তুমি যাবে !- সুমনা আহম্মেদ

0
630
Sumona

তুমি যাবে !- সুমনা আহম্মেদ

শুভ নববর্ষ …নতুন বছরটাকে এইভাবে বরন করতে হবে ভাবিনি কখনো। বিশ্ব জুড়ে মহামারীতে তুমি আমি আমরা সবাই গৃহবন্দি। খুব ইচ্ছে ছিল তোমাকে একবার নববর্ষে নাটোরে নিয়ে যাব। তারপর সারাদিন তোমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরে বেড়াব। নাটোরের রাস্তাঘাট এখনো তেমন ভালো না। বেশ ভাঙ্গাচোরা। তাই রিক্সাতে তোমার কিন্তু এক হাত দিয়ে পেছন থেকে আমাকে শক্ত করে ধরে রাখতে হবে, পারবে তো? নতুন বছরের প্রথম ভোরের সূ্র্যোদয় দেখে তোমাকে নিয়ে বের হয়ে পরবো।

প্রথমে তোমাকে নিয়ে যাব বৈশাখী মেলায় —সেখানে খুব মজার গুরের জিলেপি পাওয়া যায়…তোমাকে গরম গরম জিলেপি খাইয়ে আমাদের দিন শুরু করবো। তারপরে মেলায় ঘুরে বেড়াব দুজনে। আমাকে দুহাত ভর্তি লাল কাঁচের চূড়ি আর বেলী ফুলের মালা কিনে দিতে হবে। নইলে কিন্তু আঁড়ি… মেলা শেষে তোমাকে কালীবাড়ীতে নিয়ে যাব নাটোরের সেই নামকরা কাঁচাগোল্লা খেতে—একবার খেলে সারাজীবন মনে থাকবে। তারপরে আমরা যাব বিখ্যাত অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণীভবানীর বাড়ীতে। সেখানে এখনো ধ্বংসাবশেষের মাঝে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে একটা বকুল গাছ। জানিনা বকুল ফুল তখন থাকবে কি না? তারপরেও তোমাকে দেখাতে নিয়ে যাব আমার প্রিয় গাছটিকে। ছোটবেলায় অনেক ফুল কুড়িয়েছি ওখানে।

রানীভবানীর বাড়ীতে হেঁটে হেঁটে তুমি যখন ক্লান্ত তখন তোমাকে নিয়ে যাব দিঘাপতিয়ায়। সেখানকার মজাদার ‘মালাই’ চা খাওয়াবো। চা খেয়ে হেঁটে হেঁটে নিয়ে যাব আমাদের রাজার বাড়ীতে। আজ যেটা গনভবন। সেখানকার দেয়ালগুলো আজও রাজকুমারী ইন্দুবালার কথা বলে…কি যে অদ্ভুত ভালোলাগার একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে কখন যে বেলা শেষ হয়ে আসবে তুমি বুঝতেও পারবেনা। আমরা রাণীর ঘাটে বসে দিঘীর জলে পা ডুবিয়ে সূর্যাস্ত দেখব। জানো, আমাদের নাটোরের সূর্যাস্ত সারা পৃথিবীর থেকে আলাদা। আর অনেক বেশী ভাইব্রেন্ট। জন্মস্থান বলে তো কথা।

সূর্যপটে নামার পরে যখন চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে তখন আবার রিক্সায় করে ফিরে আসবো আমাদের বাড়ীতে—ফেরার পথে তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো শুকলপট্টি। যেখানে এখনো শুকলদের পুরানো বাড়ীগুলো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। তুমি কি জানো, সেখানেই একটা বাড়ীতে তোমার আমার প্রিয় জীবনানন্দ থাকতেন। জানিনা নাটোরের বনলতা সেন বলে আদৌ কেউ ছিলো কিনা, তবে সেই বাড়ীতে বসেই রচিত হয়েছিল সেই বিখ্যাত ‘বনলতা সেন’ কবিতা।

শুকলপট্টি ঘুরে ছায়াবাণী সিনেমা হলের সামনে একটু থামবো। ওখানে পাওয়া যায় আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ‘মাখনদা’র ঝালমুরি’। তুমি তো জানো ঝালমুরি আমার কতো প্রিয়। তারপরে দুজনে রিক্সায় ঝালমুরি খেতে খেতে বাড়ী ফিরবো। ততোক্ষনে চারিদিকে অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। সেই সুযোগে তোমাকে নিয়ে ছাদে উঠবো। রাতে আমাদের বাড়ীর ছাদটা অনেক সুন্দর। ছাদে সারা বছর মাধবীলতার রাজত্ব।

মাঝে মাঝে মাধবীলতা আর দোলনচাঁপা মনেহয় কম্পিটিশন করে মাতাল সুবাস ছড়ায়। যদি পূর্ণিমা থাকে তবে তো কথাই নাই। ছাদে শীতল পাটি বিছিয়ে তোমার কোলে মাথা রেখে সারারাত জ্যেৎস্না দেখবো….. গৃহবন্দি থেকে কত কি যে মনেহচ্ছে…

আশাকরি আমাদের গৃহবন্দিদশা খুব শীঘ্রই শেষ হবে। আমরা আবার বৈশাখী মেলায় যাব…হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াব। বুক ভরে নিশ্বাস নেবো…আজ তোমাকে যা মনে এলো সব লিখে ফেললাম without any reservation. তুমি ভালো থেক। নিরাপদে থেক। লিখ।করোনা থেকে মুক্তি পেলে যা যা করতে ইচ্ছে করে সব করে ফেলবো। আর কিছু ফেলে রাখবেনা। মনে থাকবেতো?

#CoronaVirus #BengaliNewYear Las Vegas, NV, USA 04/14/2020

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধচাঁচকৈড় ডা: বিধান চন্দ্র দাম গরিব অসহায়দের সহায়
পরবর্তী নিবন্ধনান্টু ভায়ের প্রতি-দেবাশীষ সরকারের ছড়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে