করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত সরকারী বিধি-নিষেধ না মানা, অসচেতনতা নাকি উদ্দেশ্য প্রণোদিত !
-ভায়লেট হালদার
যখন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর কয়েক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস তখন আমরা উৎসুক আমজনতা করোনাকে থোরাই কেয়ার করে স্বেচ্ছাচারিতায় মগ্ন।
বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা লোকজনদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোয়ারেন্টিনে রাখা অর্থাৎ ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে আসবে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা মানতে হবে। আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু সরকারী এই নির্দেশ মানছেন না প্রবাসীরা এবং সাধারণ জনতা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের জারি করা বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন ও অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন জেলায় জেল ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরেও সরকারী বিধি-নিষেধ লঙ্ঘনকারীদের সংখ্যা কমছে না। এর কারণ কি?
কেন মানছেন না তারা? তারা কি ইচ্ছাকৃত ভাবে করোনা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন? তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমন সম্পর্কে অজ্ঞ বা এ বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা বা ইনফরমেশন পাচ্ছে না? নাকি জেনে শুনে করোনা ভাইরাসকে তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে নির্বোধের ইতিহাসের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে চাইছে? নাকি তারা দেশের সরকারকে বিব্রত করতে এবং দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে করে তুলতে চাইছে?
প্রবাসীদের কাছে জানতে চাই, আপনারা যে যে দেশে আছেন সেসব দেশের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করতে পারেন কি? যদি সে সব দেশের আইন মেনে আপনি চলেন তবে দেশে ফিরে এদেশের আইন অমান্য করার সাহস আপনাদের হয় কি করে?
নাকি কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে ফিরে দেশের মানুষগুলোকে আতঙ্কগ্রস্থ করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছেন? দেশে ফিরে আপনার কর্মকাণ্ড দেশের মানুষের উপর কি প্রভাব ফেলছে, একটু ভেবে দেখবেন।
শুধু প্রবাসীরা কেন, এদেশের কিছু লোকও মানছেন না করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত সরকারী বিধি-নিষেধ। তাদের উদ্দেশ্যই বা কি? ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্কুল, মাদ্রাসা, কোচিং সেন্টার সহ বিভিন্ন জনসমাগম স্থল থেকে জেল জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
ভ্রমন পিপাসুদের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমন নিষিদ্ধ করা হলেও অনেকেই মানছেন না। বরং তারা পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমন অব্যাহত রেখেছেন। সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসকে বিপর্যয় ঘোষণা করেছে তখন কোন সুখে আপনারা ভ্রমন অব্যাহত রেখেছেন?
নবীগঞ্জে অস্ট্রেলিয়া ফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন প্রবাসীকে দেখতে তার বাড়িতে বাড়ছে উৎসুক জনতার ভীড়। হোম কোয়ারেন্টিন কি চিড়িয়াখানা? নাকি বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা উদ্ভট কোন জন্তু-জানোয়ার? নাকি করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার বাসনা নিয়েই বিদেশ ফেরত দেখতে যাচ্ছেন? ভেবে দেখবেন জনতা।
এত বড় একটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যখন মানব জাতি তখন বড় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে ও বৌভাতের আয়োজন করছেন অনেকে। বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে প্রশাসন তথা ভ্রাম্যমান আদালতকে হাজির হতে হচ্ছে। কিন্তু কেন? অগণিত কাজ ফেলে আপনাদের অসচেতন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে প্রশাসনকে দৌড় করাচ্ছেন কেন?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছে। কেন পালিয়েছে? যদি তারা সত্যিই করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে হাসপাতালে না থেকে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি? যদি আক্রান্ত নাও হয়ে থাকে তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিলিজ পত্র দেয়ার আগেই পালানোর কি দরকার ছিল?
করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ইউনিটে গত মঙ্গলবার রাতে একজনকে ভর্তি করা হলে তিনি পালিয়ে যান। চারজন লোক তাকে ধরে আনে হাসপাতালে। চারজনকে হিরো আখ্যায়িত করে তাদেরকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে নেচেছেন এলাকার জনগণ।
আপনারা হিরোইজমে নাকি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বন্দোবস্ত করছেন? ভেবে দেখবেন।
মনে রাখবেন, আপনার অসতর্ক, অসচেতনতায় কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত কর্মে করোনা মহামারী রূপ নিতে পারে এবং মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে।
শেষ পর্যন্ত মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হবে, মানুষই মরবে। যদি নিজেকে মানুষ ভাবেন তবে সচেতন হোন, সাবধানে থাকুন, অন্যকে সতর্ক করুন। মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য।