ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব
খন্দকার মাহাবুবুর রহমার : ছবিতে পরিতৃপ্তির এই মুখমণ্ডল গুলোর অন্তরালে, ভেতরটা হাহাকারে পরিপূর্ণ।নিত্যদিনের ভোগ্য সরঞ্জাম আহরণের জন্য ছুটে চলাই যেন তাদের জীবন সংগ্রাম। কাক ডাকা ভোর বেলাতেই চোখ মুছতে মুছতে ছুটে যেতে হয় কাজের সন্ধানে। বালতি, কোদাল, বড় লম্বা ঝাড়ু- ইত্যাদি নিয়ে কেউ ছুটে যায় সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতে আর কেউবা ছোটে মানুষের শৌচাগার পরিস্কার করতে।
উদ্দেশ্য সকলের একটাই, তা হলো দু-মুঠো মোটা ভাতের সংস্থান করা। আয় করে পরিবার-পরিজনের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া। কাজ পেলেতো ভালোই, আর না পেলে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে। এই হলো নাটোর পৌরসভার বসবাসরত হরিজন জনগোষ্ঠির জীবন চিত্র।শত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের কলোনিতে বিন্দুমাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি।
সেখানকার বৃদ্ধরাও জানেন না কত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল এই কলোনি যা আজ পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। তারা শিকার হয়েছেন নির্যাতন আর নিপীড়নের।শত শত বছরেও নিজস্ব গণ্ডির বাইরে বেরোতে দেয়নি কেউ। বঞ্চিত ওরা মৌলিক অধিকার থেকেও।
নাটোর শহরের পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা নিয়ে গিয়ে, নিজেদেরই বুকের উপরে চাপা দিতে হচ্ছে। তাদের ব্যবহৃত পুকুর আবর্জনা দিয়েই ভরাট করা হয়েছে। এখন অন্যের পুকুরে তাদেরকে গোসল করতে দেওয়া হয় না। কলোনির পানি নিষ্কাশনের কোন পথ নেই, ফলে ব্যবহৃত টিউবলের পানি জমা হয়ে থাকে দিনের পর দিন।
সামান্য বৃষ্টি হলেই কলোনির ভিতর, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে, জমে থাকে পানি। অস্বাস্থ্যকর এই পরিবেশে রোগজীবাণু আর দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকছেন তারা। করোনাকালীন সময় বছর পেরিয়ে গেলেও, দেওয়া হয়নি কাউকে কোন প্রণোদনা।সারাদেশের হরিজন কলোনিগুলোতে বিদ্যুৎ বিল মওকুফের ব্যবস্থা থাকলেও তাদের কলোনিতে নতুন ডিজিটাল মিটার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফলে অনেকে পেটের আহার যোগাতে পারলেও এখন বেশিরভাগ সময় থাকছেন অন্ধকারে। চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়র ভোটের আগে আসেন কিন্তু তাদের ভাগ্য উন্নয়নে অথবা কলোনিকে নিয়ে কেউ ভাবেন না।ভোট শেষ হলে ফিরেও তাকান না। এভাবেই অভিযোগ জানাচ্ছিলেন নাটোর পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আলাইপুর মহল্লায় অবস্থিত হরিজন কলোনির সদস্যরা।
সেই কলোনির জনসংখ্যার সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও হরিজন নেতৃবৃন্দের তথ্য মতে নাটোর পৌরসভার কলনিতে প্রায় ছয় শতাধিক হরিজন বাসবাস করেন।এছাড়াও নাটোর তেবাড়িয়া হাটে পাঁচটি পরিবার, নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে বারোটি পরিবার ও ঝাউতলায় রয়েছে একটি পরিবার। তারাও আশ্রিত এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
নাটোর কন্ঠের পরিসংখ্যানে দেখা যায় কেবলমাত্র নাটোর সদর উপজেলায় রয়েছে প্রায় এক হাজার হরিজন।বসবাসরত হরিজনরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। যার মধ্যে অন্যতম সমস্যাগুলো হলো- কর্মসংস্থান না থাকা, কাজ অনুযায়ী বেতন না পাওয়া, বাসস্থানের সমস্যা, কলোনীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, বিদ্যুৎ সংকট, সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া, জলাবদ্ধতা, হোটেল-রেস্তোরায় বসে খাবার খেতে না পারা, নির্যাতনের প্রতিকার না পাওয়া…
চলবে… প্রিয় পাঠক নাটোর কন্ঠের এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চোখ রাখুন নাটোর কন্ঠে।