বৃষ্টিমগ্নতা / নাজমুল হাসান

0
498
Nazmul

 বৃষ্টিমগ্নতা / নাজমুল হাসান

অদ্ভূত আর জলমগ্নতায় ভেজা ছিলো আমার শৈশব। জানি না কবে, কখন কীভাবে বৃষ্টির সাথে আমার সখ্যতা হয়েছিলো। আমি নিজেকে ভাবতাম বৃষ্টিবালক। বৃষ্টির নেশা আমাকে উন্মাতাল করে তুলতো। বৃষ্টি কাছ থেকেই আমি প্রথম ভালোবাসার পাঠ নিই। আহারে শৈশব! গ্রামীণ কোলাহল ছাপিয়ে ঘনঘোর বর্ষায় মেঘদেবী আকাশে উদিত হওয়া মাত্র আমরা ক’জন বন্ধু মিলে হৈ-হুল্লোরে মেতে উঠতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দৌড়াদৌড়ি করে কাদায় গড়াগড়ি খেলতাম। বৃষ্টির জল শরীর থেকে কাদা ধুয়ে দিতো। পুণরায় কাদা মাখতাম। বার বার বৃষ্টি ধুয়ে দিতো। বৃষ্টির কোনই ক্লান্তি ছিলো না।

তুমুল বৃষ্টিতেও আমি ছাতা ব্যবহার করতাম না, বৃষ্টি মনখারাপ করবে বলে। বৃষ্টি আমাকে মোহনীয় সুরে গান শোনাতো। আমাদের বাড়ির টিনের চালে নূপুর পায়ে নৃত্যরত বৃষ্টি যাদুময়তার সংগীত শোনাতো। তখনতো কবিতা বুঝতাম না। বুঝতাম না রবীন্দ্রনাথ। তবুও শৈশবের কোন একদিন ভালো লেগে গিয়েছিলো-আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে… বৃষ্টির দিনে মা আমাকে পাহারা দিতেন। আমি মায়ের রাঙাচোখ উপেক্ষা করে দৌড়ে তাঁর চোখের আড়াল হতাম।

শৈশবে এই একটি ক্ষেত্রে আমি ছিলাম ভীষণ অবাধ্য। এ জন্য মাকে অনেকদিন আক্ষেপ করতে দেখেছি। আমার শৈশব কৈশরে পরম মমতায় আগলে রাখা বৃষ্টি হঠাতই আমার সাথে বিরূপ আচরন করে বসলো কৈশরের শেষের দিকে। আনন্দে আত্মহারা বৃষ্টিবালককেই দেখিয়ে দিলো তার রুদ্রমূর্তি। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যায় সারা শরীর কাঁপিয়ে আসলো ১০৪ ডিগ্রির জ্বর। টানা তিনদিন দুঃস্বপ্নের ঘোরে কাটিয়ে যখন আমি চোখ মেলে তাকালাম তখন দেহটা অসাড়। কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না। তারপর অভিমান করে বৃষ্টির সংস্পর্শে যাইনি বেশ কিছুদিন।

অনেকদিন পর অভিমান ভুলে বৃষ্টিকে ছুঁতে গেছি। সারা শরীরে মাখতে চেয়েছি বৃষ্টির সৌরভ। কিন্তু বৃষ্টি আর কখনই আমাকে আপন করে নেয়নি। যতোবার বৃষ্টিতে ভিজেছি ঠিক ততবার না হলেও বেশীরভাগ সময়ই হয় জ্বর হয়েছে নয়তো ঠান্ডা লেগেছে। তবুও আমি এখনো বৃষ্টি ভালোবাসি। কারণ, শৈশব কৈশরের ভালোলাগা আজও হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়, প্রথম প্রেমের প্রথম ছোঁয়ার মতো…

লেখক- নাজমুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন, নাটোর

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“পরিশুদ্ধ”- রেজাউল করিম রেজার কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“মৃত্যু কামনা” – আদিত্য শুভ’র কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে