“ছড়ার কথা “- কামাল খাঁ

0
532
www.natorekantho.com

ছড়ার কথা-১ 

ছড়া লোকসাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা।কিন্তু বাংলা সাহিত্যের পথচলার শুরুর দিকে আলাদা করে কোন ছড়াকার পাবেন না । রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ছড়া সাহিত্য একটি মর্যাদার আসন পায়। যা শিশু সাহিত্য পর্যায়ে গৃহীত হয়ে আসে। অন্যদিকে বাংলা ছড়া সাহিত্যের দুই দিকপাল সুকুমার রায় এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তে’র পরিচয় শিশু সাহিত্যিক হিসেবেই আজো আমাদের কাছে বর্তমান । এরপর আরো অনেকেই এধারায় যুক্ত হয়েছেন। এঁরা পাঠক প্রিয়তাও পেয়েছেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ক্লাসে,গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় আসেন নি। হাল আমলে ছড়াকারের সংখ্যা প্রচুর, শিশুদের কাছ থেকে এগিয়ে বড়দের উপাদেয় নিয়ে রচিত হচ্ছে ছড়া। তবু ছড়া আর ছড়াকারের শিশুত্ব যেন ঘোচে না।অথচ ছড়া সাহিত্যের বাইরেও সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রবাদে শুদ্ধ-বচন আকারে এসেছে পরিবার-সমাজ-জাতি সুরক্ষায়। বাঙালী জাতির ভাষায় মানুষের মনুষত্ব তৈরির প্রধানতম নিয়ামক প্রবাদের ছন্দোবদ্ধ প্রকাশ, সেওতো ছড়ায় । এতকিছু বলে লাভ কিছু আছে বলে মনে করি না। তবু নিত্যকার দেখা থেকে যে বোধ তৈরি হয় তাতে মনে হয় সাহিত্যের অপরাপর শাখার চেয়ে ছড়া অধিক পঠিত হয়েও তার বামণত্ব ঘোচে না।

বিষয় বৈচিত্র্যে,সমাজের অসঙ্গতি চিত্রায়নে,
লড়াইয়ে-সংগ্রামে,শব্দের চমৎকারিত্বে কিংবা অন্তমিলের নব নব প্রকৌশলে ছড়া আজ অনেক অগ্রসর। তাই সাহিত্যের অপরাপর শাখার চেয়ে অচ্ছ্যুঁৎ ভাববার কারণ দেখি না ।

ছড়ার কথা -দুই

শিশুরা অ আ ক খ পড়তে পড়তে ছড়ার দোলনায় চড়তে শিখে। পাঠের দুলুনি তাকে মজা দেয় । দুলতে দুলতে পড়ে । পড়তে পড়তে দুলে । বর্ণমালা আর স্থির থাকে না চলমান হয়ে ওঠে । ছড়ার হাত ধরে ভাষার দোলনায় শিশুদের প্রথম যে দোলায়িত পাঠ তা নির্মল আন্দের । তাই বুড়ো হয়েও মানুষ সেই শিশু-পাঠ্য মনে রাখে। এই কাজটা আপাতত সহজ মনে হলেও, আসলে সহজ না। শিশুরা নকলে আকৃষ্ট হয় না, হলেও নকল চিনতে পারলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় । এই যে আদিও আসল দোলায়িত ছন্দোবদ্ধ শব্দসমাহারের আয়োজন তা বড় কঠিন কাজ। বাইরে থেকে সহজ মনে হয় । কিন্তু সেই সহজকে ধরা কঠিন । কবিগুরু যেমন বলেছিলেন –
সহজ কথা কইতে আমায় কহো যে,
সহজ কথা যায় না বলা সহজে ।
পাঠে যা সহজ, সৃষ্টিতে তা কঠিন । শ্বাশত আর চিরকালের সুরের সাথে এক না হলে এই দোলা প্রাণস্পর্শ করে না। আজীবন যিনি সাহিত্য পড়েন না, কিংবা ভালোও বাসেন না, তিনি ভাষা শিখতে শিখতে ছড়া আর কবিতার ভেতর দিয়ে, ভাষার ভাবকে রপ্ত করতে বাধ্য । এ দায়িত্ব ছড়ার ওপর কালে কালে বর্তেছে । কখন কীভাবে তা আমরা কেউ জানি না । আবার মা শিশুকে ঘুমও পাড়ান ছড়া দিয়েই। শিক্ষার প্রবেশদ্বারেই ছড়া যেন এগিয়ে আসে বিনা ফরমায়েশে । তবু ছড়া উচ্চাসনে আসতে পারে নি । এ প্রশ্ন আমার বহুদিনের । জনি না অন্যরা এ নিয়ে কী ভাবেন,না-ভাবেন তবে একজন আমাকে বলেছেন- ‘ ছড়া লিখে প্রচুর নগদ হাততালি পান। আর সে আনন্দ উপভোগ করেই ছড়াশিল্পীরা লিখে থাকেন ।’ একথা আমি অস্বীকার করি না ,তবে এ যেন পথে পথে ঘুরে গান করা গায়কদের মতো। পাবলিকপ্লেসে দাঁড়িয়ে গান গাইলে সিকি,আধুলি আর দু-এক টাকা মানুষ খুশি হয়ে ছুঁড়ে-ফিকে দেয়। এতেও সম্মান আছে বটে, তবে মান নেই। (চলবে)

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“একটু ছুঁয়ে দাও, কিছুটা ছুঁয়ে দেই”-নাজমুল হাসানের কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“ব্যাংক” কবি শাহিনা রঞ্জু‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে