শিরনী তলায়
কবি শাহিনা খাতুন
শিরনী গাছের শাখায় শাখায়
পাখিদের হাট ছিল
অনেক কথা কইতো তারা সন্ধ্যাবেলা
মেয়ের বিয়ে, ছেলের অসুখ।
শরিফা বিবির স্বামীর মন
শেফালী রানীর শাড়ীর ভাজে আটকে গেছে।
তুরাগ নদীর পূর্ব পাড়ে
ছমিরনের বাড়ির ধারে
খরকূটোর এক ঘর ছিলো
বৃষ্টি এলে বাঁশের আড়ায়
শুকনো শাড়ী তুলতে গেলো
এমন সময় কালকেউটে ঘরে এসে
পুতের পায়ে বিষ ঢুকালো
কত চেষ্টা কত তদবির কী আর করা
জানেনা কোন অভিশাপে এমন হলো
বিষুদবার রাতের বেলায়
শিরনী তলায় নিয়ম করে
সে মোমের আলোয় দুঃখ জ্বালায়
তবু পূত্র যদি ভাল থাকে তবেই সুখ।
পা ভেঙ্গেছে আমিনুদ্দির
ক্র্যাচ নিয়েও নিয়ম করে ঘুরে বেড়ায়
পায়ের ব্যাথা সেরে গেলে
এখানে সে বাতি দেবে
আগরবাতি মোমবাতি গোলাপজল
সেইসাথে চোখের পানিও মিশিয়ে দেবে।
ময়না পাখি গাছের ডালে কেন্দে আকুল
এত দুঃখ তার পরানে কী করে সয়?
আহারে কত পরান দুঃখ জমা করতে আসে।
সুরে কাঁদে বেসুরে কাঁদে শ্যামা পাখি
বন্ধু তারে বলে গেল একটু বস
এই যে আমি ফিরবো যে খুব তাড়াতাড়ি
সেই যে গেল আর এলোনা
দুঃখ তার পাহাড় সমান হয়েছে ভারী।
কুকুরছানা মনের সুখে ঘুরে বেড়ায়
খাবার অভাব ছিলনা তার কোনদিনও
মা না থাকলেও মাসি আছে
কোনখানে খাবার পড়ে আছে
মাসি এসে কানে কানে বলে যাবে
ভুল হবেনা একদিনও।
রাত বেড়ে যায় জিকির ধ্বনি বাড়তে থাকে
সুর করে কেউ কোরান পড়ে
চোখের পানিতে কোরানশরীফ ভিজতে থাকে।
আর একপাশে একটি পাগল
চুপটি করে বসে থাকে
কিসের আশায় বসে থাকে কেউ জানেনা
কুকুরগুলো মাঝে মাঝে তার পাশে বসে থাকে
কথা কয়না, জিকির করেনা, গান গায়না
বন্ধু তোমারও যদি দুঃখ থাকে
আসতে পার কান্না জমা রাখতে পার
বিষুদবারে শিরনী তলায় দুঃখ জ্বালায়।l