বগুড়া লেখক চক্রের দুই দিনব্যাপী কবি সম্মেলন উদ্বোধন

0
243

নাটোর কণ্ঠ: শুরু হলো বগুড়া লেখক চক্র আয়োজিত কবি সম্মেলন ২০২০। আজ ২৭ তারিখ শুক্রবার সকাল ১০ টায় ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ২দিন ব্যাপী কবি সম্মেলন। বগুড়া লেখক চক্রের ৩২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার ২০২০ প্রদান উপলক্ষ্যে এ আয়োজন।স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে কবি-লেখক-সংস্কৃতি কর্মীগণ সারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কবি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য। র‍্যালী শেষে উদ্বোধন। মাস্ক পরেই উদ্ধোধন হয়েছে সকল আনুষ্ঠানিকতার ।

দুনিয়ায় যখনই কোথাও কোনো দুর্যোগ এসেছে, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, একনায়কতন্ত্র অথবা সাম্প্রদায়িকতা থাবা মেলেছে, তখনই কবিরা তাদের কবিতাকে অস্ত্র করে প্রতিবাদে প্রতিরোধে নেমেছেন। একজন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। অত্যাচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলে উঠেছিলেন, ” আমি ভগবান-বুকে একে দিই পদচিহ্ন। ” ” এদেশ ছাড়বি কি না বল/ না ছাড়িলে কিলের চোটে হাড় করিবো জল।” ইত্যাদি। হুধু একজন কবিই লাখো বছরের ” পুরুষতন্ত্র” প্রযোজিত বহুমুখী মতলববাজির মূলে কুঠার হেনে ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের অচলায়তনে বন্দী নারীকে মুক্তির গান শোনাতে পারেন,

“স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরিতে নারী!
করিল তোমা বন্দিনী, বল, কোন সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নৈপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পারনা; হাতে রুলি,পায়ে মল,
মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙ্গে ফেল ও শিকল!
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ঊড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ণ, ঐ যত আভরণ!
—————————————–
সেদিন সুদূর নয়-
যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর ও জয়।”

তেমনিভাবে লোরকা, নাজিম হিকমত, বেঞ্জামিন মলয়সি, মাহমুদ দারবিশ অত্যাচারীদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন, অনেক সময় যা রাজনীতিবিদগণও পারেননি। একজন রফিক আজাদ বলতে পারেন, ” ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো!” একজন ফয়েজ আহমদ ফয়েজ সামরিক জান্তার বুকে সিডর সৃষ্টি করে লিখতে পারেন, ” হাম দেখেঙ্গে— হামভি দেখেঙ্গে।” আর একজন ফরিদা খানম তা প্রকাশ্যে গেয়ে লাখো জনতার সমাবেশকে অন্যায়বিরোধী বাধভাঙ্গা জোয়ারে পরিণত করতে পারেন।

এই সময়েও একজন শঙ্খ ঘোষ যা পারেন, তা এক রাজ্যভর্তি প্রগতিশীল রাজনীতিবিদগণ পারেন না। কিন্তু সবাই অমন কবি হতে পারেন না। যারা লোভের কাছে, গোষ্ঠীতন্ত্রের কাছে মাথা নত করেন, ” রাজার কবি ” হয়ে সুবিধা নিতে চান, তারা পারেন না। “পোকায় ধরেছে আজ এদেশের ললিত বিবেকে/ মগজ বিকিয়ে দিয়ে পরিতৃপ্ত পণ্ডিত সমাজ।” (সোনালি কাবিন)—– মগজ বিকানো কবি-বুদ্ধিজীবী-পণ্ডিত- সাংবাদিকের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বগুড়া লেখক চক্র আয়োজিত কবি সম্মেলন কবিদের সকল প্রকার শোষণ নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, পণ্য-সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বর্ণবাদ, শ্বেত-শ্রেষ্ঠত্ববাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, নব্যপুরুষতান্ত্রিকতা, ধর্মান্ধতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে শাণিত হতে উদ্বুদ্ধ করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

যারা এ বছর বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার পেলেন তাঁদের নাটোর কন্ঠ পরিবার এর পক্ষ থেকে অভিনন্দন । কবিতার জয় হউক! বগুড়া লেখক সম্মেলন সফল হউক!

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়-দুলু
পরবর্তী নিবন্ধঅসহায় নারীদের পাশে মেয়র উমা চৌধুরী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে