মরীচিকা -শাপলা জাকিয়া‘র ভৌতিক গল্প -পর্ব-১০

0
472
Shapla-Zakia

মরীচিকা

ভৌতিক গল্প – পর্ব-১০

শাপলা জাকিয়া : পরদিন ছুটির দিন ছিল বলে দুপুরবেলা সবাই একসাথে খেতে বসেছি। রুনা ভাবির স্বামী সোহেল ভাই খেতে খেতে গল্প শুরু করলেন। গল্পের বিষয় জ্বীন-ভূত। ওনাদের গ্রামের তিন তলা বাড়ির ছাদে ছোট সাইজের পরি দেখেছে দু, একজন। এক চাচা ভর দুপুরে নির্জন আমবাগানে বিশাল আকৃতির দাঁড়ি গোঁফওয়ালা এক মানুষ দেখেছিলেন, যার উচ্চতা ছিল প্রায় দশ ফুট! আমবাগানে একটা মাত্র হিজল গাছ ছিল, তাতেই পা ঝুলিয়ে বসেছিল সে। চাচাকে দেখে হাসিমুখে গাছ থেকে নেমে আসে।

আমি, দীপু ও রুনা ভাবি তিনজনই ভূতে অবিশ্বাসী নই। সোহেল ভাই এর বলার ভঙ্গীতে হাসি পেলেও আমরা হাসলাম না। শুধু প্রবালের মুখে হাসির সূক্ষ্ম রেখা ভেসে উঠেই মিলিয়ে গেলো।
অবশ্য আজকাল প্রবালকে ভূতের অস্তিত্বের ব্যাপারে বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী কোনটাই মনে হয় না। তাকে সংশয়বাদী বলে মনে হয়।
প্রবাল বললো,
– আপনি নিজে কোনদিন ভূত দেখেছেন?
সোহেল ভাই কাঁচামরিচে একটা কামড় দিয়ে বললেন,
-তা দেখিনি, তবে যারা দেখেছেন, তারা মিথ্যা কথা বলার মানুষ না। যেমন ধরুন আপনাদের গতকালের ঘটনাটা,আপনারা তো আর মিথ্যা বলছেন না।

দরজাটা আটকে গেলো, যেন পালিয়ে আসতে না পারেন। এরপর মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে গেলো, তারপর ধরুন, ইলেকট্রিসিটি চলে গেলো আর সেদিনই জেনারেটরটা কাজ করলো না। এদিকে রুনার কথা বলি, ওর কান খুব খাড়া, জেগে থাকলে তো কথাই নেই, ঘুমিয়ে থাকলেও সামান্য শব্দ পেয়ে উঠে পড়ে! রাতে ঘুম ভেঙ্গে সিগারেট খেতে বারান্দায় যাই পা টিপে টিপে, তবু রক্ষা নেই, শুয়ে শুয়ে চেঁচাবে- সিগারেট ফেলে ঘরে এসো।

মেঘলা এতো দরজা ধাক্কাধাক্কি করলো অথচ সেই রুনা কিছুই টের পেলো না পাশের ফ্ল্যাটে থেকে! তাজ্জব সব ঘটনা! একসাথে এতোগুলি ঘটনাকে তো কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না! যতোই ধরে নেই মেঘলা মানসিকভাবে সামান্য সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
প্রবাল বললো,

– এতোগুলি ঘটনা কাকতালীয় না হলেও খুব অযৌক্তিক না। হয়তো কিচেনের জানালা খোলা ছিল, সেই পথে আসা ঝড়ো বাতাসে ফুলদানি দীপু সাহেবের মাথায় পড়তে গিয়ে পাশে পড়ে। উনি দ্রুত সরে যাওয়ায় বেঁচে যান। অন্যান্য জিনিসপত্র পড়ে যাওয়া, ফ্লোরে তার গড়াগড়ি খাওয়া সব বাতাসের কারণেই হচ্ছিল। ঝড়ের জন্যই রুনা ভাবি দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনেছেন কিন্তু আলাদা করে বুঝতে পারেননি যে ওটা ঝড়ের সাথে রিলেটেড শব্দ নয়। ঝড়-,বৃষ্টির সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় দুর্বল থাকে।

আমি ভালো করে প্রবালকে লক্ষ্য করলাম। ওকে কাল থেকে অস্থির লাগছে। সম্ভবত মহিমের সাথে আমার ফেসবুকের যোগাযোগ ও পছন্দ করছে না। আমার ফেসবুক করা নিয়ে ওর আপত্তি নেই কিন্তু মহিম একজন অপরিচিত পুরুষ, হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ। মুখে না বললেও প্রবালের মনের চাপা বিরক্তি প্রকাশ হয়ে পড়ছে। তাই ভূতের অস্তিত্বহীনতা প্রমানের চেষ্টা করে যাচ্ছে এই আশায়, যদি দীপুকে থামানো যায়।
দীপু মুড়িঘণ্ট নিজের প্লেটে তুলতে তুলতে বললো,

– তবু প্রশ্ন আসে, মেঘলা যখন রূপালী হয়ে যায়, তখন এতো শক্তিশালী কিভাবে হয়? প্রবাল সাহেব কিন্তু নিজেই বলেছেন, হোটেলের সেই রাতে মেঘলা আপনাকে এক হাতে শূন্যে উঁচু করে তুলে ধরেছিল। একটা কথা বলি,যে কোন কিছুতে সাকসেসের প্রথম ধাপ হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস করলেন তো আপনার কাজ সফলতার পথে প্রথম পা ফেললো। যতোক্ষণ দ্বিধা- দন্দ্বে ভুগবেন ততোক্ষণ আসলে আপনি রেস শুরুই করেননি, জিতে যাওয়া পরের কথা। আর রেসে নেমে পড়লে সামনেই এগোতে হবে। উল্টোপথে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই।

জানি কয়েকদিনের পরিচয়ে আমার ওপর আস্থা রাখা কঠিন, তবু অনুরোধ করবো আমার ওপর আরেকটু আস্থা বাড়ানোর জন্য। মেঘলার মতো কেস আমি আরও পেয়েছি। সমাধান করতে না পারলে ভিকটিমের অবস্থা ভয়াবহ হয়। এরকম কেস আমি রিচার্ডের সাথে থেকে প্রথম সমাধান করি। এরপর একা একাও করেছি।

রুনা ভাবি প্রবালের প্লেটে আরেক পিস মাছ তুলে দিতে দিতে দীপু ও সোহেল ভাই এর উদ্দেশ্যে বললেন,
– আহ্! খাওয়ার সময় এসব গল্প না করলেই নয়? দেখো তো মেঘলা কেমন খাওয়া বাদ দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। আর প্রবাল, তোমাকেও বলি ভাই, সামান্যই তো মুখে তোলো, অথচ এতো মাছ, মাংস বাজার করে আনো কেনো বলো তো? তোমার দুলাভাই তো বাজার করতে পছন্দ করেন, সে নানানটা রোজই কিনে আনছে। তুমি আর বাজার করবে না।
প্রবাল বললো,

-এটা নিষেধ করবেন না ভাবি, সামন্যই তো আনি।
রুনা ভাবি আমায় চোখের ইশারায় খাবার মুখে তোলার জন্য শাসন করলেন। আমার মায়ের কথা মনে পড়লো, খেতে না চাইলে মাও এমন চোখ ঘুরিয়ে খেতে বলেন। মাকে আমার এই দূরাবস্থার কথা সাহস করে এখনও জানাতে পারিনি, বললে হয়তো চিন্তা করেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

সোহেল ভাই একটু সহজ টাইপ মানুষ, তিনি রুনা ভাবির ভূতের প্রসঙ্গ দূর করে বাজারের প্রসঙ্গ এনে কথা ঘুরানোর টেকনিকটা ধরতে পারলেন না, আবার বললেন,
-জ্বীন তো আছে, ধর্মগ্রন্থে তাদের বর্ণনা পাওয়া যায়। অতৃপ্ত আত্মার ব্যাপারটা খুলে বলো তো দীপু, এই রূপালী নামের মেয়েটা আসলে কি?

দীপু বললো,
-রূপালী অতৃপ্ত আত্মা। প্রতিটা মানুষ নির্দিষ্ট আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে আসে। মানুষের আয়ু শেষ হওয়ার আগেই যদি তাকে কেউ খুন করে অথবা সে নিজেই নিজেকে খুন করে, মানে সুইসাইড করে তবে সে মৃত্যু পরবর্তী জগতে যেতে পারে না যতোক্ষণ না তার আয়ু শেষ হয়। তখন তাকে অতৃপ্ত আত্মার জগতে থাকতে হয়। অথবা কোন মানুষের মনে যদি জাগতিক কোন ইচ্ছা তীব্রভাবে থেকে যায়, তাহলে আয়ু শেষ করে মৃত্যু হলেও সে অতৃপ্ত আত্মার জগতে আটকা পড়ে থাকে। পরের জগতে যেতে পারে না।

প্রবাল প্রশ্ন করলো,
-পরের জগত মানে কি? প্রতিদিন কতো মানুষের খুন বা সুইসাইড হচ্ছে পৃথিবীতে , সবাই তো রূপালীর মতো সামনে আসছে না, রূপালী আসছে কেনো?
দীপু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-অল্প কথায় বোঝানো মুশকিল। শুধু এটুকু বলি আত্মা বা এ্যানার্জির সৃষ্টি আছে কিন্তু ধ্বংস নেই। শরীরের মৃত্যু হয়, আত্মার নয়। আত্মা এক জগত থেকে আরেক জগতে ভ্রমণ করে মাত্র। আমরা সবাই আসলে অভিযাত্রী। জন্মের আগে এক জগতে থাকি, জন্মের পর এই পৃথিবীতে কাটাই, মৃত্যুর পর আরেক জগতে চলে যাই।

ধরা যাক মৃত্যুর পরের জগতে যাওয়ার আগে একটি সেতু আছে, যার নীচে গভীর খাদ আর এই খাদটা হলো অতৃপ্ত আত্মার জগত। একটি আত্মা মৃত্যুর পর কোন কারণে সেতু পার হয়ে পরের জগতে যেতে পারলো না, পা পিছলে গভীর খাদে পড়ে গেলো। তার মানে হলো সে অতৃপ্ত আত্মার জগতে চলে গেলো। এই গভীর খাদই হলো অতৃপ্ত আত্মার জগত। এই জগতের সবাই না, কিছু কিছু আত্মা নানাভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

যারা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, তারা অনেকটা সেতুর পিলার বেয়ে গভীর খাদ থেকে উঠে আসার মতো পৃথিবীতে ফিরে আসে। তখন তারা অশরীরী হয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে একটা জীবিত শরীরের আশায়। মৃত্যুর পর নিজেদের শরীর পচে গলে যায় বলেই তারা নিজেদের শরীরে বা কংকালে সাধারণত ঢোকে না।

আবার কখনোই ঢোকে না বললেও ভুল হবে, বীভৎস, পচা গলা চেহারার প্রেতাত্মা বা কঙ্কালরূপী প্রেতাত্মা মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। যারা নিজের পুরানো শরীরে ঢুকতে চায় না, তারাই অন্যের শরীরে ঢোকে। যার শরীরে ঢোকে তার সম্পর্কে আমরা বলি ওর ওপর ভূতের ভর বা আছর হয়েছে। রূপালী এমনই একটি অতৃপ্ত আত্মা। প্রথমত সে সুইসাইড করেছে আর দ্বিতীয়ত তার মহিমকে হারিয়ে ফেলা নিয়ে তীব্র অতৃপ্তি আছে। সে মহিমকে চায়। রূপালী জ্বীন না। জ্বীনদের নিজস্ব আলাদা জগত থাকে।

এবার আমি প্রশ্ন করলাম,
– কিন্তু আমি রূপালীকে আমার ফ্ল্যাটে সশরীরে দেখেছি। স্বাভাবিক শরীর, পচা গলা নয়। সম্ববত সে আমার মায়ের রূপ ধরেও এসেছিল, কিন্তু আমার মা বেঁচে আছেন।
দীপু বললো,
-এসব আত্মাগুলি যদি সামনে ভালো রিসিভার জাতীয় কোন মানুষকে পায়, তবে নানা রকম কৃত্রিম ছবি ও ভয়েস তৈরি করতে পারে।

অনেকটা এনিমেশন মুভির মতো। মিডিয়াম বা রিসিভার টাইপ মানুষগুলি তখন ওদের তৈরি ঐ সব ছবি দেখতে পায়। যেমন আপনি দেখেছেন, রূপালী খট খট শব্দ করে কী বোর্ডে টাইপ করছে, অথবা ফেসবুকে মহিমের আইডিকে ট্যাগ করে পোস্ট দিচ্ছে, কিংবা গলায় দড়ি দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ছে, এই সব ছবিই রূপালীর বানানো। তার মনুষ্য জীবনে যা ঘটেছে, সেটা সে ছবির মাধ্যমে আপনাকে জানিয়েছে। জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলি ঘটার সময় রূপালীর যে দুঃখ বা অস্হিরতা অথবা আনন্দ হয়েছিল, তাও রূপালী আপনাকে অনুভব করতে দিয়েছে।

আর তাই রূপালীর মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা আপনি অনুভব করেছেন, মহিমের প্রতি ওর তীব্র টানও অনুভব করেছেন। এছাড়া ও যখন আপনার শরীরে প্রবেশ করে তখন আপনার শরীর ব্যবহার করে বিধায় আপনার ব্রেণ ওর সমস্ত চিন্তা- অনুভূতি আপনাকে অনুভব করার সুযোগ দেয়। আপনার মেঘলা সত্তাটা তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন আপনার শরীরে টানা থাকার সুযোগ পেলে রূপালী আপনার মেঘলা সত্তাটিকে আজীবন বন্দী, অথর্ব করে রেখে দেবে। আপনার শরীর ব্যবহার করে নিজের জিঘাংসা, অতৃপ্তি মিটাবে। আর আপনি আজীবন গুমরে গুমরে কষ্ট পাবেন, মুক্তি মিলবে না। তাই রূপালীকে আমাদের থামাতে হবে, এটা অতিব জরুরী!

আমি কিছুটা শিউরে উঠে পাশে বসা প্রবালের কনুই চেপে ধরলাম। প্রবাল আমার উরুতে স্পর্শ করে আশ্বস্ত করলো, ও আমার সাথে আছে।
রুনা ভাবি এবার বললেন,
– সবই তো বুঝলাম, কিন্তু এসব তথ্য তুই পেয়েছিস কোথায়?
-কিছু রিচার্ড বলেছে আর কিছু স্বয়ং প্রেত জগতের বাসিন্দারা বলেছে।
কথাটা বলে প্রবাল হেসে ওঠে, হাসিটা কেমন যেন অপার্থিব লাগে। মৃদু একটা নতুন ধরনের অস্বস্তি টের পাই।

হয়তো মনের ভুল কিংবা টানা মানসিক চাপ আমাকে দিয়ে উল্টাপাল্টা ভাবিয়ে নিচ্ছে।
সোহেল ভাই এর খাওয়া শেষ, তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে কি মনে করে পিছন ফিরে বললেন,
-আচ্ছা দীপু একটা কথা বলো তো, তোমার গুরু রিচার্ড, উনি তো খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী?
-জ্বী।
– তুমি যেসব দোয়া দরুদ ব্যবহার করো, পানি পড়া টড়া দাও, ওগুলি কি তবে বাইবেলের?
-আমি রিচার্ডের শিষ্য তাই বাইবেলের কিছু দোয়া অবশ্যই আছে, এছাড়া অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকেও আমি কিছু না কিছু নিয়েছি। আসমানী কিতাবগুলি তো সব এক জায়গা থেকেই এসেছে।

এই দীর্ঘ আলোচনার পর প্রবালের মুখের অসন্তোষের রেখাগুলি কমে এলো কিন্তু দুশ্চিন্তার ছায়া এখনও তীব্র খরতাপের মতো ওর মুখের স্বাভাবিকতাকে পুড়িয়ে চলেছে।
দীপু প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত আমার আইডি থেকে মহিমের সাথে চ্যাট করা শুরু করলো। একজন পুরুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে আরেকজন পুরুষের চাওয়া-পাওয়া। তাছাড়া দীপু নিজে একজন মিডিয়াম। নিজের ইন্টুইশন আর টেলিপ্যাথিকে কাজে লাগিয়ে অপর পক্ষের মনের ভাব জেনে তাকে নিজের বশে করে নেয়া ওর জন্য সহজ।

দীপু তাদের চ্যাটিং আমার মোবাইল থেকে পর্যবেক্ষণ করতে বলেছে। বলেছে প্রয়োজনে মুখস্থ করে ফেলবেন। মনে করবেন এগুলি আপনার জীবন- মরণ পরীক্ষার পড়া।
আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি, মনে রাখি। সাতদিনের মাথায় “মেঘমুক্ত আকাশ” লিখলো,
-” মেঘলা! এটা আমার ফেইক আইডি। এইজন্য প্রোফাইলে নিজের নাম ও ছবি নেই। জানো তো ভার্চুয়াল জগত নিরাপদ নয়, কতো ধরনের মানুষ এখানে মুখোশ পরে ঘুরছে। আমি তাই যাদের ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, তাদের জন্য এই আইডি রেখেছি।

আলাপ- পরিচয়ের পর নিজ গোত্রের মনে হলে তবে তাকে আমার আসল আইডি দেই। তোমাকে এতো অল্প পরিচয়ে কতো যে আপন মনে হয়েছে বোঝাতে পারবো না। তোমার সরলতা, তোমার মিষ্টতা,আর প্রোপিকে দেখা তোমার নিষ্পাপ চাহনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তুমি কতো সুন্দর একটা মানুষ। সুন্দর নারী না লিখে মানুষ লিখলাম। কারণ আমার কাছে নারী প্রথমে মানুষ তারপর নারী।

তোমার মতো একজন স্বচ্ছ, সুন্দর মনের মানুষের সাথে ফেইক আইডি দিয়ে বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে তোমার স্বচ্ছতাকে অপমান করা। তাছাড়া তুমি একমাত্র মানুষ যে আমার আসল নাম পরিচয় জানতে চাওনি। আমার গোপনীয়তাকে শ্রদ্ধা করেছো। ফেসবুকে কয়েকজন অপরিচিত পুরুষকে( যারা আমার বাস্তব জীবনে ফ্রেন্ড বা পরিবারের সদস্য নয়) আমার আসল আইডি দিলেও কোন মেয়েকে কখনো নিজের আসল আইডি দেইনি। তোমাকে দিতে চাই। যদি তুমি অনুমতি দাও।

তবে শর্ত একটাই। নিজের কন্ঠে তোমাকে অনুমতি দিতে হবে। লিখে লিখে নয়। আজ রাত বারোটায় তোমার কলের অপেক্ষা করবো ম্যাসেঞ্জারে। যদি অনুমতি না দাও দুঃখ পাবো তবে তোমাকে জোর করবো না। ”
দীপু এই মেসেজ নিয়ে আমার আর প্রবালের কাছে আসলো। বললো,
-প্রবাল সাহেব রাগ করবেন না। এটা খুব জরুরী। বেটা ঘোরেল মাল। আসল আইডি দেয়ার আগে ফোনে কথা বলে কনফার্ম হতে চাইছে, মেঘলার আইডিটা কোন মেয়ের কিনা।

মেঘলা একদিন কথা বলুক বাকিটা আমি মেসেজ লিখে ম্যানেজ করে ফেলবো। প্লিজ রাজি হয়ে যান, মেঘলাকে বাঁচাতে হলে মহিমকে দরকার।
অতএব প্রবাল অনুরোধে ঢেঁকি গিললো। সেদিন রাত সাড়ে বারোটায় কল দিলাম ম্যাসেঞ্জারে। বারোটায় দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু দীপু বললো,
-আধা ঘন্টা পর ফোন করেন, একটু আশা-নিরাশার দোলায় দুলুক মহিম।
আশা – নিরাশার দোলনায় চড়ে যে মানুষটি রাত সাড়ে বারোটায় আমার কল রিসিভ করলো তার কন্ঠ শুনে আমার বুকে ধাক্কার মতো লাগলো। কী অসম্ভব মার্জিত, সুরেলা একটা কন্ঠ! একটু কথা বলার পর তার বাচনভঙ্গীর মাধুর্য আমাকে পুনরায় বিস্মিত করলো। মহিম নিশ্চয় বাচিক শিল্পী অথবা সঙ্গীত শিল্পী। অভিনয় শিল্পীও হতে পারে।

প্রশ্নটা করায় মহিম হা হা করে ভরাট গলায় হাসতে হাসতে বললো,
– মেঘলা! আপনি আর এক সেকেন্ড দেরি করলে ঠিক এই প্রশ্নটা আমি আপনাকে করতাম। হায়! কোন মানবীর কন্ঠ এতো সুন্দর হয়!
মেঘবালক তার কথা অনুযায়ী ফোনালাপ শেষে তার আসল আইডির লিংক পাঠালো। লিংক অপেন করে বোকা হয়ে গেলাম আমি ও দীপু। তার আসল আইডির নাম -হারুন চৌধুরী ( প্রকাশ)
মহিম নয়!
চলবে.

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধদরিদ্রের কুরসিনামা -কবি শাহিনা খাতুন‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ‘মহামারি প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন’- কামরুল হাসান কামু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে