। ওর খবর কে রাখতে যাচ্ছে। আর আমি তো ডিসাইড করেছি আর ফিরবো না।
– যাহ৷ তোর এখন মাথা গরম। শ্রাবণ ভাইয়া অসম্ভব হ্যান্ডসাম আর ভালো।
– তুই কিভাবে বুঝলি ভালো? তুই তো বাস্তবে দেখিসনি কখনো?
– কেন ফেইসবুক পোস্ট দেখে। সোসাল মিডিয়া দেখে কাউকে হুট করে ভালো বলা বোকামি। আবার ভালো-মন্দ ব্যাপারটা আপেক্ষিক। তবে মাঝেসাঝে যে ফোনে কথা হয় তাতে বুঝেছি নিপাট ভদ্রলোক। তাছাড়া সোসাল মিডিয়ায় অন্তত এটুকু বোঝা যায় কার রুচি কেমন। তোরা দুজন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট একসাথে ডিঅ্যাকটিভ করার পর থেকে অবশ্য ভাইয়ার ফোন এবারই প্রথম এলো! তোদের গল্পটা শোনা হলো না।
– বলবো। তবে তার আগে তোকে একটা সিচুয়েশন দেই। ধর, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনায় পড়ে একটা জঙ্গলের পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। একসাথে খুব অন্ধকারে একটা রাস্তায় হাঁটছে৷ ধর, ছেলেটার পকেটে একটা আলো আছে। কিন্তু সে জ্বালাবে না। কারণ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আলোটা সেখানে আরেকজনের জন্য জ্বালতে হবে। এই অবস্থায় অনেক কষ্ট করে তাদের পথ চলতে হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর মেয়েটা জানে- ছেলেটা আলোটা অন্য কারো জন্য জ্বালবে। যদিও সে থাকবে। তবে আলোটা আসলে ওই বিশেষ মানুষটার জন্য। এদিকে অন্ধকারে পথ চলতে হচ্ছে বলে- দুজনেরই মৃত্যু ভয় আছে। আছে আহত হওয়ার ভয়৷ তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরে খুব ধীরে আগাচ্ছে। মেয়েটার কি উচিত হবে আগানো? ধর মেয়েটা যদি জানে অন্য আরেকটা ছেলে পেছনে আসছে, বড়জোর একদিন পিছিয়ে। যদিও পেছনে থাকা ছেলেটার পরিচয়, স্বভাব ঠিক মতো জানে না। মেয়েটা কি সেই ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করে এখন যার সাথে এগোচ্ছে তাকে নিজের পথে চলতে দেবে? মেয়েটা কিন্তু জানে না পেছনের ছেলেটার জন্যও কেউ নির্দিষ্ট গন্তব্যে অপেক্ষা করছে কিনা! তার কাছেও পকেটে আলো আছে কিনা, যা কেবল সে ওই গন্তব্যের মানুষের জন্যই জমিয়ে রেখেছে! মেয়েটা কী করবে? তুই ভেবে জানাস তো৷
আজকেই বলতে হবে এমন না৷ তুই চিন্তা ভাবনা করে বলবি।
তন্দ্রা মনোযোগ দিয়ে শোনে। তারপর বলে- আপু শোন চল তোর মুড অন করে দেই।
– মানে?
– মানে মনে হলো, তোর মন খারাপ। তিনটা কাজ করতে পারি। দোচুয়ানি গলা পর্যন্ত গিলে দুই বোন সারারাত গল্প করতে পারি। তোর কিছু নুড ছবি তুলে দিতে পারি। নুড ছবি তুললে আমার মন ভালো হয়। আর তিন নম্বরটা হতে পারে আমরা মেঘালয়ের পাশে সাজেক নদীতে একটা দুর্গম অ্যাডভেঞ্চারে যেতে পারি। বনের ভেতরে দুইদিনের পথ। এখানে একটা নতুন সশস্ত্র পাহাড়ি পলিটিক্যাল দল হয়েছে৷ ওদের লিডার আমার পরিচিত। এখানেই আছে গোপনে। আজ রাতেই রওনা হতে পারি। যাবি?
প্রথম পরিকল্পনা আংশিক নিল স্নিগ্ধা। হ্যা চোলাই মদ খাওয়া যেতেই পারে। দ্বিতীয় পরিকল্পনাটা সে ভেবেচিন্তে হাল্কা সায় দিল। আর তৃতীয়টা বাতিল করে দিল।
বেশ কয়েক গ্লাস দোচুয়ানি গেলার পর, ঝিম ঝিম মাথায় কাপড় খুললো স্নিগ্ধা। নানা পোজে ছবি তুলে দিতে থাকলো তন্দ্রা। মাঝে মাঝে ফাজলামি করতে লাগলো। আর্ট ডিরেকশন নিয়ে দুইবোনের মত মাঝে মাঝে অমিল হলো। কিন্তু ভোররাত পর্যন্ত কাটলো অসীম আনন্দে।
ঘুমানোর আগে স্নিগ্ধা ভাব্লো- তার জন্য নগ্ন হওয়া কত সহজ হচ্ছে দিনকেদিন!
দুই.
জামিল রওনা হয়েছিল খাগড়াছড়ির দিকেই। রাঙামাটি হলেও সাজেক যেতে খাগড়াছড়ির পথটাই সহজ এবং বহু ব্যবহৃত। মাঝখানে ঢাকায় একটা স্টপেজ নিল।
ঢাকা তার বাড়ি, প্রিয় শহর। বেড়ে ওঠা, আড্ডা- কত কি! পরতে পরতে স্মৃতি। পল্লবী এক্সটেনশনে বাড়িটার সামনে দাঁড়াতেই মনে হয়ে গেল- আটমাসে জায়গাটা ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷
আসলে পরিবর্তনের ভেতরে থাকলে বোঝা যায় না। যেমন মানুষ নিজেকে তখনই চেনে যখন সে নিজের বাইরে থাকে।
বছর সাতেক আগেও একতলা বাড়িটা মৌ মৌ করতো। তিনবোন, নানা-নানী, আব্বা-আম্মা, দুর্সম্পর্কের নসু ভাই৷ আর গ্রামের লোকজন আসা যাওয়া করতো।
নানা-নানী মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গিয়েছিলেন।
ঘটনাটা এরকম যে নানা সকালে উঠে নাস্তার টেবিলে বললেন- আমি কাল রাতে দেখলাম জোড়া কবর। একটা আমার, আরেকটা এক মহিলার। মহিলা কবরে শুয়েই খুব চেঁচাচ্ছে। আমার কাফনের কাপড়ে নাকি পোড়া গন্ধ!
নানী খেপে উঠলেন- এই লোকটা সবসময় একটা ফালতু বিষয় নিয়ে আলাপ করে।
আব্বা তার গোঁফের ফাঁক দিয়ে মুচকি হাসছিলেন। শ্বশুর-শাশুড়ির খাবার টেবিলের ঝগড়া সম্ভবত তার একমাত্র বিনোদন ছিল। কোনওদিন ঝগড়া না লাগলে নিজে একটা ইস্যু মিনমিনিয়ে তুলতেন। ব্যস সেই ইস্যু ধরে নানা-নানীর ঝগড়া লেগে যেত। আম্মা তখন আব্বার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। আব্বা গোঁফের ফাঁক দিয়ে হাসতেন। আহ আব্বার সেই গোঁফের ফাঁকে ফুটে ওঠা হাসি- কতোদিন দেখা হয় না! কোনদিন দেখা হবে না।
সে যাইহোক মেজ আপা খুনসুটি করে বললো- ওই মহিলা আর কেউ না নানাজান, আমাদের নানী।
নানী গজগজ করে বললেন- বুড়া হয়ে গেছে তাও মহিলা নিয়া স্বপ্ন দেখা ছাড়ে না ব্যাটা…
অন্যসময় আপারাই নানা-নানীর যাবতীয় খেদমত করতেন। প্রয়োজনের জিনিস এগিয়ে দিতেন।
সেদিন দুপুরে নানী কি মনে করে রান্না ঘরে গোসলের পানি গরম করতে গিয়ে শাড়ির আঁচলে আগুন লাগিয়ে ফেললেন। হাসপাতালে নেওয়া হলো। কিন্তু মারাই গেলেন আধঘণ্টা পর।
নানা পাশেই ছিলেন। তাকে কেউ হাসপাতালে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। নানী মারা যাওয়ার পর তার কোনো কান্নাকাটি নাই। কেবল বারবার বলতে লাগলেন- এখন তো তোমার কাফন থেকে পোড়া গন্ধ বের হবে… এখন তো তুমি পুড়ে গেলা… আহারে।
সেই প্রথম জামিল তার কঠোর বাবার চোখ থেকে পানি গড়াতে দেখেছিল। তিনি মুখ কাঠের মতো কঠিন করে রেখেছিলেন৷ কিন্তু জল তো কঠিনের উপর দিয়েই দ্রুত গড়ায়!
হাসপাতাল থেকে নানীর লাশ যখন বের করার প্রক্রিয়া চলছে, নানা তখন নানীর বিছানায় মাথা গুজে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবিষ্কার হলো নানাও মারা গেছেন।
জামিলের জীবন এরপর বদলে গেল৷ নানা-নানী আগে থেকেই মারা গেলে কবর গ্রামে দিতে বলে গিয়েছিলেন। আব্বা-আম্মা, বড় আপা ও ছোট আপা গেল৷
জামিল এইচএসসি পরীক্ষা আর মেজ আপা তার দেখাশোনার জন্য থেকে গেল। সব আয়োজন করে দুর্সম্পর্কের নসু ভাই থেকে গেল, যে কিনা আব্বার এক চাচাত ভাইয়ের ছেলে। নসু ভাইকে আব্বা বাসায় নিয়ে এসেছিলেন তার ১৫ বছর বয়সে। খুব নেশা করারনসু ভাইয়ের মা অর্থাৎ চাচিকে খুন করার পর সেই চাচার দশ বছরের জেল হওয়ায়। জেল থেকে চাচা এখনো বের হননি। বা বের হলেও কেউ তার খোঁজ রাখেনি। সেও কারো খোঁজ রাখেনি।
নসু ভাইকে অবশ্য যেতে চাচ্ছিলেন নানা-নানীর লাশ দাফনে। বাবাই রেখে গেলেন। বাজার সদাই করবে। তাদের একটা দোকান আছে সেটাও তো ফেলে রাখা যায় না। তাছাড়া এবার দীর্ঘদিন পর নানার বাড়িতে যাচ্ছেন এবং তাদের মৃত্যুর পর মায়ের ভাইবোনদের জমিজাতি ভাগবাটোয়ারার ব্যাপারও আছে। থাকতে হবে মাসখানেক৷
সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন কারো ভুল হয় না৷ জামিলের হলো। তার শেষ পরীক্ষার আগে চারদিন গ্যাপ ছিল। জামিল একদিন আগে পরীক্ষা দিতে গেল। যেহেতু ওইদিন তার পরীক্ষা নেই দ্রুতই বাড়ি ফিরে এল। তার কাছে চাবি ছিল।
ঘরে ঢুকেই সে একটু অন্যরকম আওয়াজ পেল। নসু ভাই মেজ আপার ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত চলছে! মেজ আপা পরমানন্দে নসু ভাইকে মুখ খারাপ করে যা তা বলছে। নসু ভাইও উত্তর দিচ্ছে৷ সব বোঝার পর জামিলের উচিত ছিল খোলা দরজা দিয়ে ঘরটাতে উঁকি না দেওয়া। কিন্তু তার ভেতর থেকে কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বললো- দ্যাখ, কখনো তো সামনাসামনি দেখিসনি!
নসু ভাইয়ের বিশাল লিঙ্গ, মেজ আপার নগ্ন দেহ, শিৎকার… জামিলকে অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিল। তারা দুজন জামিলকে ধরে ফেলেছিল। কিন্তু থামেনি। এবং সেই সময়ে বুঝতেও দেয়নি জামক দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে।
পরে তাদের সঙ্গম পর্ব শেষ হলে, জামিল আস্তে করে বের হয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে। তখনো খুনসুটি চলছিল। মেজ আপার নগ্ন দেহে নসু ভাই হাত বোলাচ্ছিল। জামিল আবিষ্কার করেছিল, সে তার কলেজ ইউনিফর্মের খাকি প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। খুব লজ্জা নিয়েই সে বের হয়ে এসেছিল। বাড়ি থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক যেতেও পারছিল না প্যান্ট ভিজিয়েছে বলে। পরে ঠিক করলো একটা চায়ের দোকানে কোনোমতে গিয়ে চা নিতে গিয়ে প্যান্টে ফেলবে। তাতে বেশ একটা অজুহাত দাঁড়াবে৷
পরীক্ষার সময় পার করে বাড়ি এসেছিল। সেরাতে মেজ আপা তার কাছে এসে বলেছিল- শোন জামিল কাউকে বললে নসুকে বের করে দিবে৷ বলিস না কাউকে। আমাদের তো বিয়ে হবে না৷ কিন্তু প্রেমের তো একটা দাবি আছে নাকি!
জামিল ১৮ বছর বয়সে মেজ আপার সেই কঠিন কথা বুঝতে পারেনি। বুঝেছিল সে ধরা পড়ে গেছে। আর এটাও বুঝেছিল- সে যদি পুরো ব্যাপারটা দেখে ওরকম কামাতুর হয়ে না পড়তো, মাঝপথে নসুভাই আর মেজ আপা থামিয়ে দিত সব, তাহলে হয়তো সে সবাইকে বলেই দিত।
তাই হয়তো তারা সেদিন থামেনি। পুরোটা যৌনদৃশ্য দেখার পর, নিজ স্খলনের পর- জামিল নিজেও তো এতে জড়িয়ে গেছে! এটাই হয়তো তারা চাইছিলেন।
এরপরের কয়েকদিন মেজ আপা নসু ভাইয়ের সাথেই রাতে থেকেছে। সম্ভবত এগারো দিনের অসামাজিক সংসার ছিল তাদের। অবশ্য এরপর আপা ও নসু ভাই রাতে দরজা বন্ধই রাখতো।
সবাই বাড়ি ফিরে এলো বারোতম দিন দুপুরে। সেদিনই জানা গেল বড় আপার বিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক জ্ঞাতি খালাত ভাইয়ের সাথে ঠিক হয়েছে। সে এখন দেশেই আছে। এ কয়দিনে বড় আপা ও তার মধ্যে বেশ প্রেম প্রেম ভাব তৈরি হয়েছে। একইদিন বিয়ে ঠিক হয়েছে মেজ আপারও, কানাডা প্রবাসী জমির মামার ছেলের সাথে। সেও দেশে।
জামিল ধাক্কা খায়। অথচ নসু ভাই ও মেজ আপা বেশ নির্বিকার। বরং বিয়ের প্লানে তারা দুজন পরিবারের অন্য সবার সাথে উৎসাহের সাথে যোগ দেয়। মেজ আপা হবু বরের সাথে রাত-বিরাতে ফোনে কথা বলে।
এসময়ই একদিন রাস্তায় কুটুকে কুড়িয়ে পায় জামিল। ছোট একটা কুকুর কুইকুই করে কাঁদছিল। সম্ভবত কেউ ফেলে দিয়ে গেছে। আর পেছনের পায়ে আঘাত পেয়েছে। কেউ মনে হয় বাড়িও দিয়েছে। মানুষ প্রকৃতির তৈরি সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণিটার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব বলে দাবি করে যখন বিধাতা অলক্ষ্যে হাসেন হয়তো!
কুটুকে নিয়ে বাড়ি তো চলে এসেছিল আবেগের বশে। কিন্তু এমন বাচ্চা কুকুর কী খাওয়াবে, কীভাবে রাখবে- কিছুই জানতো না জামিল। রাতের বেলায় নসু ভাই দোকান থেকে ফিরেই কুটুর দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। ছাদে তার রুমের পাশেই একটা শেল্টার হাউজ পরিত্যক্ত জিনিস দিয়ে বানাতে শুরু করলেন। জামিলের কুকুর কাজেই সেও লেগে গেল কাজে। শেল্টার বানানোর সময় মেজ আপা ছাদে এসে তার হবু বরের সাথে ফোনে ইটিসপিটিস করলো। সে সময় জামিল নসু ভাইকে তার জমিয়ে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেললো- তোমরা দুজন কি বিয়ের আগে ভেগে যাবে?
নসু ভাই বললো- কি বলছিস এসব কই ভাগবো?
জামিল নাছোড় বান্দা। বলে- আমাকে অন্তত বলো!
নসু ভাই বলে- আরে নারে পাগল। আমার এই লুঙিটাও তোর বাপের দেওয়া।
জামিল বলে, তোমার কষ্ট হচ্ছে না!
নসু ভাই উত্তর দেয়, এগারোদিন প্রেম করাও যা, একশ এগারো বছরও তা। প্রেম এমন একটা ব্যাপার যাতে স্থায়িত্ব সবসময় একই। সবার জন্যই। খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। সেটা একশ এগারো বছর হলেও প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে খুব অল্পক্ষণ, আবার এগারো দিন হলেও।
কথার প্রকৃত অর্থ বুঝতে না পেরে জামিলের দৃষ্টিতে ভ্যাবলা ভাব ফুটে উঠেছিল নিশ্চয়।
নসু ভাই বলে- ধর এই কুকুরটাকে নিয়ে আসার পর ওর পা ভালো হয়ে গেলে তোর একটা আনন্দ হবে, তাই না!
– হুম।
– দশে কত দিবি?
– দশে দশ দিব সেই আনন্দকে।
– এখন ধর, তুই খুব ভালো রেজাল্ট করে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সাব্জেক্টে পড়তে চাস সেটায় চান্স পেলি। দশে এই আনন্দকে কত দিবি?
– দশে দশই দিব৷
-মানে হচ্ছে তুই দুটোর বেলায় একই আনন্দ পাচ্ছিস তাই তো!
-হুম।
– আমি তোর মেজ আপাকে ১১ দিন পেলেও যে আনন্দ পেয়েছি, একশ এগারো বছর পেলেও তাই পেতাম। হয়তো দীর্ঘ সময়ে আনন্দের মাত্রা কমেও যেতে পারতো। আমি এই এগারোদিনকে দশে দশ দিয়েছি।
বড় আপা ও মেজ আপার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এই দুজনের বিয়ের আসরে গিয়ে ছোট আপাও কট হলেন। কানাডাপ্রবাসী মেজ দুলাভাইয়ের এক বন্ধু এসেছিলেন। সেও কানাডায় সেটেল। দেশে এসেছিলেন মাকে নিয়ে যেতে। বিয়ের আসরে ছোট আপাকে দেখে মুগ্ধ।
একবছর পর ছোট আপার বিয়ে হয়েছিল স্কাইপে।
নসু ভাইয়ের উপর বাড়ির দায়িত্ব ছেড়ে বাবা-মা গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় বছর দুয়েক পর। বড় আপার বাচ্চা হয়া ছিল উপলক্ষ। সেখান থেকে তারা গেলেন কানাডায় মেজ আপা ও ছোট আপার কাছে। সেখানেই হার্ট অ্যাটাক করলেন বাবা।
না হার্ট অ্যাটাকে মারা যাননি তিনি। হাসপাতালে ভর্তির পর চেক আপ করাতে গিয়ে ধরা পড়লো কোলন ক্যান্সার। ব্যস ছয় মাসেই শেষ। মা থেকে গেলেন।
অনার্সের পর বোনেরা টানতে শুরু করলো জামিলকে। জামিল যেহেতু তখন প্রেম করে কাজেই কে যায়! বোনেরা হতাশ হয়ে কথা বলা ছেড়ে দিল। বছর তিনেক জামিল আর নসু ভাই দুজন ছিল এ বাড়িতে। আর হ্যা কুটু ছিল।
কুটুর দুইটা মালিক। এটা নিয়ে কুটু নিজে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যেত। নসু ভাই আর জামিল ইচ্ছা করেই কুটুকে একই সময়ে দুটো নির্দেশ দিত। এটা একটা খেলা। জামিল হয়তো বলতো- কুটু সিট, আর নসু ভাই বলতো- কুটু রান!
কুটু তখন চার পা আকাশের দিকে তুলে চিৎ হয়ে একটা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করতো।
আট মাস পর বাড়ি ফিরলো জামিল। যাওয়ার সময় নসু ভাইয়ের উপর সাত বছর বয়সী বুড়ো কুটুর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল। আজ খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে ঢাকায় ঢুকতেই কেন জানি কুটুর কথাই বেশি মনে হচ্ছিল। নেমে পড়েছে। ভেবেছে রাত সাড়ে ১১টার বাস ধরে যাবে।
নসু ভাই নাকি এখন কুটুকে দোকানেই নিয়ে যায়। তাই তাকে ফোন দিয়েছিল।
নসু ফোন ধরেই বলেছে- তোকে ইচ্ছা করেই এতোদিন ফোন দেইনি। আজ দিতাম। আসা জন্য বলতাম।
– কেন কী হয়েছে?
– এলেই দেখবি। বাড়িতেই আছি আজ। দোকানে যাস নে আবার!
বাড়ি ঢুকতেই খুব অল্প বয়সী একটা মেয়ের মুখ চোখে পড়লো। দেখতে খুব মিষ্টি৷ মনে হলো- ১৫ বছর হতে পারে।
নসু ভাই মেয়েটাকে পরিচয় করিয়ে দিল- চুমকি। আমার প্রয়োজন আর কি বুঝলি!
বলে চোখ টিপ দিলেন।
এই প্রথম নসু ভাইয়ের চেহারাটা খুব অশ্লীল মনে হলো জামিলের। সে যখন জামিলকে বলছিল- ‘আমার প্রয়োজন’ জামিলের তখন ক্ষণিকের জন্য নসুর মোটা লিঙ্গের কথা মনে পড়লো যা সে মেজ আপার সাথে সঙ্গমরত অবস্থার দিনটিতে দেখেছিল।
পরমুহূর্তেই নসু বললো- কুটু তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
কুটু সত্যি তার জন্য অপেক্ষা করছিল। জামিল সে রাতে আবিষ্কার করলো- মানুষে মানুষে নয় কেবল, মানুষে পশুতেও টেলিপ্যাথি হয়। টেলিপ্যাথি আসলে এক ভালোবাসার ‘টেন জি’ কিংবা কে জানে ‘অসীম জি’ নেটওয়ার্ক।
কুটু তাকে ডাকছিল, কেননা সে বিদায় নিতে যাচ্ছিল পৃথিবী থেকে। কুটু জামিলকে ঢাকায় নামতে সিগ্ন্যাল পাঠিয়ে অপেক্ষা করছিল- কেননা উদ্ধারকারীকে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে সে কিভাবে মরে! সে যে এক সত্যিকার সৎ কুকুর!
ঠিক ৯টা ২৩ মিনিটে কুটু মারা গিয়েছিল। মৃত্যুর সময় তার কালো পশমগুলো যেন বলছিল- একথা সত্যি কিছু কিছু মানুষ নিষ্ঠুর, কিন্তু মানুষই তো আমাকে সুন্দর জীবন দিল। মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কুটুকে কবর দিয়ে তড়িঘড়ি করে রাতের বাস ধরলো জামিল। যেন কুটুর পূণ্যাত্মার সাথে পাল্লা দিয়ে সে এই শহর ছাড়তে চায়। এখানে আর ফেরার কিছু নেই। নসু ভাই তার অজগর লিঙ্গ নিয়ে ওই কচি মেয়ের সাথে সঙ্গম করে যাক। এ শহর এখন হয়তো অজগরের…
তিন.
জার্মান মনোচিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়েছিল মূলত স্নিগ্ধার জন্য। সেখানে তিনি এক পর্যায়ে ধরে ফেললেন শ্রাবণেরও মানসিক সমস্যা রয়েছে।
স্নিগ্ধাকে মনোবিদ পরামর্শ দিয়েছিলেন- শ্রাবণের সাথে নিয়মিত সেক্স করতে আর খুব জোরে চিৎকার করে অনুভূতি প্রকাশ করতে। এর পক্ষে লজিক ছিল- তাতে অন্তত স্নিগ্ধার ভেতরে গণধর্ষিত হওয়ার পর সেক্স নিয়ে যে বেদনার স্মৃতি আছে তা ঢাকা পড়বে। নিজের শিৎকার নিজের কানে উচ্চগ্রামে পৌঁছালে একসময় সে আবার বিশ্বাস করতে শুরু করবে সেক্স বিষয়টা সুন্দর।
আর শ্রাবণকে বলেছিলেন- স্নিগ্ধার কাউন্সেলিং থেকে বোঝা গেছে তার মধ্যে ক্যান্ডুয়ালিজম বা লোক দেখানো সেক্সের প্রবণতা রয়েছে।
‘ইয়াংম্যান নির্দোষ প্যারাফিলিয়া রোগের একটি৷ কিন্তু দেখলে তো তোমাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেল। তুমি বরং নিজেই একটু পড়াশোনা করে আসো। তারপর আমরা সেশন শুরু করবো’, স্নিগ্ধার অনুপস্থিতে শ্রাবণকে বলেছিলেন ডাক্তার।
শ্রাবণ পড়াশোনাটা করেছিল ঠিকই, ডাক্তারের কাছে আর যায়নি! কান্ডুয়ালিজম নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে দ্বিতীয়দিনের মাথায় সে ডাক্তারের কাছে আর না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এসেছিল। সেদিন রাতে স্নিগ্ধার সাথে খুব একচোট ভাংচুর মিলনের পর স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে পড়েছিল।
আগেরদিনই লিডিয়ার রাজা কাদাউস, জিগেস আর রানি নিসাকে নিয়ে ইতিহাসবেত্তা হেরাডোটাসের বর্ণনা পড়েছিল সে। পরদিন ইন্টারনেটে পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলো আরেক কাহিনী৷ বিস্ময়করভাবে এই কাহিনীরও মূল চরিত্র জিগেস৷ প্লেটোর রিপাব্লিকের এই কাহিনিতেও রয়েছে রাজা হত্যাকারী এক জিগেস।
হ্যা জিগেস। এই জিগেস একজন মেষপালক। প্লেটোর রিপাব্লিকের দ্বিতীয়খণ্ডে ‘ন্যায়’ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে দার্শনিক গ্লুকন সেই ঐতিহাসিক হেরাডোটাসের গল্পটা তুলে ধরেন। গল্পটা সংক্ষেপে এরকম-
লিডিয়ায় এক মেষপালক ছিল যার নাম জিগেস৷ একদিন সে যখন ভেড়ার পাল মাঠে চড়াচ্ছিল তখন ভূমিকম্প হয়। এতে একটা পুরনো কবর বের হয়ে যায়। যেটাতে এক ব্রোঞ্জের তৈরি ঘোড়ার উপর অজ্ঞাত কোন এক রাজার মৃতদেহ বসানো ছিল। তার হাতে ছিল একটা আংটি৷ মেষপালক জিগেস আবিষ্কার করলো এই আংটি পরলে অদৃশ্য হওয়া যায়। এরপর সে যখন রাজদরবারে রাজ্যের ভেড়ার পালের হিসেব দেওয়ার কাজে নিয়োজিত হলো, সুযোগ বুঝে অদৃশ্য হয়ে রানিকে তার প্রতি সিডুস বা কামাকর্ষণে জড়ালো। এক পর্যায়ে আংটির অদৃশ্য হওয়ার সুবিধা নিয়ে রানির সহায়তায় রাজাকে হত্যা করলো। যেহেতু সে অদৃশ্য ছিল, কেউ বুঝতেও পারলো না জিগেসই রাজার হত্যাকারী। পরে রানির সহায়তায় সে রাজাও হয়।
দার্শনিক গ্লুকন এ গল্প তুলে ধরে দাবি করেছিলেন- এরকম আংটি যদি দুটো থাকে, একটা সৎ এবং একটা জিগেসের মতো অসৎ লোকের কাছে, তাহলে সৎ লোকটিও যা ইচ্ছা তাই করবে, তার মধ্যেও অপরাধী তৈরি হবেই হবে।
গ্লুকনের দাবি ছিল- আইন ও সমাজের কারণে আসলে মানুষ নিজেকে সংযত রাখে।
শ্রাবণ এর সহজ অর্থ ধরে নিয়েছিল- চান্সলেস অনেস্ট।
তো গ্রীষ্মের সেই ছুটির রাতে শ্রাবণ আর স্নিগ্ধাকে জার্মানির প্রতিবেশি ছেলেটি হঠাৎই দেখতে পেয়েছিল। সে হয়তো তার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল সামারের ছুটিতে সুইডেন৷ তারপর রাতে তাদের দেখে ফেলে কাকতালীয়ভাবেই। জার্মানির কড়া আইনের কারণে যে সুযোগ পায়নি, সেটা সুইডেনের অন্ধকার গলিতে নেয়। ছেলেটা স্নিগ্ধার ভেতর নিজের শিশ্ন ঢুকিয়েছে এক মিনিটেরও কম সময়। অথচ শ্রাবণকে লাত্থিয়েছে বুকে, পিঠে, অণ্ডকোষে আরো অনেকক্ষণ। মুখে যা বলেছে তার অর্থ করলে দাঁড়ায়- দ্যাখ তোর জিএফকে কেমন দিলাম, মাদারফাকার মজা করিস আমার সাথে!
অথচ এই ছেলের সাথে জার্মানিতে দিনেরাতে যখন দেখা হয়েছে দ্বিতীয়বার ছেলেটি কখনো চোখ ফিরিয়ে রাস্তায় তার কিংবা স্নিগ্ধার দিকে তাকায়নি। ছেলেটি জিগেসের মতোই সুযোগ পেয়ে নৈতিকতা হারিয়েছে হয়তো!
অবশ্য এখানে আরেক চরিত্র স্নিগ্ধা৷ সেরাতে পড়তে গিয়ে শ্রাবণের একবার মনে হয়েছিল- স্নিগ্ধা কোনোভাবে ছেলেটার সাথে ইনভলভ হয়ে গিয়েছিল নাতো! সে যখন বাড়ির বাইরে থাকতো, তখন কি ছেলেটার সাথে স্নিগ্ধার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল? স্নিগ্ধা কি এখানে জিগেসের প্রেমিকা রানির ভূমিকা পালন করেছে?
এটা মনে হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। তার একটি হলো- একরাতে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে দেখে স্নিগ্ধা ঘরে নগ্ন হয়েই রয়েছে, জানালার পর্দা তোলা। ছেলেটি উল্টোদিকের জানালায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। স্নিগ্ধা তো জানে ছেলেটি তাদের দেখে, সে কেন শ্রাবণের অনুপস্থিতিতে অমন উদোম ছিল? জানালার পর্দা কেন নামানো ছিল না!
বাকি কারণগুলো পরে আবার ভাবার জন্য উঠিয়ে রাখে শ্রাবণ। দীর্ঘদিন পর তার ডিঅ্যাক্টিভ করা ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। একটাই দেশি বন্ধু আছে তার অ্যাকাউন্টে। বলা ভালো ইউরোপে যাবার পর এই একজনের সাথে যোগাযোগ ছিল অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ করার আগ পর্যন্ত। নক দেয় তীর্থকে।
মাত্র একটি বাক্য লিখে- মেহের কেমন আছে? জানিস কিছু?
(চলবে)
(যদি কখনো বই আকারে বের হয় আরেকটু ঘষামাজা হবে হয়তো কাহিনীতে। বানান, বাক্যরীতি ভুল রয়ে গেল। পাঠকের কাছে অনুরোধ থাকলো- গল্প ঝুলছে কিনা সেটা জানানোর জন্য।)