বেণুবর্ণা অধিকারী : আমাদের লঞ্চ ছুটছে কটকার দিকে, আকাশ মেঘে ঢাকা। শীত তেমন জোরালো নয়। দুইদিকেই সুন্দরবন। আমাদের লঞ্চ কখনো এপাড় ঘেষে, কখনো ওপাড় ঘেষে যাচ্ছে। পাড়ে দেখা যায় হরিণ, বন্য শুকর, বনমোরগ মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে। লঞ্চের পাইলট মাঝে মাঝে ঘুরে আরো কাছে নিয়ে যায় ক্লোজ দেখার জন্য।
অনেকটা পথ যেতে যেতে হঠাৎ সমস্বরে চিৎকার ‘বাঘ, বাঘ’। লঞ্চ অনেকটা কাছাকাছি নিয়ে গেল। বাঘমামা ছোট ক্যানেল সাঁতরে পেরুচ্ছিল। উঠে একটা ঝাকা দিয়ে পানি ঝাড়লো। তারপর উধাও হয়ে গেল। ছবি তোলার অবকাশ পাওয়া গেল না। যাক একঝলক বাঘের দেখাও হলো। পায়ের ছাপ অনেকেই দেখে, বাঘ দেখাটা অনেকের জীবনেই দূর্লভ।
লঞ্চ চলছিল অনেকটা স্লথ গতিতে। আমরা কটকা যখন পৌঁছালাম তখন বনে আঁধারের চাদর ঘনিয়ে আসছিল। হরিণেরা দলে দলে বিহারে এসেছে। লঞ্চে বসেই দেখতে দেখতে রাত নেমে এলো। রাতে জমে উঠলো আড্ডা, পরিচিতি, খেলা। একসময় ডিনার করলাম। ডিনার শেষে শুয়েই পড়েছি।
সুমন এসে ডাকলো, দিদি উপরে আসুন, চাঁদ দেখবেন না? গেলাম রাতের বনের নিস্তব্ধতার সৌন্দর্যই অন্যরকম। সেখানে জমজমাট আসর বসলো, আড্ডা আরো সরব হলো। অনেক রাতে ঘুমাতে গেলাম, কথা ছিল ভোর ৫ টায় কটকা বিচে গিয়ে সূর্যোদয় দেখব। কিন্তু সকালে এত ঠাণ্ডা পড়েছে যে ভোরে ওঠাই সম্ভব হয়নি।
আটটায় নাস্তা খেয়ে আমরা ট্রলারে করে কটকার এইপাশে নামলাম। তারপর প্রায় ৩ কিমি হেঁটে বিচে যেতে হয়।
এই হাঁটার মজাই আলাদা। সুন্দরবনের গাছের একান্ত সান্নিধ্য। কত গাছ যে দেখলাম সেখানে, কিছু চেনা অধিকাংশই অচেনা। আমি সিকিউরিটি গাইডের সাথে সাথে ছিলাম, উদ্দেশ্য গাছ চেনা। এ সময় ডাকুর গাছে ফুলে ফুলে ছেঁয়ে আছে।
বিচটা অন্যরকম, জল দেখলে সেখানে নামতে ইচ্ছে করবেই। কিন্তু শীতের জন্য তেমন ভাবে নামা হয়নি। কেওড়ার বন চারদিকে। এটা হরিণের বিচরণকেন্দ্র। গোলপাতা, সুন্দরী, কেওড়া, ছইলা, ডাকুড়, হরগোজা, টাইগারপ্ল্যান্ট।
ফাঁকে ফাঁকে রক্তকুচ লতা, কালিয়ালতা, আমুর, পেয়ারা, বড়ই, জাম, আম, খেঁজুর, তাল, আরো কিছু পাম দেখলাম এই বনে।
এছাড়াও নাম না জানা আরো কিছু গাছ আছে যা চিনি নাই।
আধাঘন্টা সাগরে ভিজে আবার দীর্ঘপথ হেঁটে ফিরে এলাম লঞ্চে।
ক্রমশঃ