হয়তো সম্ভব – এ কে সরকার শাওন

0
394
Shoun, শাওন

হয়তো সম্ভব – এ কে সরকার শাওন

সনাতন ধর্মমতে পৃথিবীতে চারটি যুগ যেমন সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর ও কলি যুগ! কলি মানে পাপের যুগ! চারটির মধ্যে তিনটি যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে বর্তমানে চলছে কলিকাল। হিসাব করলে হয়তো দেখা যাবে কলিকালেরও প্রায় ৫২০৭ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এখন চলছে ঘোর কলিকাল। এই যুগে ধর্ম সংকোচিত হবে। হয়েছেও। ওয়াজ নসিহত যা হয় এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে সাথে সাথে ড্রেইন করে দেয়!
মানুষ তপস্যা থেকে দূরে থাকার কথা তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার চিঠিপত্রে উল্লেখ করে গিয়েছেন সেই কবে, “আমরা না পড়িয়া পন্ডিত,আমরা না লড়িয়া বীর, আমরা ভ্যাঁ করিয়া সভ্য, আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট!” কলিকালের মানুষ সত্য থেকে বহু দূরে অবস্থান করবে। এখন একবার “সদা সত্য কথা বলিবে” বলিলে তিনবার শুনতে হয় ” সত্যের ভাত নাই রে ভাই”! তারপরও অনেকেই সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকবে! আর রাজনীতি অত্যান্ত জটিল-কুটিল ও নোংরা আকার ধরন করবে। হয়েছেও সেই রকম কুটিল।
আমাদের দেশে তো একজন ঘোষনা দিয়েই রাজনীতি জটিল করেছেন। “I will make politics difficult for the politicians” সেই থেকে চলছে কেউ উত্তরণের আন্তরিক চেষ্টা করে নাই! সিপিবির ভাষায়, “সব শাসকের দাঁতে বিষ তফাৎ কেবল উনিশ বিশ” কি সরকারি দল কি বিরোধী দল সবাই শুধু নিজেদের উন্নতির কথা ভাবে, সেটাও আবার দলীয় উন্নতি নয় ব্যাক্তির নিজের উন্নতি! ছাত্র ইউনিয়ন করার সময় বহুবার মরহুম কমরেড শহীদুল্লাহ্ ভাইয়ের মুখে শুনেছিলাম “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়৷” এখন একশত আশি ডিগ্রি বিপরীতে আছি, “দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়৷” জনগণকে সবাই প্রতিনিয়ত বোকা মনে করে চলছে।
কিছু নেতা-নেতৃত্ব আছে যারা সঠিক পথে দেশ ও দশকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়! কিন্তু চামচাদের চামচামির জয়ধ্বনি এতো প্রবল যে নীতিবাদী নেতা ভেসে সাগরে বিলীণ হয়ে যায়। তার বংশের কারো খবর পর্যন্ত পাওয়া যায় না। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল জনপ্রিয় চলচিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক, ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণে ভূষিত অমিতাভ বচ্চনের। সেই সূত্রেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮০ দশকের গোড়ায়। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে ১৯৮৪ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের একটি আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুণাকে হারিয়ে সাংসদও হয়েছিলেন।
রাজনীতিকে ‘নোংরা জায়গা’ আখ্যা দিয়ে রাজনীতি ছাড়েন অমিতাভ বচ্চন। তার পিতা হরিবংশ রায় বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তিনি নিজে যোগ্য ও মেধাবী তারপরও লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর বিবিসি মন্তব্য করেছিল, “গণতন্ত্রী ভারতের রাজনীতি হালকা হয়ে গিয়েছে। আর গত ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত ভারতে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে এতো অরাজনৈতিক লোক নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছিলেন যা দেখে একটি পত্রিকা (ডি ডব্লিউ ) শিরোনাম করেছিল “তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী তালিকায় তারার হাট”। জানিনা বিবিসির সেই সংবাদ বিশ্লেষক তখন এ ব্যাপারে কি মন্তব্ করেছিলেন! এর মানে টপ লেভেলের নেতৃত্ব চিন্তা করে কাকে নমিনিশন দিলে আসনটি জিতে আসতে পারবে। এখানে ত্যাগ-তিতিক্ষা, আদর্শ-মেধা, দেশপ্রেম ইত্যাদি মূখ্য বিষয় নয়। শুধু অনুন্নত নয় প্রায় সব দেশে সব নির্বাচন নিয়ে এই বাজে কালচার, ইলেকশন ইন্জিনিয়ারিং ও নৈশ ভোট টেকনিক চলছে।
একজন নেতার ১৩ টি প্রধান গুনাবলীর মধ্যে প্রথমটি সততা দ্বিতীয়টি “পাওয়ার ডেলিগেট” দ্বিতীয় নেতা তৈরি করা। এই পয়েন্টে কেউ ফোকাস করছে না। এসব থেকে বের না হতে পারলে তরুণরা বুকে দহন নিয়ে রাজনীতিকে ঘৃণা করে বলতেই থাকবে, “I hate polluted politics. সেদিন রাস্তার ধারে একটি ছাতি নেতার পোস্টারে ২৭ টি ছবি দেখে এই কথার সাথে মিল খুঁজে পেলাম। অনেকে মনে করতে পারে বিষয়টি ছোট। না তা নয় এর মধ্যে নিহিত আছে ইদুরে দৌড় ও কামড়াকামড়ির চিত্র। পোষ্টারে যত ছোট ছবি তত বড় নেতা বলে অনুমতি হলো। এর মাধ্যমে আদব কায়দার অভাব ও শো শা প্রকাশ পেয়েছে। কমিটির লোকজনকে সাধারণ মানুষের জন্য কোন কাজ করতে দেখা না গেলেও শুধুমাত্র চাঁদাবাজি করতে এই পদ পদবীর খুব দরকার হয়। তাইতো অন্য দলের লোককেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদ কেনার নিউজ প্রায়ই পাওয়া যায়।
কলিযুগের শাসকগণ অতি ধনলোভী হবে। প্রমান তো প্রতিদিন চারপাশে ঘুর ঘুর করছে। সম্প্রতি এক সাংসদ মানব পাচারে কুয়েতে আটক হয়ে সেখানকার সংসদে উত্তাপ ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহে ২০ লাখ ডলারের দুর্নীতির অভিযোগ আনে জিম্বাবুয়ের প্রধান বিরোধী দল। এরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওবাদিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এদিকে জিম্বাবুয়ে সরকার এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। হয়তো কিভাবে তাকে বাঁচানো যায় তার জন্য তাদের দলের লোকেরা জোর লবিং শুরু করে দিয়েছে। আর যে চৌকষ, প্রতিভাবান, সাহসী, কর্মবীর দেশ প্রেমিক সেই রিপোর্টারকে কিভাবে অপদস্ত করা যায় তার ছকও হয়তো কষতেছে! প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন-পীড়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে! এসবই অপরাজনীতির খেলা। সবাই সম্মিলিতভাবে চাইলে এর থেকে উত্তরণ হয়তো সম্ভব! কবে হবে এ খেলার অবসান!
হয়তো সম্ভব
এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ ভবন, ঢাকা! ২২.০৬.২০২০
Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধভেন্টিলেশন ( ২) একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর আত্মকথন, লিখেছেন- নীলিমা শামীম
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে প্যানেল নিয়োগের দাবীতে মানববন্ধন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে