পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবঃ মেজরের মৃত্যু, প্রশ্ন ও প্রত্যাশা – আমীন আল রশীদ
কক্সবাজারের টেকনাফে সিনহা মো. রাশেদ খান নামে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরকে পুলিশ যে গুলি করে হত্যা করলো, সেটি কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার নয়। কিন্তু ঘটনার পরে পুলিশ যে ব্যখা ও বিবৃতি দিয়েছে, তা সেই পুরনো গল্পই। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে কারও নিহত হওয়ার পরে গণমাধ্যমে যে মুখস্ত বিবৃতি দেয়া হয়, তার সাথে টেকনাফের এই ঘটনার মিল রয়েছে। কিন্তু তারপরও অতীতের যেকোনও ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের সাথে এই ঘটনার সুস্পষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্য সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়ায়ও। নিহত মেজরের পরিবারকে ফোন করে সান্ত্বনা এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এই ঘটনায় এরইমধ্যে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট একটি অনলাইন সংবাদ পোর্টালে ছাপা হয়েছে, সেখানেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে। ফলে অতীতের ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের আলোকে মেজর রাশেদের নিহত হওয়ার এই ঘটনাটিকে মিলিয়ে দেখা এবং সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরিত্র, বিশেষ করে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে টেকনাফে আসলে কী হয়, সেটিও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই কি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন? আর মাদক ব্যবসায়ী হলেই তাকে বিনা বিচারে হত্যা কি রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান অনুমোদন করে? উপসংহার হলো, প্রতিটি ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধই প্রকারান্তরে গুলি করে হত্যা করা। কিন্তু এবারের ঘটনাটি অধিকতর আলোচনায় আসার কারণ হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিচয়। অর্থাৎ, একজন চিহ্নিত বা সন্দেহভাজন অপরাধী এমনকি একজন নিরীহ মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হলেও সেটি আলোচনায় থাকবে না বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় হবে না, যদি না তার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়। অর্থাৎ, গুলিতে নিহত হওয়ার পরে আপনার পরিবার ন্যায়বিচার পাবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আপনার পরিচয়ের উপর; আইন বা বিচারব্যবস্থার উপরে নয়। তবে টেকনাফের এই ঘটনা দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি না করুক; এই ঘটনার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া স্বাধীনভাবে পরিচালিত হোক—এটিই প্রত্যাশা।