“নেসকোতে নেই করোনা প্রভাব: বিদ্যুতের আসা যাওয়া চলছেই”-রেজাউল করিম খান

0
540
Rezaul-

নেসকোতে নেই করোনা প্রভাব: বিদ্যুতের আসা যাওয়া চলছেই – রেজাউল করিম খান

বিদ্যুৎ খাতের পুনর্বিন্যাস, পুনঃগঠন ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে জেনারেশন, ট্রান্সমিশন ও বিতরণ ক্ষেত্রের জবাবদিহিতা ও উন্নততর সেবা নিশ্চিত করতে ১লা অক্টোবর, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে সকল সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী (নেসকো) লিমিটেড বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। নেসকো উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ টি জেলার আওতাধীন ২৪ টি উপজেলা শহরে ৫০টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে কাজ করছে। কিন্তু ‘উন্নত সেবা’ তো দূরের কথা, গ্রাহকরা সাধারণ সুবিধাও পাচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

বিদ্যুতের আসা যাওয়া অনেকগুণ বেড়ে গেছে। অথচ এখন করোনা-কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তাহলে কেনো এমন হচ্ছে? পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এরপরও নিম্নমান ও আর্থিক সুনামের সংকটে থাকা ঠিকাদার আইসোলেক্সকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা যাচাই করা হয় নি। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিশ্বের শীর্ষ দুই সুনামধারী কোম্পানি মার্কিন জিই ও জার্মান সিমেন্সকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ কেন বারবার নিম্ন ও মধ্যমানের তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিচ্ছে? ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বরে আইসোলেক্স, এমনকি সিম্পল সাইকেল ইউনিটকেও চালুর চেষ্টায় ব্যর্থ হয় গ্যাস বুস্টারের টিউনিংয়ের সমস্যার কারণে। এই সমস্যা সমাধান না করেই আইসোলেক্স বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করে।

এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, উচ্চ প্রযুক্তিগত প্রকল্পে কারিগরি স্বত্বধারী টেকনোলজি ভেন্ডরকে বিবেচনা না করে বাংলাদেশ কেন একের পর এক অযোগ্য তৃতীয় পক্ষকে কাজ দেয়? এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুর্নীতির সম্পর্ক আছে কি? প্রকল্প পরিচালনার অদক্ষতা, কারিগরি অদূরদর্শিতা, নিম্নমানের ঠিকাদার নিয়োগের দুর্নীতিমনা ঝোঁক ও প্রকল্প বাস্তবায়নের অতি দীর্ঘসূত্রতার মতো অতি হীন বিষয়গুলোর কোনও তদন্ত হয় না কেনো? দুই বছর পূর্বেই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা না থাকায় গ্রীষ্মকালেই উৎপাদন করা হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট, সঞ্চালিত হয়েছে আরও কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান সাফল্য থাকলেও সেখানে আছে আরও বেশ কিছু কলঙ্ক, যা ভবিষ্যতে বর্তমান নেতৃত্বকে বিচারিক সংকটে ফেলার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

প্রকৌশলী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ লিখেছেন, এই ধারণা অমূলক নয় যে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির চৌহদ্দিতে থেকেই অকারণে রাষ্ট্রের ৩৫ হাজার ৪৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা গচ্ছা গেছে, ভবিষ্যতে যা আরও বাড়বে। একদিকে নির্মাণে অতি উচ্চ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতারক ও দুর্নীতির ইন্টারফেসগুলো চুক্তির ফাঁকফোকরে লুটে নিচ্ছে, আরেক দিকে বিতরণ অবকাঠামোর অক্ষমতায় উৎপাদিত বিদ্যুতের পূর্ণ সুফল পাচ্ছে না দেশের গ্রামীণ ও শহুরে নাগরিক। সরকারি মাল এভাবে দরিয়ায় না ঢেলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত ও দুর্নীতিমুক্ত পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সুদৃষ্টি কামনা করি।

এবারে একটু নাটোরের কথা বলি। একটি ছোট্ট শহরে বিদ্যুতের চাহিদাও কম। কিন্তু সর্বগ্রাসী অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গ্রাহকের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিন্মমানের কাজের কারণে প্রায়ই লাইনে ত্রæটি দেখা দিচ্ছে। ফলে মাঝেমধ্যেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে সরবরাহ। বয়স্ক ও রোগাক্রান্ত মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। আমাদের দেশের অবস্থাও বিপজ্জনক।

এই পরিস্থিতিতে গত ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, “…বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।…” অবশ্য পরে তাঁর ঘোষিত প্রতিশ্রæতির কিছু পরিবর্তন করা হয়। এদিকে এরইমধ্যে নাটোরে নেসকো গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎবিল পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে জানা গেলো, তারা বিদ্যুৎ বিলের টাকা নেবেন না। পরামর্শ দিলেন, বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার জন্য। অফিসে গিয়ে দেখা গেলো, একজন গ্রামীণফোনের এজেন্ট বিল নিচ্ছেন। তবে সার্ভিস চার্জসহ। এভাবে বিদ্যুৎবিল তো সকল এজেন্টই গ্রহণ করে। তাহলে নির্দিষ্ট একজনকে কেনো বিদ্যুৎ অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছে? তবে কি তার সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের কারও ‘কমিশন চুক্তি’ আছে?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবাদ ও আত্মত্যাগের এক পুরনো ইতিহাস – রেজাউল করিম খান
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় আক্রান্ত হলেন নাটোরের ডাঃ নাজমুল হোসেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে