করোনা, বিপর্যস্ত আদিবাসী জনজীবন,আদিবাসীরা কি ত্রাণ বঞ্চিত থাকবে?

0
520
করোনা, ভাইরাস

কালিদাস রায়, নাটোরকন্ঠ:–

বর্তমানে চলমান করোনা ভাইরাসের করাল ধাবায় বিপর্যস্ত সারাবিশে^র লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮২ হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ছে করোনা’র করাল থাবায়। পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়। চীনের পর ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, আমেরিকায় হাজার প্রায় অর্ধলক্ষের বেশি মানুষ এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

করোনা মোকাবিলায় সমগ্র বাংলাদেশে চলছে জনসাধারণকে ঘরে রাখতে জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আর এই মহামারি করোনা ভাইরাসের করাল থাবায় নাটোর জেলায় বসবাসরত পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে অবস্থান করছেন দিন এনে দিন খাওয়া এসব জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। এদিকে ত্রাণ না পাওয়ায় সংকট চরম আকারে।

এই কঠিন সময়ে সরকারিভাবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন থেকে অসহায় হতদরিদ্রদের দ্বারে দ্বারে ত্রাণের বস্তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে। খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে। মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এই মহতি কাজে পিছিয়ে নেই নেতা-কর্মী, কিংবা বেসরকারি সংস্থা। ত্রাণ দিয়ে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে গেছে ফেসবুক পাড়ায়। তবে, দুখের বিষয় হচ্ছে, এতো মহতি আয়োজনের মধ্যে বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে আদিবাসীরা। জেলার সর্বত্র অন্যান্য পাড়া মহল্লায় ত্রাণের বস্তা পৌছালেও আদিবাসী পাড়াগুলো এখন সরকারি-বেসরকারিভাবে কাউকে ত্রাণের বস্তা নিয়ে এখন দেখা যায়নি।

করোনার ভয়াল থাবায় দিন এনে দিন খাওয়া বিপর্যস্ত, ঝুকিপূর্ণ আদিবাসীদের কে বাঁচাবে, কে বুঝবে আদিবাসীদের কষ্ট? প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে জনসাধারণের ঘরে অবস্থান নিশ্চিত ও তাদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে সব ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এই যখন অবস্থা তখন, কেমন আছেন জেলায় বসবাসরত আদিবাসীরা? আদিবাসীরা কি করোনা ঝুঁকির বাইরে? তাদের কি কোন প্রণোদনার দরকার নেই? অজ্ঞাতকারণে যেন আদিবাসীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে এই মহামারির সময় অন্যান্যদের মত নিশ্চিত আদিবাসীরাও মারাত্বক ঝুঁকিতে রয়েছে।

অথচ কত না সুক্ষভাবেই এই পিছিয়ে পড়া জাতি গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর আগে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেলার প্রত্যেক উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করা হলেও কোন আদিবাসী পাড়ায় এ ধরণের কার্যক্রম চোখে পড়ে নি। এখানেও আদিবাসীরা বঞ্চিত। সরকার দলীয় এমপি, নেতারা ত্রাণ বিতরণ করছেন, সেখানেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নামের তালিকা নেই। সরকারি অফিসে আদিবাসীদের যে তালিকা রয়েছে সেটাও টেবিলে অনেক ফাইলের নিচে চাপা পড়ে আছে। কবে খুলে দেখা হবে এইসব জনগোষ্ঠীর নামের তালিকা? তো এই হলো অবস্থা।

এদিকে বলা হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী হত দরিদ্রদের ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়া হবে, কিন্ত ঠিক কবে নাগাদ আদিবাসী হতদরিদ্ররা ত্রাণ পাবে তার সঠিক কোন তথ্য নেই। এই পিছিয়ে পড়া লোকজনের উপর অবশ্যই নজর দিতে হবে। না হলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এই অনগ্রসর সমাজ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি এভাবেই চলবে সবকিছ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনগ্রসর স্বতন্ত্রবৈশিষ্ট্যমন্ডিত জাতির জন্য বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে।

আদিবাসীরা বিশ্বাস করেন, সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে আদিবাসীদেরও হক রয়েছে। তারাও এই ত্রাণ পাওয়ার দাবিদার। করোনা মোকাবিলায় এদের নিজেদের কোন ধরণের সক্ষমতা নেই। সরকারি নানা প্রণোদনার মধ্যে এই অনগ্রসরদের না রাখলে এই কঠিন সময়ে অকুল পাথারে ভেসে যাবে এই জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এরা। এই যখন অবস্থা তখন আদিবাসীদের জন্য স্বল্প পরিসরে হলেও জাতীয় আদিবাসীদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও এনএনএমসি ফাউন্ডেশন।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও এনএনএমসি’র অ্যাডভোকেসী প্লাটফর্মের নাটোর জেলার সাধারণ সম্পাদক কালিদাস রায় জানান, এনএনএমসি’র অ্যাডভোকেসী প্লাটফরম নাটোর জেলার নাটোর সদর, নলডাঙ্গা এবং সিংড়া উপজেলায় অসহায় হতদরিদ্র আদিবাসীদের মাঝে বুধবার থেকে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি আরো জানান, আমি যতটা পারছি ব্যক্তিগত প্রটোকল ব্যবহার করে আদিবাসীদের ত্রাণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে আমাদের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ঠ নয়, সরকারি-বেসরকারিভাবে, মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মীদেরকে আদিবাসীদের মাঝে ত্রাণের ব্যবস্থা করা উচিত। কোনভাবেই যাতে এইসব জনগোষ্ঠী বাদ না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবাগাতিপাড়ায় প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা মান্য করছে ব্যবসায়ীরা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে কান্দিভিটুয়া দুই বাড়ি লকডাউন,নতুন ৪ জনের নমুনা সংগ্রহ,আইসোলেশনে দুইজন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে