নাটোর কণ্ঠ : ১৯৭২ সালের নাটোরের উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার মাথায় হাত বুলিয়ে ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন তিনি স্বামীহারা রওশন আরা। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- “মা” “তোমার জন্য আমি আছি” বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হাতের ছোঁয়া নিয়ে ৪৮ বছর পরে আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
বঙ্গবন্ধুর সান্তনা নিয়ে তার জীবনের ৪৮ টি বছর কেটে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত নিখোঁজ স্বামীর খবর জানতে এবং উদ্ধারের জন্য একজন সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে নাটোরের উত্তরা গণভবনে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন নাটোরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক।
তিনি গণভবন থেকে ফিরে আসার একদিন পরে বঙ্গবন্ধু নির্দেশে রওশন আরা বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল দুই বস্তা গম কিন্তু তার বাবা সেদিন ওই গম গ্রহণ না করে আবেগী কণ্ঠে বলেছিলেন- নিখোঁজের খোঁজ মিলছে না তখন গম নিয়ে কি হবে? রওশন আরা শুধু ভরসা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর উপর কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো, রওশন আরা আশা ভরসা জ্বলন্ত দ্বীপের মতো করে নিভে যায়।
নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকায় দরিদ্র বাবা স্বাস্থ্যকর্মী রশিদুর রহমানের ১১ সন্তানের সংসারে শিশু কন্যা সহ ঠাই হয়। একাত্তরের যুদ্ধের সময় বগুড়ায় শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে বাস করতেন। স্বামী আবদুর রাজ্জাক পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকসেনারা তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।
তার স্বামী পাকিস্তান থেকে পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। বাবা ভারতের জলঙ্গি এলাকায় গড়ে ওঠা অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন ওই একই এলাকায় গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়েও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সময় কাটিয়েছেন। ছোটভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
পাকহানাদাররা তার শশুরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কোলের নবজাতক কন্যা সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করে, সে সময় নিজের সম্ভ্রম রক্ষা সহ নবজাতক ও শাশুড়ি কে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া করোতোয়া নদী সাঁতরে পার হয়ে দুর্গম দীপা রায় গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে একবেলা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযুদে্ধের নয়টি মাস কষ্ট করে অতিবাহিত করেছেন। সংগ্রামী এই নারীর চিরবিদায়ে শোকাহত নাটোরের সকল গণমাধ্যম কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ।