জানতে ইচ্ছে করে
মাঝেমধ্যে ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে
হঠাৎ যদি হারিয়েই যায় আমি
যদি মৃত্যুতে মিশে অধরা হই চিরতরে,
আমিহীন পৃথিবীতে কেমন থাকবে তুমি?
আমার শোকে উন্মাদ হবে?
সঙ্গিহীন শূন্যতায় কি খুব পুড়বে হৃদয়?
মনজমিন কি সবটুকু সবুজ হারাবে?
ব্যথার ক্যাকটাসে ভরে যাবে কি হৃদভুমি?
বিচ্ছেদের বিষণ্ণ ধূসরে ঝাপসা হবে কি
তোমার দিবানিশি?
দীর্ঘ অমাবস্যায় ডুবে যাবে কি
ওই বাঁকা চাঁদ অধরের চির প্রেমময় হাসি?
আমার তরেই সারাবেলা
নোনাধারায় সিক্ত রবে কি আঁখি?
নাকি অতি দুঃখে পাথর রক্ষতায়
কাঠিন্যের ছাপ পড়বে তোমার দু’চোখে?
বড় বেশি জানতে ইচ্ছে করে
আমার মরণের পরে
কতটা একাকীত্ব বাসা বাঁধবে তোমার বুকে?
২৭-৬-২০২০.
বিষণ্ন সন্ধ্যা
মাঝেমাঝে গোধূলি বিকেলটাকে আড়াল করে
এক আকাশ মন খারাপের আঁধার জড়িয়ে
সন্ধ্যা নামে আমার পশ্চিমের বারান্দায়।
অস্তরাগের লালিমার বহ্নিতে
হৃদয় অতলে গুমরে গুমরে পুড়ে পুরোনো ক্ষত,
ধূপের সুবাসে আচ্ছন্ন প্রকৃতিতেও
ছড়িয়ে থাকে বিষাদের উটকো গন্ধ।
থেমে থেমে ছুয়ে যায় সান্ধ্য সমীরণের সাথে
সুদূর হতে ভেসে আসা বিস্মৃতির তিক্ত ঘ্রাণ,
সহসাই ভিজে চোখ,ব্যথায় সিক্ত হয় পরাণ।
কেন জানি অচেনা শঙ্কায় শঙ্কিত হয় মন!
বুকের ভিতর ধোঁয়া ধোঁয়া বিষণ্নতায়
কেবলই আমার নিঃশ্বাস আটকে যায়
লালিমা আড়াল করা এমন অদ্ভুত আঁধারি সন্ধ্যায়।
২৭-৬-২০২০.
তুমি আসবে বলে
তুমি আসবে বলে
উঠোন কোণে মাধবীলতার মুকুলের কানে
ভ্রমরের গুঞ্জরণ,
তুমি আসবে বলেই
আমার এলোচুলে বাতাস খেলা করে
দেহমনে এক অদ্ভুত শিহরণ!
তুমি আসবে বলে
সবুজ কুঁড়ির খোলস ছিঁড়ে পাপড়ি খুলে
লাজে রাঙা হয় কৃষ্ণচূড়া,
তুমি আসবে বলেই
আঁধারের মলিনতা সরিয়ে সাতরঙে হাসে রঙধনু
রঙিন গগনপাড়া!
তুমি আসবে বলে
রোদে পোড়া তপ্ত ভূমি প্লাবিত হয় শীতল জলে
ভরা শ্রাবণের বর্ষায়,
তুমি আসবে বলেই
খরস্রোতা ময়ূরাক্ষীর বুকেও জোয়ার আসে
তরঙ্গিত যৌবনের উচ্ছলতায়।
তুমি আসবে বলে
দখিণা হাওয়ায় মিশে চিরচেনা সেই মিষ্টি সুঘ্রাণ
মাতাল মাদকতা,
তুমি আসবে বলেই
নৈঃশব্দের মাঝেও ধ্বনিত হয় কাঙ্ক্ষিত পদধ্বনি
চিত্তে ব্যকুলতা।
১৫-১০-২০১৯ (রোদ্দুর কবিতা সংকলনে প্রকাশিত)
স্বপ্ন সঞ্জিবনী
পৃথিবীর ভয়ঙ্কর বৈরী সময়ে
দ্বিগুণ উল্লাসে যুবতী রঙ মেখে
নিমগ্নতায় সাজতে বসেছে প্রকৃতি,
চার দেয়ালের কারাগারে নির্বাক দাঁড়িয়ে
হতাশায় কুঁকড়ে যাচ্ছে অযুত কোটি প্রাণ,
মনের আকাশ ঢেকেছে দীর্ঘ সূর্যগ্রহনে
সম্মুখে পেছনে দূর্ভিক্ষের হাতছানি
দিন কি রাত গুমোট বিষণ্ণতায়
প্রতিটা প্রহরই এখন ধু ধু অন্ধকার!
হাহুতাশে ছুঁয়ে যায় বাতাসের হাহাকার!
জানি, হয়তো একদিন কেটে যাবে
সময়ের এই বৈরীতা
থেমে যাবে সব ছোঁয়াচে ভাইরাসের উৎপাত,
থেমে যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল
বিষণ্ন বাতাসেও ভাসবে না আর
কর্পূরের উৎকট ঘ্রাণ।
সব অবরুদ্ধতা ঘুচিয়ে মুক্ত হবে বিশ্বপ্রাণ।
স্বজনহারা শোকের স্তব্ধতা কাটিয়ে
পাথর হৃদয়ের মরুপ্রান্তরে
হয়তো আবারও জাগবে নতুন আশা,
নোনাধারায় নির্জীব চোখেও
স্বপ্নের ঝিলিকে জ্বলবে অনির্বাণ আলো,
দীপ্ত মণিতে নতুন পটভূমিতে
আবারও লেখা হবে নবীনের গল্পকথা,
দীর্ঘ অবসরের নৈঃশব্দ্য ভেদ করে
কোলাহলে মুখরিত হবে দৈনন্দিন ব্যস্ততা।
২০-৬-২০২০.
অপেক্ষা
আষাঢ়ি বর্ষণের তিমির রাতে,
কার আশায় জেগে থাকে বধূ বিষণ্ণ সজল নেত্রে?
কার জন্য পরাণ পুড়ে তার গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া?
কার জন্য উতলী উঠে শোকে বিহবল হিয়া?
কার আশায় দৃষ্টি বিছায়ে থাকে আঁধার পথপানে?
কার প্রতীক্ষায় জ্বেলে রাখে দ্বীপ অহর্নিশ গৃহকোণে?
কার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ পাহারায় ক্ষণে ক্ষণে?
কার জন্য নির্ঘুম রাত্রির প্রহর কাটে গুণে গুণে?
আজ আষাঢ়ের ঝরঝর বর্ষনে
হাওয়ার ঝাপটায় বৃষ্টির ফোঁটার শীতল স্পর্শনে,
কার আগমনি বার্তা শোনায় বিরহিণীর কানে কানে?
ঝিরিঝিরি বাতাস বয় গৃহের পেছনের বেণুবনে,
টিপটিপ বৃষ্টি আর ঝরা পাতার মর্মর শব্দ শুনে শুনে,
বিরহিণীর সজাগ দৃষ্টি খুঁজে চকিত চঞ্চল নয়নে,
প্রতীক্ষিত কারো পদচিহ্ন পড়লো কি তার উঠোনে?
আজ বিজলি চমকিত ঝড়ো রাতের নিকষ অন্ধকারে,
কার কথা মনে পড়ে যায় দূুঃখিনী বধূর অন্তরে?
১৪-৫-২০১৮.