নাটোরের বাগাতিপাড়ার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, চরম দূর্ভোগে এলাকাবাসি!

0
487
বাগাতিপাড়া

মো.মামুনুর রশিদ মাহাতাব : নাটোরে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে নিভৃত পল্লীর সবুজ বৃক্ষরাজির ছায়াঘেরা জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো ক্রমান্বয়ে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছে। স্বাধীনতা উত্তর নিভৃত পল্লীর এ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর উন্নয়নে কারো নজর পড়েনি। রাস্তাগুলো পাকাকরণে কেউ উদ্যোগ না নেয়ায় চরম দূর্ভোগে এলাকাবাসি। শিক্ষাসহ অন্য কাজে অহরহ বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমান মানব বান্ধব সরকার আমলে রাস্তাগুলো পাকাকরণে ব্যবস্থা হবে বলে এলাকাবাসি আশাবাদী।

সরেজমিনে জানাযায়, নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মধ্যে বাঁশবাড়িয়া মুন্সিপাড়া-জাগিরপাড়া ভায়া করমদোশি, জালালপুর -চক বাঁশবাড়িয়া,শাঁখারি পাড়া,গয়লারঘোপ,জামনগর মন্ডলপাড়া, কাহারপাড়া,বজরাপুর ও ত্রিমোহনিয়া এলাকার রাস্তাগুলো উল্লেখযোগ্য। এগুলোর উন্নয়নে নেক নজর পড়েনি কোন এমপি-মন্ত্রীর।

শাঁখারিপাড়া জশইতলা-কাহারপাড়া (নং-১৬৯০৯৫০৪৩) রাস্তার দূরত্ব ০.৩৩ কিলোমিটার। এ রাস্তায় শাঁখারিপাড়া, পূর্বপাড়া কাহারপাড়ার সিংহভাগ লোক ব্যবহার করেন। এ আঁকা-বাঁকা রাস্তাটি স্বাধীনতা উত্তর উন্নয়নের মুখ দেখেনি। এ অবহেলিত রাস্তাটির ভাগ্যে কোন মানব দরদীর পদধূলি জোটেনি। এ ৩ গ্রামে ৩জন এমবিবিএস ডাক্তারসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত। এরা নিরুপায় হয়ে গ্রীষ্মে ধুলো-বালি ও বর্ষায় হাঁটুকাদা মাড়তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

গয়লারঘোপের দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে বড়াল ফার্ম হয়ে পাঁকা খেয়াঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার ও কামরুলের বাড়ি থেকে জামনগর-বাঁশবাড়িয়া রাস্তার কাঁটা পুল মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা অবিভাবকশূন্য। এ রাস্তা গ্রীষ্মে থাকে ধূলো-বালিপূর্ণ ও বর্ষায় থাকে কমর কাদা। রাস্তা উন্নয়নে কোন এমপি-মন্ত্রীর নজর না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

ত্রিমোহনিয়া গ্রামের দূ’দিকে দূ’নদী অন্যদিকে বৃক্ষরাজি ঘেরা। এখানে শতাধিক মুসলিম পরিবারের বসবাস।এ গ্রামটি বড়াল নদী থেকে মোশাখাঁ’র উৎপত্তি স্থলে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।এর দক্ষিণে বড়াল পশ্চিমে মোশাখাঁ নদী বহমান। উত্তরে তমালতল-জামনগর পুলিশ ফাঁড়ি পাকা রাস্তার হাপানিয়া -ত্রিমোহনিয়া মোড় থেকে মোশাখাঁ’র উৎপত্তি স্থল সংলগ্ন আড়ানি -পুঠিয়া পাকা রাস্তা পর্যন্ত দূরত্ব কোয়ার্টার কিলোমিটার।প্রতিদিন এ মেঠো পথে বিভিন্ন এলাকার শত শত যানবাহন ও লোকজন যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহায়।

ত্রিমোহনিয়ার এ অবিভাবকশূন্য রাস্তাটি স্বাধীনতা উত্তর আলোর মুখ দেখেনি। ভাগ্যে জোটেনি কোন জন দরদীর পদধূলি। জামনগর ঘোষপাড়া উমর-কাহারপাড়া দুলাল রাস্তার (নং-১৬৯০৯৫১৫৬) দূরত্ব ০.৫০ কিলোমিটার। এ রাস্তাটির খোঁজ রাখেন না কোন জনপ্রতিনিধি। গ্রীষ্মে থাকে খাদ-খন্দকে ভরা, বর্ষায় এঁটেল মাটির হাঁটুকাদা ।

জামনগর কলেজ -পূর্ব পাড়া কাঁচুর বাড়ি ভায়া মন্ডলপাড়া-কাহারপাড়া ৩.২কুলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১.১ কিলোমিটার কার্পেটিং। সারা বছরই অবশিষ্ট রাস্তা যাতায়াতের অযোগ্য। গ্রীষ্মে ছোট-বড় খাদ খন্দক ও বর্ষায় থাকে হাঁটুকাদা। জামনগর মন্ডলপাড়া ও কাহারপাড়ার ৩ শতাধিক পরিবার যাতায়াতে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়। নেক নজর নেই কোন জনপ্রতিনিধির।

বাঁশবাড়িয়া মুন্সিপাড়া-জাগিরপাড়া ভায়া করমদোষি (নং১৬৯০৯৪০৩২) রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এর দূরত্ব ৬.৬৫ কিলোমিটার। বাগাতিপাড়া উপজেলার নিভৃত পল্লীর মধ্যে এ রাস্তাটির দূরত্ব সব চেয়ে বেশি। এ আঁকা-বাঁকা রাস্তাটি বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে বেরিয়ে মুন্সিপাড়া পাঁচানিপাড়া,পুকুরপাড়া, কৈপুকুরিয়া, দোবিলা ও করমদোষি এলাকার মধ্য দিয়ে মোশাখাঁ নদী পেরিয়ে জাগিরপাড়া মোড়ে পৌঁছেছে।

পনের বছর আগে তৎকালীন জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের আমলে বাঁশবাড়িয়া থেকে মুন্সিপাড়া পর্যন্ত ১.২৩ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং করা হয়। অবশিষ্ট ৫.৩৩কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে অযত্নে অবহেলায়।

জালালপুর -চক বাঁশবাড়িয়া রাস্তাটি খাদ-খন্দকে ভরা। এলাকাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর এখানকার রাস্তাটি আলোর মুখ দেখেনি। প্রতি বছরই গ্রামবাসী স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে খাদ-খন্দক ভরাট করলেও ধূলোবালি ও হাঁটুকাদা এলাকাবাসীর পিছু ছাড়েনি।

বজরাপুর আফাজ-রফি ভায়া দীঘিরপাড় (নং-১৬৯০৯৫০৯১)রাস্তার দূরত্ব ০.৭০ কিলোমিটার। এ রাস্তাটি অন্ধকারে নিমোজ্জিত।রাস্তাটির উন্নয়নের মুখ দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছে এলাকাবাসী। এঁটেল মাটির এ রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ। গ্রীষ্মে থাকে খাদ-খন্দকপূর্ণ আর বর্ষায় হাঁটুকাদা।

বিপদে-আপদে এ রাস্তায় যাতায়াতে লোকজন চোখের অশ্রু ঝরায়। কোন এমপি-মন্ত্রীর দৃষ্টি কাড়তে পারেনি রাস্তাটি। এ সব নিভৃত এলাকাগুলোর সিংহভাগ পরিবার কৃষিকাজে সংপৃক্ত। কৃষির পাশাপাশি শিক্ষা ও বিদ্যুতায়নে এগিয়ে এলাকাগুলো। কিন্তু উন্নয়ন হয়নি রাস্তা ঘাটের।

নিভৃত পল্লীর বৃক্ষরাজির সবুজ ছায়াঘেরা আঁকা-বাঁকা মেঠো পথগুলো খাদ-খন্দকে ভরা। গ্রীষ্মে রাস্তাগুলোর ধূলো-বালি ও বর্ষায় হাঁটু কাদায় জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। লোকজন ধূলো-বালি ও হাঁটু কাদা মাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে অত্যন্ত কষ্টের শিকার হয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ধূলো-বালি ও হাঁটুকাদা মাড়িয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কৃষকরা কৃষি পণ্য পরিবহণে অতি কষ্ট পায়। দূর্বিষহ জীবন যাপনে বাধ্য হয় এলাকাবাসি।

কালিকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক পুকুরপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলী জানান, রাস্তাগুলো অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। স্বাধীনতা উত্তর এ রাস্তাগুলোর উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিরা রাস্তাটি পাকাকরণের আশ্বাস দিলেও নানা প্রতিকূলতায় ব্যর্থ হয়েছেন।বর্তমান মানববান্ধব সরকারের মেয়াদে রাস্তাগুলো পাকাকরণের অনুমোদন হবে বলে তিনি আশাবাদী।

জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, রাস্তাগুলো অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো মাননীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেগুলো টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সংসদ সদস্যের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো পাকাকরণের চেষ্টা করা হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে ঐচ্ছিক তহবিলের চেক বিতরণ করেন রত্না এমপি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে