মানুষ কোনোদিন সুখি নয়? মানুষ আদতে বর্বর প্রাণী?- আহমেদ শিপলু
মাত্র চার বছর বয়সে প্রথম প্রহারদৃশ্য দেখেছিলাম জেলা শহরের এক মহল্লায়। একজন নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় পেটাচ্ছে এলাকার এক ক্ষমতাবান পুরুষ। অতো কম বয়সে চুরির অপরাধ যে ভয়াবহ এটা বুঝলেও, রাস্তায় গড়াগড়ি যাওয়া নারীটির জন্য ভীষণ মায়া লেগেছিল। এর কিছুকাল পর, পাড়ার ঝগরাটে বাড়ির ক্ষমতাবতী নারীকে দেখলাম পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটাচ্ছে পাশের বাড়ির সমবয়সী যুবককে, পুরো ঘটনা না জানলেও উপস্থিত ঘটনার সাক্ষীদের কাছে পরেরটুকু জেনেছিলাম এইরকম —মেয়েটি চুলের ক্লিপ দিয়ে হাত কেটে, নিজের জামার হাতা ছিড়ে থানায় গিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ করেছিলো।
এর কিছুকাল পরে বৃষ্টির মধ্যে চোর সন্দেহে এক লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলার দৃশ্য দেখলাম, অনেক কান্নাকাটি হলো, দৌড়ঝাঁপ হলো, অবশেষে আসল চোরও ধরা পড়লো।
কাছাকাছি সময়ে গ্রাম থেকে জেলা শহরে পড়তে আসা লজিং টিচারের হাত ধরে পালানো শাহিদা আপাকে ধরে আনলো তার ভাইয়েরা, লোকভর্তি বাড়ির উঠানে পেটাতে পেটাতে অজ্ঞান করে ফেললেন। ডাক্তার এসে জ্ঞান ফেরালে আবার শুরু হয় পেটানো…
যদিও তারা আবার পালিয়েছিল এবং সংসার পেতেছিল। বারবার বিয়ে করা লোকটির ষোলোতম বউটি যেদিন বিশ খেলো সেদিন জানলাম গেদু মিয়ার আগের আরও তিন বউ আত্মহত্যা করেছিলো। নন্দী আপা সুটকেস গুছিয়ে চিরতরে বাড়ি থেকে বিদায় নিতে এলেন একদিন বধুবেশে। শাহা পরিবারের সাথে জাতপাতের দ্বন্দ্ব। আর কোনোদিন ফেরেনি সে এবং তারই বড় বোন দিপালী আপা রয়ে গেলেন চিরকুমারী।
এরকম বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এগোনো শৈশবে এটুকু বুঝেছিলাম মানুষ কোনোদিন সুখি নয় এবং মানুষ আদতে বর্বর প্রাণী।
নিজের ইচ্ছেয় যেহেতু আসিনি
যেহেতু এসেই পড়েছি যেভাবেই হোক
এবং যেহেতু ফিরেও যেতে হবে
সুতরাং এটুকুই বাঁচো এবং বাঁচাও যতটা পারো। এই নীতিতেই আছি। বাকি সব ফাঁকা।