নাটোরের শাঁখাপল্লী আর্থিক সংকটে। স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রশাসনের

0
499
news

মো. মামুনুর রশিদ(মাহাতাব): নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে, শাঁখা পল্লীর তৈরি সামগ্রী বিক্রি না হওয়ায়, ব্যবসায়িরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কাজ না থাকায় কারিগররা অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন এনজিও-র ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকে। এমনটাই জানিয়েছেন শাখা পল্লীর কারিগর ও ব্যবসায়ীরা, আর উপজেলা প্রশাসন বলছেন, আবেদন করলে তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার, জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছাঁয়ায় ঘেরা জামনগর শাঁখাপল্লী। এ পল্লীর শতাধিক পরিবার পৈত্রিক ব্যবসা শাঁখা শিল্পের সাথে জড়িত। এরা বণিক সম্প্রদায়। সারা বছর শাঁখা ব্যবসায়ি ও কারিগরদের স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে। কিন্তু বর্তমান বাধ সেঁধেছে করোনা ভাইরাস।

news

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় তাঁরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এ ভাইরাসের কারণে তৈরি শাঁখা সামগ্রী বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকটে ভুগছে ব্যবসায়ি ও কারিগররা। শ্ঙ্খ শাঁমুক প্রজাতি। শঙ্খ বা শাঁখার জন্ম সমুদ্রের তলদেশ। বাংলাদেশে ভারত ও শ্রীলংকা থেকে শঙ্খ আমদানি করা হয়।

পুরুষ শিল্পীরা আমদানিকৃত শঙ্খ মেশিনে কেটে বালা ও আংটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। পরে নারী -পুরুষ শিল্পীরা নিপুণ হাতে এগুলোর উপর কারুকার্য করেন। সোনাতন ধর্মালম্বীরা শঙ্খ /শাঁখা সামগ্রী বেশি ব্যবহার করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বধবা নারীরা শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। হিন্দু নারীর বিয়ে সম্পন্নকরণের সময় গৌরিপুজা শেষে বণিক সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি বা ঠাকুর কন্যার হাতে শাঁখার বালা পরিয়ে দেন।

news

স্বামীর মৃত্য পর্যন্ত শাঁখার বালা ব্যবহার করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর লাশ শ্মশানে দাহের পূর্ব মুহূর্তে হাতে পরা শাঁখার বালা ভেঙ্গে ফেলে দেয় এবং সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে। সোনাতন ধর্মালম্বীরা শঙ্খ ফুঁকিয়ে সুমধুর সুর সৃষ্টির মাধ্যমে পুজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করে। পল্লীর নব বঁধু ও কিশোরীরা মুখের দাগ দূরিকরণে শাঁখার গুড়ো কচি ডাবের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া কসমেটিকস তৈরিতে শাঁখার গুড়ো ব্যবহার হয়ে থাকে।

শাঁখা ব্যবসায়ি কেশব চন্দ্র সেন, নাটোর কন্ঠকে জানান, ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। লাখ টাকা মূল্যমানের তৈরি শাঁখা সামগ্রী বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পল্লীর সবাই আর্থিক সংকটে ভুগছেন।

কারিগর শ্রী জয় সেন ও হাসি রানী সেন, নাটোর কন্ঠকে জানান, তাঁরা বংশানুক্রমে শাঁখা শিল্পের সাথে সংপৃক্ত। শাঁখা সামগ্রী তৈরি ও কারুকার্য করেন। স্বাচ্ছন্দেই সংসার চলতো, কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ৩ মাস যাবত তেমন কাজ না থাকায় তাঁরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন। তাঁরা সরকারি ভাবেও তেমন কোন সাহায্য -সহযোগিতা পায়নি।

news

জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারিভাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শাঁখা শিল্পে সংপৃক্তদের একাধিক বার আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতা করা হয়েছে। শাঁখা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পর্যায়ক্রমে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল ‘এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নাটোর কণ্ঠকে জানান, শাঁখা পল্লীতে ইতিমধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ বিতরণ করা হয়েছে, যাতে বাড়ির আঙিনায় তারা বীজ রোপন করেন। তিনি আরো জানান, শাখা পল্লী থেকে কেউ, স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব কখনো করে নাই। যদি তারা স্বল্পসুদে ঋণের প্রস্তাব করেন, তবে তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের বাগাতিপাড়ায় কারিগরিতে একমাত্র গোল্ডেন জিপিএ 5 জোবায়দার
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে আরো দুইজন ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে