ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) -পর্ব-০২

0
593
www.natorekantho.com

ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে ১০৫৮ খ্রিস্টাব মোতাবেক ৪৫০ হিজরি সনে হুজ্জাতুল ইসলাম আবু হামেদ মোহাম্মাদ আল-গাজালী (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মাদ আল-গাজ্জালী। গাজ্জাল শব্দের আভিধানিক অর্থ সুতা কাটা ।

কারও মতে ইমাম গাজ্জালীর বংশের লোকেরা সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন, তাই তাদের বংশ উপাধি গাজ্জালী নামে পরিচিত। এই মহামনীষী খ্রিস্টাব্দ ১১১১ সনের ডিসেম্বর মাস মোতাবেক ৫০৫ হিজরি সনে নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে সুস্থ অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মৃত্যুর দিন ভোর বেলায় তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং তার ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে নিজ হাতে কাফনের কাপড় পরিধান করেন এবং কেবলার দিকে মুখ করে শুয়ে পড়েন। এভাবেই এই নশ্বর পৃথীবি থেকে বিদায় নেন এই মহান দার্শনিক। ইরানের অমর কবি ফেরদৌসীর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এটাই বহুল প্রচলিত।

ছোট বেলায়ই তিনি তার বাবাকে হারান। তার শিক্ষা জীবন ও বাল্যকাল কাটে তুস নগরীতে। ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•) তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। পঞ্চম শতকের মধ্যভাগে এমন এক পরিস্থিতিতে ইমাম গাজ্জালী জন্মগ্রহণ করেন যখন পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শণের বিস্তার লাভ করে ছিল।

সে যুগে যে শিক্ষা পার্থিব উন্নতির বাহন হতে পারতো, প্রথমতসেই ধরনের শিক্ষা তিনি লাভ করেন। বাজারে যেসব বিদ্যার চাহিদা ছিল, তাতেও তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেন। অতঃপর এ বস্তুকে নিয়ে তিনি ঠিক সেখানেই পৌঁছেন সেখানকার জন্যে এটি তৈরি হয়েছিল এবং তৎকালে একজন আলেম যতদূর উন্নতির কল্পনা করতে পারতেন, ততদূর তিনি পৌঁছে যান।

তিনি পরিণত বয়সে ৪৮৪ হিজরিতে বাগদাদ গমন করেন। বাগদাদে তত্কালীন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনায় যোগ দেন। মুসলিম দর্শন, ফিকাহ, ইলমুল কালাম (ধর্মতত্ত্ব) বিষয়ে তিনি সর্বকালের প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীদের একজন।

ইমাম গাজ্জালীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতি ছিল অগাধ তৃষ্ণা। নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা তার এই জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করতে পারেনি। তাই অল্প সময়ের মধ্যে নিযামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনা ছেড়ে সৃষ্টি রহস্যের সন্ধানে তিনি পথে বেরিয়ে পড়েন।

প্রায় দশ বছর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে অবশেষে আবার তিনি বাগদাদে তিনি তৎকালীন দুনিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদের নেজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর নিযুক্ত হন। নেজামুল মুলক তুসী মালিক শাহ সালজুকী ও বাগদাদের খলিফার দরবারে যোগ্য আসন লাভ করেন। সমকালীন রাজনীতিতে এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেন যে, সালজুকী শাসক ও আব্বাসীয় খলিফার মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ দুর করার জন্যে তাঁর খেদমত হাসিল করা হতো।

পার্থিব উন্নতির এই পর্যায়ে উপনিত হবার পর অকস্মাৎতাঁর জীবনে বিপ্লব আসে। নিজের যুগের তত্ত্বগত নৈতিক ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও তমুদ্দুনিক জীবনধারাকে যত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন, ততই তাঁর মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলতে থাকে এবং ততই বিবেক তারস্বরে শুরু করে যে, এই পুঁতিগন্ধময় সমুদ্রে সন্তরণ করা তোমার কাজ নয়, তোমার কাজ অন্য কিছু।

অনুবাদ করা হয়েছে : Al-Ghazali and the Revival of Islamic Scholarship আর্টিকেল থেকে।
অনুবাদক : মুহসিন সুরী
সম্পাদনায় : খন্দকার মাহাবুবুর রহমান

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“প্রান্তিক বোধ” কবি কাজী আতীক“এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধশ্রদ্ধেয় মুক্তার হোসেন‘এর জন্মদিনে “নাটোর কণ্ঠ’ পরিবারের শুভেচ্ছা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে