নাটোরে কৃষিতে করোনার প্রভাব: করণীয় কি?- রেজাউল করিম খান

0
303
Rezaul

নাটোরে কৃষিতে করোনার প্রভাব: করণীয় কি?- রেজাউল করিম খান

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে পৃথিবীর মানুষ চরম বিপর্য়য়ের মধ্যে পড়েছে। সর্বত্রই এখন মহাসংকট বিরাজমান। বাংলাদেশের অবস্থা ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে, খাদ্যের সংকট নেই। কিন্তু এই অবস্থা কতদিন চলতে পারে! দরিদ্র কর্মহীন মানুষ কতদিন ঘরে থাকবে ? সর্বগ্রাসী ক্ষুধা দরজায় এখন আর কড়া নাড়ছে না, ঘরের ভেতর পা রেখেছে। শোনা যাচ্ছে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি।
এমতাবস্থায় শুরু হয়েছে গম কাটার সময়। আসছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। কিন্তু মিলছে না মজুর। ধান কাটার জন্য কেবল নাটোর জেলাতেই প্রয়োজন দুই লক্ষাধিক মানুষের। আর এর সিংহভাগই আসে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহ থেকে। এবার এইসব পরিযায়ী শ্রমিক পাওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি হবে?

দেখা যাক জেলার বোরো বিষয়ক পরিসংখ্যানে কী আছে। নাটোরের সাতটি উপজেলায় এবার ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোচাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদন হতে পারে ২ লাখ ৯০ হাজার টন ধান। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা নিয়ে চাষিরা রয়েছে মহা দুশ্চিন্তায়। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রশাসনের সহায়তায় বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আনার ব্যবস্থা করা হবে। এটি অবাস্তব পরিকল্পনা। প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। দলবদ্ধভাবে তো নয়ই। তাছাড়া বাহন পাবে কোথায়? ফলে মাঠের ধান মাঠেই ঝরে যাবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এতদসত্বেও কেউ যদি ধান কেটে ঘরে তোলেন তো তার ন্যায্য মূল্য পাবেন কি?

এই বিষয়ে আমি অনভিজ্ঞ একজন সাধারণ মানুষ। তবে ৩৩ বছরের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু আধুনিক চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, সেমিনার-কর্মশালায় অংশ নিয়েছি, মাঠে গিয়ে দেখেছি, কিছু পড়েছি। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অগ্রগামী ভাবনাসম্পন্ন চাষিদের কাছে। দৈনিক ইত্তেফাকে আমি যত বিষয়ে লিখেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল কৃষি বিষয়ক খবর ও প্রতিবেদন। যাক সেকথা, প্রসঙ্গে আসি। নাটোর জেলায় মোট ফসলী জমির পরিমাণ ৩ লাখ ১ হাজার ৮৫৬ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো চাষ হয় মাত্র ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। এতো কম জমিতে বোরোচাষের কারণ সম্পর্কে চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়াকেই দায়ী করেন। এবার করোনার প্রভাবে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কোনও জমি ফেলে না রাখার কথা বলেছেন। এজন্য তিনি প্রণোদনা, অনুদান, ভর্তুকি প্রভৃতি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ফসল কাটার কথা সম্ভবত বলেন নি। এখন দেশ লকডাউনে। সকলের জন্য ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক। এরফলে দিনমজুর, মৌসুমী শ্রমিক, কুলি, হকার, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভ্যানচালক, কামার, কুমার তাঁতী, জেলে, বেদে, নির্মাণ শ্রমিক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, পরিবহণ শ্রমিক, গণিকা, হিজড়া প্রভৃতি শ্রেণিপেশার মানুষ এখন বেকার, অসহায়। যদিও এদের অধিকাংশই খাদ্য সাহায্য পাচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা কম।

এছাড়া রয়েছে সংসারে নানাবিধ খরচ। এরজন্য প্রয়োজন নগদ অর্থের। ভিক্ষা বা সাহায্য প্রহণ, অকেকের কাছেই লজ্জার বিষয়। তারা কাজ চায়। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে এদের মধ্য থেকে একাংশকে ধান কাটার কাজে লাগানো সম্ভব। নাটোর জেলায় বর্তমান অনুমিত লোক সংখ্যা ১৯ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ দরিদ্র। হতদরিদ্রের সংখ্যাও কম নয়। জেলায় এখন ভ্যানরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত অটোচালকের সংখ্যা লক্ষাধিক। এদের অধিকাংশেরই মাঠে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই এখন খাদ্য সাহায্য নিচ্ছে। ধান কাটার জন্য মালিকের মজুরি ছাড়াও খাদ্য সাহায্যের প্রস্তাব দিলে এরা সানন্দে রাজি হয়ে যাবে। এরজন্য কৃষি বিভাগ মাঠের অবস্থানসহ বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করে মাইকে প্রচার করতে পারে। তবে ধান কাটার সময় সকলকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক ধান কাটার স্বয়ংক্রিয় মেশিন। সরকারি সহায়তায় দ্রুত মেশিন আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

লেখক- রেজাউল করিম, সাংবাদিক ইত্তেফাক-,কলামিস্ট, নাটোর সদর উপজেলা, নাটোর।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনার রাজত্ব -রাজিব এক্কা রাজ‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধকরোনা পরিস্থিতি নিয়ে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের বিশেষ আলোচনা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে