ওরোমো নারীদের রক্ষাকবচ ‘সিনকিউ’ !

0
146

ভায়লেট হালদার : ওরোমো জাতি ইথিওপিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ হলেও তারা মূলত অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া এক নৃগোষ্ঠী। এ জাতির নারীরা নিজেদের ও তার পরিবারকে রক্ষা করেন সিনকিউ দিয়ে।

‘সিনকিউ’ মানে লাঠি। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা এই ‘সিনকিউ’ তথা লাঠি তৈরি করেন। আর মেয়ের মা রক্ষার প্রতীক হিসেবে বিয়ের দিন সেই লাঠিটা মেয়ের হাতে তুলে দেন। বিয়ের পর এই ‘সিনকিউ’ সাথে নিয়ে মেয়ে স্বামীর সাথে শ্বশুর বাড়িতে যাত্রা করে।

ইথিওপিয়ার ওরোমো জনগোষ্ঠীর প্রাচীন যে গাডা ব্যবস্থা আছে তার একটি অংশ হচ্ছে এই সিনকিউ। ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে যখন ওরোমোদের গাডা সিস্টেম বা ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়। তখন পুরুষদের হাতে বিভিন্ন অস্ত্র দেওয়া হতো যাতে তারা পশু শিকার করতে পারে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

এছাড়াও মেয়েদের হাতে দেওয়া হত সিনকিউ, যাতে তারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দমে না গিয়ে সমান তালে লড়াই করতে পারে। সেই সময় থেকেই বিয়ের সময় মেয়ের বাবা এই সিনকিউ তৈরি করেন। আর মেয়ের মা সেটা মেয়ের হাতে তুলে দেন।

গাডা ব্যবস্থা হলো ওরোমো জনগণের দ্বারা পরিচালিত একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা- যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান থেকে বিকশিত হয়েছে।

এই ব্যবস্থাটি ওরোমো জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় কার্যকলাপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে; যেমন- পরস্পরের সহিত বিরোধ নিষ্পত্তি, ক্ষতিপূরণ এবং মহিলাদের অধিকার রক্ষার নিয়ে কাজ করে।

ঐতিহ্যবাহী গাডা আইনে বলা হয়েছে, ‘একজন বিবাহিত নারীকে অপমান বা কোনো ধরনের নির্যাতন করা যাবে না। এটা একটা অপরাধ।’ এছাড়াও নিয়মমাফিক তাদের নেতা পরিবর্তিত হয়।

পারিবারিক জীবনে যদি কোন পুরুষ নারীর উপর যে কোন নির্যাতন করতে উদ্যত হন, তখন ঐ নারী সিনকিউ হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে মুখ দিয়ে বিচিত্র আওয়াজ বা শব্দ করতে থাকেন, যাতে করে আশেপাশের অন্যান্য নারীরাও জানতে পারে যে তার উপর নির্যাতন হয়েছে।

আর তার মুখ নিঃসৃত শব্দ শুনে ঐ গ্রামের প্রতিবেশী সব নারীরা সিনকিউ হাতে নিয়ে ঘরে থেকে বেরিয়ে আসেন এবং একত্রে জড় হন। নির্যাতিত নারীটিকে মাঝখানে বসিয়ে জড় হওয়া সকল নারী তাকে ঘিরে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে,

তারাও মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে থাকে যতক্ষণ না গ্রামের মাতবর ও বয়োজ্যেষ্ঠরা ছুটে আসেন, এরপরে ওখানেই সালিশ বসানো হয়, সকল নারী ঐ নির্যাতক পুরুষের বিচার চান। ঘটনা শুনানির পর নারীদের সহিত আলোচনা করে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের রায় শোনান।

রায় অনুযায়ী নারীর নির্যাতনকারী বা নির্যাতক স্বামী সবার সামনে ওই নারীর কাছে মাফ চান। একই সঙ্গে সবার সামনেই প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনো তার স্ত্রী বা নারীর প্রতি নির্দয় হবেন না। যদি সে পুনরায় একই কাজ করে তার জন্য ভবিষ্যতে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়।

প্রতিটি ওরোমো নারী তার মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত লাঠিটি আমৃত্যু যত্ন করে রাখে যাতে- তারা তাদের ঐতিহ্যকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লালন করে যেতে পারেন।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকার পক্ষে গণসংযোগ এমপি বকুলের সহধর্মিণীর
পরবর্তী নিবন্ধবাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ নৌকা সমর্থকদের  বিরুদ্ধে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে