নাটোরে আ.লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ : বিএনপি’র পদযাত্রায় হামলার অভিযোগ

0
107
01714

নাটোর কন্ঠ : নাটোর সদর, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির পদযাত্রা মঞ্চ দখল ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় ৩০ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে।

সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া ও গুরুদাসপুরে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত এই কর্মসূচিতে ধাওয়া দিয়ে নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ ছাড়া বিএনপির পদযাত্রা মঞ্চ দখল করে শান্তি সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়াড় মাদ্রাসাঘাট এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে পদযাত্রা শেষে ফেরার আগেই পদযাত্রা মঞ্চ দখল করেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে সিংড়া উপজেলার ইতালী, কলম , চৌগ্রাম , রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের এলাকায় বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ,ধারাবারিষা ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপির নাশকতা প্রতিরোধে নাটোর শহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে অবস্থান নিয়ে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

শহরে মোটর শোডাউন বের করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। দুপুরে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে শান্তি সমাবেশ করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারীরা।

ওই সমাবেশে এমপি শিমুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘নাটোর শহর বা অন্য কোনো ইউনিয়নে বিএনপির একটা নেতা-কর্মীকেও ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নাশকতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে।’

এসব সমাবেশ থেকে বিএনপিকে রাজপথে নামতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, দুপুর ১২টায় শহরের স্টেশন এলাকায় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রিমনের ওপর হামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম বলেন, ‘শনিবারের কর্মসূচিতে ছাত্রদল-যুবদলের অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।’

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৯ টার আগেই বিএনপির নেতাকর্মীরা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়াড় মাদ্রাসাঘাট এলাকায় সমবেত হন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় নেতারা পদযাত্রা শুরু করা আগেই সেখানে বক্তব্য দিতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ সময় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শহিদুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান খান চৌধুরী সেখানে বক্তব্য দেন। পরে তারা ব্যানার নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর আগেই-

পেছনের রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে বিএনপির পদযাত্রা মঞ্চ দখল করে নেন। এর পর সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শান্তি সমাবেশ শুরু করেন।

এসময় শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন সরকার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল মন্ডল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এমরান সরকার প্রমূখ।

এসময় বক্তারা বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা প্রচারণায় বিশ্বাস না করার আহবান জানান। তাঁরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেন। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাতনী-নাটোর সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। তবে পুরো ঘটনার সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।

ছাতনী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান জানান, ‘আওয়ামী লীগ ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে। তাই সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বটতলা মোড়ে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল।

কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্ধারিত স্থান থেকে উঠে এসে তাঁদের মঞ্চ দখল করে সমাবেশ করে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাউকে বাধা দেননি। তবে বিএনপির পদযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হাবুর মোড়, পন্ডিতগ্রাম ও বারঘরিয়া মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল’ বলে দাবি করেন তিনি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানান, ‘বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে না বলে গতকাল রাতে কথা দিয়েছিল। তাই আমরা বটতলায় কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু তারা যখন জেলার নেতাদের এনে কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে তখন আমরা বটতলায় এসে পারিনি। তবে বিএনপির কাউকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয়নি।’

অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম এলাকায় বিএনপি পদযাত্রায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চৌগ্রাম ও ইটালী ইউনিয়নেও হামলার অভিযোগ উঠেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বেলা ১১টায় পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। দুপুর ১২টার দিকে রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম বাজারে পদযাত্রায় লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় আ’লীগ, অঙ্গ ও সহযোগিতা সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এসময় আহত অবস্থায় রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব চয়েন উদ্দিন ও যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়া চৌগ্রাম ইউনিয়নে রাকিব হোসেন, ইটালী ইউনিয়নে হুজুর আলী, বেলাল হোসেন, বাচ্চু আহমেদ, ইউসুফসহ ৭জন বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ জানান, ‘সিংড়া উপজেলার ১২নং রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব চয়েন উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলামকে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আ’লীগ নেতাকর্মীরা।

এছাড়া ইটালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে বিএনপির পদযাত্রায় হামলা চালানো হয়েছে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর কোনো হামলা করা হয়নি। তারা শুধু শুধু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’

জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন বলেন, ‘আমরা খুবই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। শেষদিকে বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ধাওয়া দেন।

আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও সরকারি দল বাধা দিচ্ছে। আমাদের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল, মাধবনগর, সিংড়ার কলম,চৌগ্রাম হাতিয়ান্দহ, চৌগ্রাম ইউনিয়ন, গুরুদাসপুরের মশিন্দা ও বিয়াঘাট ইউনিয়নে বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।’ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিম আহমেদ বলেন, ‘দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না হয়, সে জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

এদিকে বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর, পাবনা , সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়ন বিএনপি’র পদযাত্রায় হামলার ঘটনার তীব্র ন্নিদা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সংবাদপত্রে পাঠাানো এক বিবৃতি তিনি বলেন, ‘সারাদেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সরকার শ্বেত সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। বি এনপি নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন করার মাধ্যমে তারা আবারো একতরফা নির্বাচনের কুটকৌশল করছে। যা কখনো বাস্তবায়ন হবেনা ।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার উপন্যাস ‘অভিমান’
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে পৃথক দু.র্ঘ.ট.নায় ৩ জন নি.হ.ত : ৩ জন আ.হ.ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে