নাটোরকন্ঠ: জনাব রমজান আলী প্রাং ১৯২১ সালে ২৪ ডিসেম্বর বৃটিশ বিরোধী স্বদেশী আান্দোলনের বিপ্লবী স্থানীয় সংগঠক দানবীর প্রোজাবৎসল অতিসাধারণ জীবনযাপনকারি জমিদার আছির উদ্দিন(লব প্রামানিক) ও মাতা কাঞ্চন নেছা বেওয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে রমজান আলী প্রাং। ১৯৩১ সালের দিকে মাত্র ১০ বছর বয়সে তার গৃহশিক্ষকের অনুপ্রেরণায় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কিশোর কর্মী হিসেবে যুক্ত হন।
১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ পরে আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে যুক্ত হন এবং নাটোরে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত, ঘনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত, ও প্রীয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন ৬৬’র ছয়দফা ৬৯’র গণআন্দোলনে স্বক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নাটোর সদর আসনে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মননোয়ন স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে মহানুভবতার পরিচয় দেন এবং বঙ্গবন্ধুর নিকট অন্যের জন্য সুপারিশ করেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নাটোরের মুক্তিকামী মানুষদেরকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য উৎবুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেন।তিনি নিজে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে পাকিস্তানী আর্মির অবস্থান চিহ্নিত করে সহ-মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মানচিত্র ও তথ্য সরবরাহ করেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি হানাদারদের হাতে ধরা পরেন, তারপর নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করে শ্রষ্টার অনুগ্রহে অপ্রত্যাশিত মুক্তি লাভ করেন। তিনি একজন ভরাট কন্ঠের অধিকারী সু-বক্তা ও ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজনীতিবিদ ছিলেন।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগোষ্ট জাতির জনককে স্ব-পরিবারে হত্যার প্রতিবাদ না করায় স্বতির্থ নেতা কর্মীদের উপর ক্ষোভ ও অভিমানে রাজনীতিতে নিঃক্রীয় হয়ে যান। পরে ১৯৭৮ সালে আওয়ামীলীগ (মিজান) দলে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদেন। তিনি আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও প্রচার করেছেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী সামরিক শাসক এরশাদের সাথে সংযুক্ত হলে তিনি স্বক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসেন।
জনাব রমজান আলী প্রাং তার রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নাটোরে অনেক ধর্মীয়, সামাজিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় স্বক্রিয় ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। যেমন- বায়তুল আমান জামে মসজিদ, শের- ই-বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়,আল মাদ্রাসাতুল জামহুরিয়া, রানী ভবানী মহিলা কলেজ, নাটোর চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ড্রাট্রিজ, সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।
তিনি পরিবারের উর্দ্ধে সমাজ ও মানুষের প্রতি বেশি দ্বয়িত্বশীল সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়া উদার মানুষিকতা সম্পন্ন ত্যাগী ব্যক্তি ছিলেন। ২০০৭ সালের ৯ আগষ্ট তাঁর বর্ণাঢ্য অথচ সহজ সরল প্রচার বিমুখ জীবন অবশান হয়। আজকের এই দিনে নাটোরকন্ঠ পরিবার তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছে।