নাসিম উদ্দীন নাসিম : কথায় আছে ,শখের তোলা আশি টাকা । ‘শখ’ এমন একটি শব্দ যা প্রত্যেক মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শখ পূরণের ইচ্ছা প্রত্যেক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কেউ সহজে শখ পূরণ করতে পারে, কারো জীবনভর চেষ্টার পরও অপূর্ণ থেকে যায় শখ।
কিছু মানুষের শখ নেহাতই ছোট, কারো শখ বিচিত্র ও বিলাসিতাপূর্ণ। প্রত্যেকের শখের ধরন আলাদা, অর্থের সাথে শখের রয়েছে মেলবন্ধন। দরিদ্রের শখ পূরণের বাসনা বেশির ভাগ সময় ইচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ধনীরা কিভাবে অর্থ ব্যয় করবেন সেটি ভেবেই কুল পান না। বাংলায় একটি কথার প্রচলন রয়েছে, ‘শখের তোলা আশি টাকা’।
পৃথিবীতে আর কিছু পাওয়া যাক বা না যাক শখবিহীন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রত্যেকেরই এক বা একাধিক শখ রয়েছে। সেই সব সৌখিন মানুষদের একজন নাটোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের আব্দুল আওয়াল। পেশায় বাক্সোরঘাট ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত শ্যালো ভ্যানের পাইলট (চালক)।
পাশাপাশি তিনি কৃষিকাজ ও পুরোনো মটর সাইকেলের কেনাবেচার সাথে জড়িত। ভারতীয় সংগীতশিল্পী বাপ্পী লাহিড়ীর অন্ধভক্ত আওয়ালের দীর্ঘদিনের শখ হাতে এবং গলায় স্বর্ণের অলংকার পরবে। তার শখ আরোও বাড়িয়ে দেয় তামিল ছবির অভিনেতা ও খলনায়কদের আংটি এবং চেইনের ব্যবহার দেখে।
বছর দুয়েক আগে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষিজমির একাংশ বিক্রি করে নেমে যায় শখপূরণে। নাটোরের স্বর্ণপট্রি থেকে একে একে কিনে ফেলেন স্বর্ণের পাঁচটি আংটি ও চারটি লকেটসহ চেইন। পাঁচ আঙ্গুলে স্বর্ণের আংটি আর স্বর্ণের চারটি চেইন গলায় দিয়ে সব সময় চলাফেরার কারণে আব্দুল আওয়াল গ্রামবাসীর কাছে স্বর্ণমানব বলে পরিচিতি পায়।
আমাদের নাটোরে স্বর্ণ ব্যবহারের শৌখিনতায় আব্দুল আওয়ালকে বোধহয় কেউ ছাড়াতে পারেননি।সাদাসিদে মানুষ আওয়ালকে পরিবারের সদস্য,মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসী অনেকেই বাঁধা নিষেধ করেছে এতো সোনা নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে । দিনজমানা খারাপ কখন স্বর্ণলংকারগুলো চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি হয়ে যায় বলা তো যায়না।
স্বর্ণমানব আওয়ালের সাফ জবাব,জীবনে কোনদিন কারো ক্ষতি করিনি। আমার ক্ষতি কেউ করবে না। সহজ সরল আব্দুল আওয়ালের সেই বিশ্বাসই কাল হলো। গত ২৪ জুলাই রাত ৯ টায় অটো রিকশা যোগে নাটোর শহর থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
পথিমধ্যে দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে সুমন, জলিল ডাকাতের ছেলে রানা চোর, মৃত শ্রী মংলার ছেলে শ্রী বাবু , বুড়িদহ গ্রামের সাবান আলীর ছেলে খোকন , ইয়াদ আলীর ছেলে জিল্লুর, আব্দুল আলিমের ছেলে সজিব, মৃত রফিকুল ইসলামের অনিক এবং নজু মিয়ার ছেলে সুরুজ সহ ৮ থেকে ১০ জন সন্ত্রাসী মাজায় মোড়ে তাঁর পথরোধ করে এলোপাথাড়ি মারপিট করে স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ।
জোরপূর্বক তাকে দাঁড় করিয়ে ইয়াবা,মদ ও গাঁজা সামনে রেখে ছবি তুলে রাখে । পরবর্তীতে আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ বিষয়ে তিনি ঘটনার দিনই নাটোর সদর থানায় যান অভিযোগ দিতে ।কিন্তু একজন ভটভটি চালকের ৫ টি স্বর্ণের চেইন,৫ টি আংটি এবং লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা সবার কাছে বানোয়াট মনে হয় ।
সত্যাতা জানতে শুক্রবার রাত ৮ টায় সরজমিনে আমরা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী যায় আব্দুল আওয়ালের গ্রামের বাড়ি ভাতুড়িয়ায় যায় । আমাদের দেখে সেখানে ভীড় করে শ দুয়েক নারী,পুরুষ ওশিশু । যাদের অধিকাংশই কৃষক.বর্গাচাষী এবং ক্ষেতমজুর ।
ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক তসলিমা মিয়া, মঈনউদ্দীন, হামিদুল,আলমগীর, জনিসহ অসংখ্য গ্রামবাসী একবাক্যে সবাই বলেন, আব্দুল আওয়াল একজন সাদাসিদে, সহজ,সরল, মিশুক মানুষ। সিগারেট ছাড়া অন্যকোন নেশা তাঁর নেই। বছর দুয়েক আগে বাবার জমি বিক্রি করে স্বর্ণের ৫টি আংটি এবং ৫টি সোনার চেইন কিনে সে।
সেগুলো পরার কারণে গ্রামের মানুষের কাছে স্বর্ণমানব বলে পরিচিতি লাভ করে। পাশাপাশি গ্রামের জামে মসজিদ নির্মানে মোটা অংকের টাকা দান করে। গ্রামবাসীর আপদে-বিপদে সাধ্যমত সাহায্য -সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন একজন মানুষকে মারপিট করে শখের অলংকার এবং টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে গ্রাম জুড়ে।
গ্রামবাসীরা আরোও জানান, ঘটনার সাথে জড়িতদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত এবং পেশাদার অপরাধী ।তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে । আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। একই গ্রামের সোনালী বেগম, রিতা বেগম, পারভীন খাতুন ও আয়েশা বিবিদেরও একই দাবী।
তারা এ ব্যাপারে নাটোরের পুলিশ সুপারের সহযোগীতা কামনা করেছেন। স্বর্ণমানব আব্দুল আওয়াল জানান, ঘটনার পর সন্ত্রাসী সুমনের বাবা ইকবাল আমার মোবাইলটা ফেরত দিয়েছে। আংটি, চেইন এবং টাকার কিছুই ফেরত দেয়নি। উল্টো প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে ঘটনার জড়িত সন্ত্রাসী এবং তাদের সহযোগীরা। পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে । ঘটনার সাথে জড়িতদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেই তাদের পাওয়া যায়নি ।