নাটোর জেলাকে পাখির নিরাপদ
আবাসস্থল গড়ার চেষ্টায়
“সবুজ বাংলা”
মোঃ রবিউল ইসলাম (নলডাঙ্গা ) সময় এসেছে চেনা নাটোচরকে একটু ভিন্ন ভাবে দেখতে। বর্তমানে বনলতা সেনের ‘নাটোর হয়ে উঠেছে একটি পাখিপ্রেমের জেলায়। আর নাটোরকে পাখিবান্ধব করতে আলোকবর্তিতার মতই জলে উঠেছে,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”সবুজ বাংলা”র কয়েক শিশু-কিশোর-যুবক।
পাখি মানেই শিকার করো,রান্না করো। এক সময় গ্রাম-গঞ্জে এটি যেন রেওয়াজে পরিনত হয়েছিল। এর ফলে বন্ধুক দিয়ে, ফাঁদ পেতে, অথবা গাছে চড়ে পাখি শিকারীদের অত্যাচারে আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে গেছে নানান জাতের পাখি। তবে সরকারের কঠোর নীতির কারনে পাখি শিকার সম্পূন্ন রুপে অবৈধ ঘোষনার ফলে এখন অনেকটাই কমেছে পাখি শিকার। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এখনও। কখনও কখনও গোপনে আবার কখনও প্রকাশ্যে চলছে পাখি শিকার। এতে করে এখনও পরিবেশ পাখিদের বিচরণ নিরাপদ নয়। এই যখন অবস্থা তখন, বন্যপ্রাণী ও পাখি নিধন বন্ধে নাটোরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন”সবুজ বাংলা”।
নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে প্রচুর পাখি। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিকারীদের দৌরাত্ব্যে,চলছে নির্বিচারে পাখি নিধন। এই যখন অবস্থা তখন জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় “সবুজ বাংলা”-র পক্ষ থেকে চলছে, লিফলেট বিতরণ, মাইকি ও বিভিন্ন হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজের আশপাশসহ জনগুরুর্পূণ স্থানে বন্যপ্রাণী ও পাখিদের নিরাপত্তা বিষয়ক সাইনবোর্ড স্থাপন। চলছে প্রচার প্রচারণা।
জনসাধারণের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক সাড়া। বাংলাদেশে প্রায় ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭১৮ প্রজাতির পাখি, ১৫৭ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২ প্রজাতির উভচরসহ সর্বমোট ১০৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। কিন্তু আমাদেও অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অদূরদর্শীত কর্মকান্ডের ফলে বন্যপ্রাণী ও এদের আবাসস্থল হুমকির মুখে। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ থেকে ১৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অসংথ্য বন্যপ্রাণী আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ পাস করেছে। এ আইনে -পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও ক্রয় বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর কারাদন্ড এবং ২ লক্ষ টাকা জরিমানা। বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, আটক ও ক্রয় বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছর কারাদন্ড এবং ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। যা অনেকে জানেনও না, আবার অনেকে জেনেও তা মানেন না।
এ দিকে নির্বিচারে শিকারের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। নাটোর জেলাকে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সবুজ বাংলা”। সংগঠনের পক্ষ থেকে নাটোরে চলছে পাখি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে সচেনতা সৃষ্টি, আটক দেশীয় প্রজাতির পাখি উদ্ধার, চিকিৎসা ও অবমুক্তর পাশাপাশি পাখিদের কৃত্রিম বাসা তৈরির কাজ। বিভিন্ন স্থানে পাখিদের বাস উপযোগী নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি গাছে গাছে শত, শত মাটির হাঁড়ী বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এলাকায় পাখিদের আনাগোনা বাড়াতে প্রতিদিন দানা জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। পাখিদের বাসযোগ্য বৃক্ষ নিধন, খাদ্য সংকট, কৃষি ক্ষেতে অতিরিক্ত সার-কীটনাশক প্রয়োগ, প্রাকৃতকি দূযোগ, শিকারিদের তান্ডব বেড়ে যাওয়ায় নাটোরের দিনদিন কমতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির পাখির সংখ্যা। তাই বন্যপ্রাণী রক্ষায় ব্যাতিক্রমী কার্যকম শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সবুজ বাংলা”। শুধু তাই নয়- সংগঠনের উদ্যোগে
পরিবেশ দূষণ রক্ষায় বাড়ির চারপাশ পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে সবাইকে উৎসাহিত করা,বৃক্ষরোপন সম্পর্কে ছোটদের উৎসাহিত করা,চারা বিতরন করা,বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ রাস্থা-ঘাট সংস্কারে সহযোগিতা করা,পাখিদের নিরাপদ আবাস্থল ও বংশ বৃদ্ধির লক্ষে কৃত্রিম বাসা তৈরি করা,বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ.উদ্ধার,চিকিৎসা ও জনসচেননতা সৃষ্টি করা,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সড়ক ও বাজারে পাখির খাবার উপযোগী ফলজ বৃক্ষ রোপন করা,জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মসূচী গ্রহন করা,গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করাসহ সমাজের নানান উন্নয়নমূলক কাজে তারা জড়িত। ইতিমধ্যে পাখি সংরক্ষনসহ এসব কাছে অংশ নিতে শুরু করেছে অসংখ্য তরুন। সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে ছোট,বড় সবাইকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে”সবুজ বাংলা”মিনি টিম।
সংগঠনের উদ্যোক্তা ফজলে রাব্বী বলেন, সকলের মানষিকতা পরিবর্তনের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি আমরা। সকলের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছি পাখি ও প্রকৃতি প্রেমের ছোঁয়া। পাচ্ছি ব্যাপক সাড়া। আমাদের ভালবেসে এসব কাজে সহযোগিতা করছে ছোট-সকলের সকলেই। চোখের সামনেই পাখি শিকার হলেও, যারা এতদিন চুপ করে বসেছিলেন, তারা এখন আমাদের কাজ দেখে আওয়াজ তুলেছেন। আর নয় পাখি শিকার, এবার হবে পাখিদের আশ্রয়। সকলকে নিয়ে গড়তে চাই পাখিবান্ধব নাটোর। সত্যিকাকের সোনার বাংলা। আমাদের প্রত্যাশা সকলে আমাদের পাশে থাকবে, পাশে রাখবেন এবং বাংলাদেশের প্রতিটা ঘরে ঘরে পাখি প্রেমিক গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উৎসাহ প্রদান করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এ কাজে যারা জড়িত তারা সকলেই স্বেচ্ছায় নিয়জিত। ১জন ২ জন করে এখন আমরা বেশ কয়েকজন মিলে একটা টিমের মতো হয়েছি। হয়তো আমাদের সংখ্যা আরও বাড়বে। তারাই আসুক যারা, গড়ে তুলতে চায় সুন্দর আগামী যেখানে থাকবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আশা করছি বন্যপ্রাণী ও পাখি নিধন বন্ধে আমাদের এই উদ্যোগ সফল হবে।